গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মন্ত্রিত্ব গিয়েছে। দলীয় পদ গিয়েছে। খাতায়কলমে তিনি এখনও বিধায়ক বটে। তবে জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিধায়ক হিসেবে শেষ যে চিহ্নটুকু প্রকাশ্যে ছিল, তা-ও মুছে গেল। ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতার নির্দেশে রাজ্য প্রশাসন যে অভিযান শুরু করেছিল, বৃহস্পতিবার তাতে ভাঙা পড়েছে বেহালা ম্যান্টনে পার্থের তৈরি কার্যালয়ও।
অনেক দিন ধরেই বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, রাস্তা দখল করে বেহালা পশ্চিমের বিধায়কের কার্যালয় তথা পার্টি অফিস তৈরি হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন কোনও গা করছে না। গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফুটপাথ দখলমুক্ত করার বিষয়ে প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পর মঙ্গলবার থেকেই আগ্রাসী হয়ে দখলমুক্ত করার অভিযানে নেমেছিল প্রশাসন। নামানো হয়েছিল বুলডোজ়ারও। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী কিছুটা ‘নরম’ হওয়ার বার্তা দিয়ে এক মাস সময় দিয়েছেন। কিন্তু তার মধ্যেই পার্থের কার্যালয়টি ভেঙে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
ওই কার্যালয়ে নিয়মিত যেতেন পার্থ। বসতেন। মানুষের কথা শুনতেন। এলাকার মানুষের বিভিন্ন কাগজপত্রে বিধায়ক হিসেবে সইসাবুদ করতেন। ২০২২ সালের ২৩ জুলাই সকালে পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক কার্যালয়টিও ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে থাকে। তবু ‘স্মৃতি’ হিসেবে ছিল কার্যালয়টি।
বিধায়কের কার্যালয় ভাঙা নিয়ে রাজনৈতিক দাবি, পাল্টা দাবিও শুরু হয়েছে। সিপিএমের তরফে দাবি করা হয়েছে, হকারদের সঙ্গে নিয়ে তারা প্রশাসনের দাবি করেছিল, ডায়মন্ড হারবার রোডের ফুটপাথ এবং রাস্তারও একাংশ দখল করে থাকা বিধায়ক কার্যালয় ভাঙা হোক। বেহালার সিপিএম নেতা কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘তাতেই প্রশাসন চাপে পড়ে ভাঙতে বাধ্য হয়েছে।’’ পাল্টা তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। এই জন্যই মমতা সারা দেশে ব্যতিক্রম। যেখানে প্রশাসনিক কাজে দল দেখা হয় না। তৃণমূলও কোনও অন্যায়কে সমর্থন করে না।’’
বৃহস্পতিবারের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মমতা বলেছিলেন, দুর্গাপুরে জলাভূমি ভরাট করে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের অফিস গড়ে তোলা হয়েছে। মমতা নবান্নে ওই কথা বলার পরেই সেই বাড়ির কাগজপত্র চাইতে গিয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। শান্তনুর বক্তব্য— দল, রং না দেখেই পদক্ষেপ করছে তৃণমূল সরকার।