ফাইল ছবি
করোনা-আবহে সংক্রমণ রুখতে প্রায় এক বছর ধরে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমেই চলেছে পঠনপাঠন। তাই এ বার আর স্কুলে গিয়ে নয়, বার্ষিক পরীক্ষা অনলাইনেই দিতে চাইছে পড়ুয়াদের একাংশ। তাদের যুক্তি, অতিমারি পরিস্থিতি যে হেতু এখনও স্বাভাবিক হয়নি তাই স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া এখনও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আবার অনেক অভিভাবকের মতে, সারা বছর অনলাইনে পড়াশোনা করার পরে স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিতে পরীক্ষার্থীদেরও অসুবিধা হতে পারে। এ সব ভেবে তাই অনলাইনে পরীক্ষার পক্ষেই সওয়াল করছেন নবম এবং একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ও অভিভাবকদের একাংশ।
সিবিএসই এবং আইসিএসই বোর্ডের দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা অফলাইনে হওয়ার কথা। তবে নবম এবং একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের অনেকে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার পক্ষপাতী। সেই দাবিতে ইতিমধ্যে শহরের কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকেরা বিক্ষোভও করেছেন। দিল্লি পাবলিক স্কুল রুবি পার্কের সামনে নবম ও একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা অফলাইনে বার্ষিক পরীক্ষা দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। শ্রীশিক্ষায়তন স্কুলের কিছু অভিভাবকেরও দাবি, নবম ও একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের সহজেই অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তার বদলে স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হলে তা কিছুটা ঝুঁকির হয়ে যাবে।
যদিও ডিপিএস রুবি পার্ক কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, সিবিএসই বোর্ডের নির্দেশ মতোই অফলাইন পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শ্রীশিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্যও বলছেন, “আমরা তো নিজের ইচ্ছায় স্কুল খুলছি না, পরীক্ষাও নিচ্ছি না। রাজ্য সরকারের নির্দেশেই আমরা স্কুল খুলেছি। সিবিএসই বোর্ডের নির্দেশে পরীক্ষা নিচ্ছি।”
তবে কোনও কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথাও ভাবছেন। যেমন রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস জানাচ্ছেন, একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হলেও নবম শ্রেণির পড়ুয়াদের পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার কথাই ভাবছেন তাঁরা। তিনি বলেন, “অভিভাবকদের একাংশ অনলাইনে পরীক্ষা চাইছেন। এখনও স্কুলগাড়ি আগের মতো চলছে না। তাই যে সব পড়ুয়া দূরে থাকে তাদের স্কুলে আসতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই নবম শ্রেণির পরীক্ষা অনলাইনে নেব বলেই এখনও পর্যন্ত আমরা ঠিক করেছি।”
আবার অনেক অভিভাবকের মতে, সারা বছর অনলাইনে পঠনপাঠন চালানোর পরে হঠাৎ করে অফলাইনে পরীক্ষা দিতে পড়ুয়াদের অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না-ও করতে পারে। এই অসুবিধার কথা বিবেচনা করেই নবম ও একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা মার্চের মাঝামাঝির সময়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাউথ পয়েন্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, “আমরা নবম ও একাদশের পরীক্ষা অফলাইনেই নেব। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের অনলাইন থেকে অফলাইনে যেতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য তাদের সময় দিচ্ছি। পড়ুয়ারা প্রায় ২০ দিনের মতো স্কুলে এসে ক্লাস করবে। তার পরে ওরা স্কুলে বসে পরীক্ষা দেবে।”
তবে বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বোর্ডের নিয়ম পাল্টে অন্তত নবম এবং একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের অনলাইনেই বার্ষিক পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক— এই দাবি তুলছেন অভিভাবকদের অনেকেই। কারণ তাঁদের মতে, মহারাষ্ট্র-কেরলে ফের করোনার প্রকোপ বাড়ছে। বেশ কিছু জায়গায় ফের লকডাউনের পথেও হাঁটতে হয়েছে প্রশাসনকে। তাই আগামী দিনে এ রাজ্যের পরিস্থিতি কেমন থাকবে, তা আগে থেকে স্কুলগুলির পক্ষে কী ভাবে বোঝা সম্ভব, সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
তবে শুধুমাত্র কোভিডের আশঙ্কাতেই নয়, বাড়িতে বসে চেনা পরিবেশে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ অনেক পড়ুয়াই নিতে চাইছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব যেমন মনে করেন, “এক দিকে করোনা ভীতি যেমন আছে, তেমনই চেনা পরিবেশে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেওয়ার একটা মানসিকতাও কাজ করছে।” বাড়িতে বসে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে বই দেখে লেখার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলেও অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে। অনিরুদ্ধবাবুর মতে, “বাড়িতে বসে পরীক্ষা দিলে বই দেখে পরীক্ষা দেওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এ ক্ষেত্রে এমন প্রশ্নপত্র হওয়া দরকার, যেখানে ভাল ভাবে পড়াশোনা না করলে বই খুলে পরীক্ষা দিলেও বিশেষ লাভ হবে না।”