শপথ অনুষ্ঠান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র
নবনির্বাচিত বিধায়কদের শপথ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই বিতর্ক হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সেই বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিল রাজভবন।
রাজভবনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নবনির্বাচিত বিধায়কেরা রাজ্যপালকে জানিয়েছিলেন যে, তাঁরা চান, তাঁদের শপথগ্রহণ বিধানসভাতেই হোক। তার প্রেক্ষিতে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বিধানসভায় স্থানান্তরিত করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তাও করছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কিন্তু সেই আবহে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেন যে, রাজভবনে নাকি মহিলারা যেতে নিরাপদ বোধ করছেন না! যদিও রাজভবনের বিবৃতিতে দাবি, নতুন বিধায়কেরা রাজভবনে যে পত্র দিয়েছেন, তাতে তাঁদের রাজভবনে আসতে না-চাওয়া নিয়ে কোনও বক্তব্য ছিল না।
তৃণমূলের দুই সদ্যনির্বাচিত বিধায়ক রায়াত হোসেন সরকার এবং সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই টানাপড়েন চলছে। জটিলতা কাটাতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দিয়েছেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এই বিতর্কে বৃহস্পতিবার মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমার বিধায়কেরা এক মাস ধরে বসে আছেন। মানুষ নির্বাচন করেছে। ওঁর কী অধিকার আছে?’’ বিধায়ক হিসাবে শপথ নিতে রাজভবনে যেতে রাজি হননি দুই বিধায়ক। তাঁদের সেই ইচ্ছায় ‘সিলমোহর’ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। তার প্রেক্ষিতে মমতার মন্তব্য, ‘‘রাজভবনে যা কীর্তি-কেলেঙ্কারি চলছে, তাতে মেয়েরা যেতে ভয় পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আমাকে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ওঁর রাজভবনে সবাই কেন যাবে?’’ সেই সূত্রেই শপথ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘উনি (রাজ্যপাল) স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারকে মনোনীত করবেন। না হলে নিজে বিধানসভায় যাবেন।’’ প্রসঙ্গত, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজভবনের এক অস্থায়ী কর্মী ‘শ্লীলতাহানি’র অভিযোগ আনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘোষণা করেছিলেন, তিনি আপাতত রাজভবনে যাবেন না। প্রয়োজনে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলবেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের নিন্দা করা হয়েছে রাজভবনের বিবৃতিতে। রাজভবনের কর্মীদের উদ্দেশে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২১ জুন দুই সদ্যনির্বাচিত তৃণমূল প্রার্থীকে জানানো হয় যে, ২৬ জুন দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজভবনে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তার পর ২৪ জুন রাজ্যপালকে সায়ন্তিকা জানান, বিধানসভার স্পিকারের সামনেই তিনি শপথ নিতে চান। শপথগ্রহণ যাতে বিধানসভায় হয়, তা নিশ্চিত করার অনুরোধও করেন। এর পর ২৫ জুন রাজভবনের তরফে সায়ন্তিকাকে জানানো হয় যে, সাংবিধানিক নিয়ম এবং দস্তুর মেনে রাজ্যপালের সামনেই শপথ নেওয়া জরুরি। ওই দিনই সায়ন্তিকা ফের রাজ্যপালের কাছে সিদ্ধান্ত বদলানোর অনুরোধ করেন। চিঠিতে অনুচ্ছেদ ১৮৮-র উল্লেখ করে বিধানসভায় শপথ অনুষ্ঠান চান তিনি। এর পর ২৬ জুন রাজভবনে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাজ্যপাল অপেক্ষাও করেন। কিন্তু কেউ না আসায় তিনি দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘নবনির্বাচিত বিধায়কদের অনুরোধের পর তাঁদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে শপথ অনুষ্ঠান স্থানান্তরিত করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করছিলেন। ঠিক সেই সময় জানা গেল মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন— মহিলারা রাজভবনে যেতে নিরাপদ বোধ করছেন না।’’ বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজনই বোধ করছে না রাজভবন।
গত ৪ জুন লোকসভা ভোটের ফলঘোষণার সঙ্গে বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফলও বেরোয়। বরাহনগরে সায়ন্তিকা ও ভগবানগোলায় রায়াত নির্বাচিত হন। তার পরেই শপথ নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়। শপথ অনুষ্ঠান বিলম্বিত হওয়ায় বৃহস্পতিবারও টানা কয়েক ঘণ্টা অম্বেডকরের মূর্তির সামনে অবস্থানে বসেন সায়ন্তিকা ও রায়াত। শপথ-বিতর্কে মমতা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন শুনে সায়ন্তিকা বলেন, ‘‘দলনেত্রী যা বলেছেন, সেটাই শেষ কথা। রাজভবনে আমরা যাব না। উপনির্বাচন দু’জায়গায় হয়েছে। অথচ রাজভবন থেকে শুধু আমার কাছে ইমেল এসেছিল। একা আমাকে কেন ওখানে ডাকা হচ্ছে?’’ সায়ন্তিকার সংযোজন, ‘‘স্পিকারকেও কিছু জানানো হয়নি। আমি নিরাপদ অনুভব করছিলাম না। রাজভবনে তো অনেক ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য সায়ন্তিকার এই দাবি বৃহস্পতিবারই নস্যাৎ করেছেন। রায়াতকে পাঠানো শপথের আমন্ত্রণপত্রের প্রতিলিপি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘‘রাজভবন যেতে নয়, মিথ্যা বলাকে ভয় করুন সায়ন্তিকা। মাননীয় রাজ্যপাল শুধু আপনাকে আমন্ত্রণ জানাননি। এক জন জনপ্রতিনিধির মুখে সাংবিধানিক প্রধান সম্পর্কে এমন ডাহা মিথ্যে কথা মানায় না। তৃণমূলে অবশ্য এটা বড় যোগ্যতা। রায়াত হোসেন সরকার মহাশয়ও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। চিঠিটা দেখুন। যদি একটু লজ্জা হয়।’’