(বাঁ দিকে) মহম্মদ সেলিম এবং সীতারাম ইয়েচুরি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বাংলার পাশাপাশি সারা দেশেই লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের মুখে সিপিএম। বাংলার বিপর্যয় ধারাবাহিক। সরকারে ক্ষমতাসীন কেরলেও যে ভাবে ভোট কমেছে, তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরিরা। সেই আবহেই শুক্রবার থেকে দিল্লিতে শুরু হচ্ছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। সিপিএম সূত্রের খবর, আত্মসমালোচনার পাশাপাশি বিপর্যয়ের অন্ধকারের মধ্যেও ‘রুপোলি রেখা’র কথা বলতে চান বাংলা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়া নেতারা।
কী সেই রুপোলি রেখা? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘২০০৪ সাল থেকে দেখলে দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি নির্বাচনে (লোকসভা এবং বিধানসভা) আগের বারের তুলনায় আমাদের ভোট কমতে থেকেছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত সেটাই ছিল দস্তুর। কিন্তু ২০২৪ সালের ভোটই প্রথম, যেখানে দেখা গেল ভোটের রেখচিত্র নিম্নমুখী হওয়ার বদলে খুব সামান্য হলেও উপর দিকে উঠেছে।’’
সিপিএমের ভোট গত ২০ বছরে যে ভাবে কমেছে বাংলায়, সেই রেখচিত্র দেখলে বোঝা যাবে, তারা কার্যত গোত্তা খেয়ে নীচে নেমেছে। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বামেদের ভোট ছিল ৫০.৭৪ শতাংশ। সে বার রাজ্যে ৩৫টি লোকসভা আসন জিতেছিল তারা। সিপিএমের একারই ভোট ছিল সাড়ে ৩৮ শতাংশ। কিন্তু সেই ভোটই ২০২১ সালে এক ধাক্কায় চলে গিয়েছিল ৫ শতাংশের আশপাশে। ‘রক্তক্ষরণ’ হতে হতে রক্তশূন্যতার জায়গায় পৌঁছেছিল বাংলার বামেরা। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে সেই ভোট বৃদ্ধি হয়ে সাড়ে ৫ শতাংশের সামান্য বেশি হয়েছে। এটাকেই ‘অন্ধের যষ্টি’ হিসেবে দেখাতে চাইছে রাজ্য সিপিএমের একাংশ।
তবে এর পাল্টা বক্তব্যও রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নন কিন্তু রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে রয়েছেন, এমন এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এ সব আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা। এই সব তথ্য আউড়ে কিচ্ছু হবে না। বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়ে, বাস্তবসম্মত ভাবে রাজনীতি করতে হবে।’’ তাঁর এ-ও বক্তব্য, ‘‘ভোট হয়ে গিয়েছে, আমরাও বসে পড়েছি। গত দু’দিন ধরে কলকাতা-সহ রাজ্যে যে ভাবে বুলডোজ়ার দিয়ে হকার উচ্ছেদ হল, তার সামনে দাঁড়াতে কোনও নেতৃত্বকে দেখা গেল না। একটা বিবৃতি দিয়েই আমরা খালাস।’’
তবে আন্দোলন জনিত বাস্তব পরিস্থিতি যা-ই হোক, বাংলার নেতারা কিন্তু ‘অগ্রসর’ হওয়ার আরও পরিসংখ্যান দিতে চান কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। যেমন, তাঁরা হিসেব কষে দেখেছেন, ২০২১ সালের তুলনায় রাজ্যের অন্তত ৯৩টি বিধানসভায় তাঁদের ভোটবৃদ্ধি হয়েছে ‘উল্লেখযোগ্য’ হারে। অন্তত ৩৫টি বিধানসভায় সেই ভোটবৃদ্ধি দ্বিগুণ বলেও দাবি তাঁদের।
যদিও ভোটের হিসাব নিয়ে সিপিএমের অন্য অংশের পাল্টা যুক্তি রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ২০০৪ সালের পর থেকে দলের ভোট কমেছে ঠিকই। তবে ২০১৬ থেকে ভোটের ‘স্বচ্ছ’ হিসেব নেই। কারণ, কখনও শুধু কংগ্রেস, কখনও কংগ্রেস-আইএসএফের সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়া হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে নিজেদের প্রাপ্ত ভোটের হিসাব কী ভাবে কষা সম্ভব? সব মিলিয়ে সিপিএমের একটা বড় অংশে সংশয় থেকেই যাচ্ছে এই নিয়ে যে, এখনও দল ‘বাস্তববাদী’ হয়ে ভোটের ফলাফলের পর্যালোচনা করবে? না কি তথ্যের আড়ালে আসল সমস্যা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা জারি থাকবে?