বছরের শেষ দিনে ১২ মাসের সমস্ত ঘটনাই ১২ মিনিটের কোলাজে ধরে রাখতে চাইলেন মমতা। —ফাইল ছবি।
৩৬৬ দিনের ২০২৪ সাল শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার। এই বছরে ঘটনার ঘনঘটা লেগে ছিল। বঙ্গ রাজনীতিও ছিল বর্ণময়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নানাবিধ ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে এক বছরে। বছরের শেষ দিনে ১২ মাসের সেই সমস্ত ঘটনাই ১২ মিনিটের কোলাজে ধরে রাখতে চাইলেন মমতা। সমাজমাধ্যমে ১২ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে তা জানান দিয়েছেন তিনি।
বছরের শুরুটাই হয়েছিল গঙ্গাসাগর মেলা দিয়ে। তার ঠিক পরেই জাতীয় রাজনীতির নজর ছিল অযোধ্যায়। কারণ, ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই দিনই কলকাতার রাস্তায় সম্প্রীতি মিছিল করেছিলেন মমতা। হাজরা থেকে সেই মিছিল গিয়েছিল পার্ক সার্কাস ময়দান পর্যন্ত। ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রের থেকে বকেয়ার দাবিতে রেড রোডে ধর্না শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করেছিলেন, কেন্দ্র টাকা না দিলে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকেই বকেয়া মজুরি মেটানো হবে। উল্লেখ্য , লোকসভা ভোটের আগে তা করেওছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মার্চের ১০ তারিখ ব্রিগেডে জনগর্জন সভা করেছিল তৃণমূল। সেই সভা থেকেই লোকসভা নির্বাচনের ৪২টি কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিলেন তিনি। র্যাম্পে হেঁটে প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। নতুন ধারার সমাবেশ দেখেছিল বহু ইতিহাসের সাক্ষী ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড। এপ্রিল এবং মে মাস লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ ছুটে বেরিয়েছিলেন মমতা।
জুনের ৪ তারিখ ছিল লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা। দেখা যায় বিজেপির যাবতীয় ‘হুঙ্কার, গর্জন’কে পরাস্ত করে তৃণমূল ২২ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৯। যে উত্তরবঙ্গকে বিজেপির ‘গড়’ বলে অভিহিত করা হচ্ছিল, সেখানেই কোচবিহার আসনে অমিত শাহের ডেপুটি থাকা নিশীথ প্রামাণিককে হারায় তৃণমূল। তা ছাড়া ২০১৯ সালের লোকসভায় জঙ্গলমহলের সব আসন ছিল বিজেপির দখলে। এ বার সেই পশ্চিমাঞ্চলের ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া আসন জিতে নিয়েছে তৃণমূল।
লোকসভা ভোটের পরে ২১ জুলাইয়ের বার্ষিক সভা থেকে দলকে বার্তা দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু অগস্ট মাস পড়তে না পড়তেই অভূতপূর্ব আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হয় মমতার সরকার তথা প্রশাসনকে। আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় শুরু হয় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন। সমান্তরাল ভাবে নাগরিক আন্দোলনের মাইলফলক লিখতে শুরু করে বাংলা। এর মধ্যেই ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নামেন রাজনীতিক মমতা। পাশাপাশিই প্রশাসক মমতা পৌঁছে যান স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান মঞ্চে।
ক্যালেন্ডারে অগস্ট শেষে সেপ্টেম্বর শুরু হয়। কিন্তু আন্দোলন চলতেই থাকে। নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে শুরু হয় রাজনৈতিক আন্দোলনও। একাধিক বার প্রশাসনিক উদ্যোগেও তা থামানো যায়নি। খানিকটা চাপে পড়েই কলকাতার পুলিশ কমিশনার-সহ পুলিশ ও স্বাস্থ্য প্রশাসনের একাধিক পদস্থ কর্তাকে সরাতে হয় রাজ্য সরকারকে। অক্টোবর থেকে শুরু হয় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন। সেই অনশন চলে পুজোর পর পর্যন্ত। যদিও তত ক্ষণে মোটামুটি বাংলা উৎসবে ঢুকে পড়েছে। আবার এই অক্টোবরেই হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূমের মতো জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। সেই সমস্ত এলাকায় সফর শুরু করেন মমতা। তার পরে ঘূর্ণিঝড় ডেনা আছড়ে পড়ে বাংলায়। সেই সময়েও প্রশাসক মমতার সক্রিয়তা লক্ষ করা গিয়েছিল। নভেম্বরে রাজ্যের ছ’টি বিধানসভার উপনির্বাচনে বিপুল জয় পায় তৃণমূল। যা প্রমাণ করে দেয়, আরজি কর আন্দোলনের কোনও ছাপ ভোটের বাক্সে পড়েনি।
ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই উৎসবমুখর ছিল রাজ্য। প্রথমে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব এবং পরে ক্রিসমাসের সূচনা করেন মমতা। এর মধ্যেই সোমবার মমতা গিয়েছিলেন সন্দেশখালিতে। যে সন্দেশখালি লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগে টানা উত্তপ্ত ছিল।
নতুন বছরও মমতা শুরু করছেন প্রশাসনিক ঝাঁকুনি দিয়েই। ২ জানুয়ারি নবান্ন সভাঘরে রাজ্যের সব জেলার মহকুমা এবং ব্লক স্তরের প্রশাসনিক আধিকারিককে নিয়ে সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস। সারা রাজ্যেই বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দলের প্রতিষ্ঠাদিবস পালন করবে শাসকদল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের প্রয়াণে রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। তাই জাতীয় পতাকা উত্তোলন হবে না তৃণমূলের কর্মসূচিতে।