রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র ছিলেন স্বর্ণদীপ। ছবি: সংগৃহীত।
দশমীর দিন বিসর্জন দেখতে মাল নদীর পাড়ে দাঁড়িয়েছিলেন মা ও ছেলে। শুধু তাঁরাই নন, পরিবারের আরও ৪ সদস্য গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন দশমীর সন্ধ্যায়। কিন্তু হড়পা বানে ভেসে গিয়েছেন পরিবারের ২ সদস্য। মায়ের চোখের সামনেই ভেসে গেলেন ২০ বছরের যুবক। মৃত্যু হয় কলেজ পড়ুয়ার জেঠুরও।
মালবাজারের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রথখোলার বাসিন্দা অধিকারী পরিবার। পুজার বাকি দিনগুলো হইহই করে কেটেছিল সবার। দশমীতেও গাড়ি করে বেরিয়েছিলেন মাল নদীর পাড়ে। মুহূর্তের মধ্যে আনন্দ বদলে গেল বিষাদে। এখন শুধুই হাহাকার। হড়পা বানের কবলে পড়ে গোটা পরিবার। চার জনকে উদ্ধার করেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু বছর ২০’র স্বর্ণদীপ অধিকারী এবং প্রৌঢ় তপন অধিকারীকে বাঁচানো যায়নি। মাকে বাঁচানোর জন্য শক্ত করে তাঁর হাত দুটো ধরে রেখেছিলেন স্বর্ণদীপ। মা বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সামনেই ভেসে যায় ছেলে।
স্বর্ণদীপের মা শান্তা এবং বাবা স্বপন অধিকারী এখনও কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। দু’জনের বয়সই ৫০ বছরের বেশি। ছেলের এই ভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না দম্পতি। বার বার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছেন শান্তা। কলেজ পড়ুয়া স্বর্ণদীপ পড়াশোনা করতেন রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনে। পদার্থবিদ্যার ছাত্রটি পুজোর ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন৷ ২৭ অক্টোবর আবার হস্টেলে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাড়ি ফিরলেন শববাহী গাড়িতে।
সে দিনের ঘটনা বলতে গিয়ে আটকে যান শান্তা। ধীরে ধীরে বলেন, ‘‘যখন হড়পা বান এল আমরা সবাই ভেসে গিয়েছিলাম। ছেলে আমার হাত ধরে ছিল... আমাকে ভেসে যেতে দেয়নি ও। আমাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। কোনও ভাবে হাত ছাড়েনি আমার... আমাকে অন্য কে এক জন টেনে তুললেন। কিন্তু ছেলেকে আমি ধরে রাখতে পারলাম না। চোখের সামনেই ভেসে গেল ও...’’ আর সেই বীভৎস স্মৃতিচারণ করতে পারলেন না সন্তানহারা মা। ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
হড়পা বানে ভেসে গিয়েছেন স্বর্ণদীপের জেঠু তপনও। তপনের ছেলে তুহিনাদ্রির কথায়, ‘‘আমার বাবা-মা, আমার ছ’বছরের ছেলে, ভাই, কাকা ও কাকিমা দশমীতে বিসর্জন দেখতে গিয়েছিল। ছ’জনই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। ভাই কাকিমাকে ধরে রেখেছিল। ওখানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা আমাদের পরিবারের চার জনকে উদ্ধার করেন। কিন্তু ভাই আর আমার বাবাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। একই বাড়ির দু’জনের মৃত্যু। এখন প্রতিটা দিন যে কী ভাবে কাটছে, তা আমরাই জানি।’’
এই দুর্ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী, প্রশাসনের পরিকল্পনার অভাব কিংবা গাফিলতি ছিল কি না, সে সব বিচারের পরিস্থিতি নেই মালবাজারের এই অধিকারী পরিবারের। বিসর্জনের দিন থেকে গোটা বাড়ি জুড়ে শুধুই শোকের আবহ।