(বাঁ দিকে) সিআইএসএফ আধিকারিকেরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পর উত্তাল দেশ। এই মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন বিরোধীরা। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত আরজি কর হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু সোমবার সুপ্রিম কোর্টে সিআইএসএফের বাহিনী নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায় কেন্দ্র। পাল্টা নবান্নের সভা থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুনানিতে কেন্দ্রের সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয় জরুরি সরঞ্জাম রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি, এদের সকলের থাকার বন্দোবস্তও ঠিক মতো করা হয়নি বলেও জানানো হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ জানিয়েছে, যে সিআইএসএফের যিনি সিনিয়র অফিসার রয়েছেন, তাঁর সঙ্গে স্বরাষ্ট্র দফতরের সিনিয়র অফিসার আলোচনা করে এ বিষয়ে সমাধানসূত্র বার করবেন। পাল্টা জবাবে মমতা বলেন, ‘‘আপনারা যদি কাউকে পাঠান তা হলে দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারকেও নিতে হবে। সবটাই আপনারা রাজ্য সরকারের উপর চাপিয়ে দেবেন, আর মিথ্যে কথা বলবেন যে, আমরা দিইনি। আমরা তিনটে জায়গা দিয়েছি। কিন্তু আপনি যদি রোজ সংখ্যা বাড়ান, বাংলাটাকে গ্রাস করবার জন্য, পুলিশের হাত থেকে সবটাই কেড়ে নিতে চান?’’ এর পরেই তিনি আরও বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের এর মধ্যে পূর্ণ চক্রান্ত রয়েছে, আমি কোর্ট নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আমরা কোর্টের আদেশ মানতে বাধ্য। কিন্তু মনে রাখবেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পূর্ণ চক্রান্ত রয়েছে। সঙ্গে কয়েকটি বামপন্থী দল। তারাও এই চক্রান্তে শামিল হয়েছে। যাদের মানুষের কাছে যাওয়ার ক্ষমতা নেই, যে হেতু আমরা কিছু পাল্টা করছি না, তাই একতরফা ভাবে সব করে যাচ্ছে।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মমতার আক্রমণ, ‘‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চিঠি লিখল সিআইএসএফকে জায়গা দাও। ববিকে (কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম) পাঠিয়ে ইন্দিরা হসপিটালের ৩০ বেডের এবং একটা প্রাইমারি স্কুল দিলাম পুরসভার। তার পরও রোজ বলেন? এখন বলছে কমিউনিটি হলগুলো আমাদের দিয়ে দাও। এলাকায় এলাকায় যে মানুষগুলোর বিয়ে, শ্রাদ্ধ, পৈতে, পুজো, উৎসবের নামে এই কমিউনিটি হলগুলি করা হয়েছে। এগুলো লোকের কাজে লাগে। তারা কোথায় যাবে? সেগুলো কী হবে? ’’ তাঁর আরও প্রস্তাব ‘‘আরজি করের পাশে জায়গা লাগলে বলুন। আরজি করের পাশে যে জায়গাটা পড়ে আছে, মুখ্যসচিবকে বলব ডেকোরেটার্সদের দিয়ে করে দিন। আজকাল সব কিছু তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। তক্তা পেতে দিন, খাট পেতে দিন, ওয়াশরুম করে দেবে। আপনি যদি কনজেস্টেড এরিয়ায় আমাকে বলেন ২ ঘণ্টার মধ্যে জায়গা খুঁজে দিতে হবে, তা কী করে সম্ভব? সেই জায়গাটা ভীষণ কনজেস্টেড। সেখানে যদি কিছু না করতে পারেন, পুলিশের যে ব্যারাক আছে, সেখানে ব্যবস্থা করে দিন। নতুবা বাসের বন্দোবস্ত করে দিন। বাস তাদের তুলে নিয়ে আসবে, বাস তাদের পৌঁছে দেবে। তারা আর কী চায়? জামাকাপড়, খাবারদাবার চাইলে দিয়ে দিন। আর কী কী দেওয়ার আছে?’’
আরজি কর হাসপাতালে তিন কোম্পানি কেন্দ্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রাজ্য জানিয়েছে ওই বাহিনীর জন্য সমস্ত বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আজকে সন্ধ্যার মধ্যে এক কোম্পানি কেন্দ্র বাহিনীকে তিন জায়গায় রাখার বন্দোবস্ত করতে হবে।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক সিনিয়র অফিসার এবং সিআইএসএফের এক সিনিয়র অফিসার মিলে নিশ্চিত করবে সমস্ত বাহিনীর থাকার বন্দোবস্ত। নতুন কোনও কিছুর প্রয়োজন হলে ওই দুই অফিসার সোমবার বিকেল ৫টার মধ্যেই সেই সব বন্দোবস্ত করবে। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাত ৯টার মধ্যে রাজ্যকে দিতে হবে।