West Bengal BJP

ডিসেম্বরে ‘ফেল’ করে ধমক খাওয়া রাজ্য বিজেপি ৪২ লাখ পার! সদস্যসংখ্যায় এই হঠাৎ জোয়ার কোন কারণে

৩ জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত পাওয়া হিসেব বলছে, প্রায় ৪২ লক্ষ সদস্য সংগ্রহ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ লক্ষেরও বেশি সদস্যপদ ‘ভেরিফায়েড’ হয়ে গিয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৯
Share:

শেষ দু’সপ্তাহে জোয়ার রাজ্য বিজেপির সদস্যসংখ্যায়। বনসলের বৈঠকের আগে কি স্বস্তিতে রাজ্য নেতৃত্ব? —ফাইল ছবি।

সাত সপ্তাহ ধরে সংখ্যাটা পৌঁছেছিল ২৬ লক্ষ ৬২ হাজারে। গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ‘অসন্তুষ্ট’। ১ কোটি সদস্যপদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য যে রাজ্যে, সেখানে মাত্র ২৬ লাখ! তা-ও সাত সপ্তাহ ধরে! কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘ধমক’ জুটেছিল রাজ্য বিজেপির কপালে। কিন্তু শেষ দু’সপ্তাহে সদস্যসংখ্যা দেড় গুণ করে ফেলেছে সেই বিজেপিই। কোন রহস্যে? কোন কারণে?

Advertisement

বিজেপি সূত্রের দাবি, গত এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক এক লক্ষেরও বেশি সদস্য সংগ্রহ হচ্ছে রাজ্য জুড়ে। প্রত্যেক জেলায় রোজ সদস্য সংগ্রহের সংখ্যা হাজার চারেক ছুঁয়ে ফেলছে। ৩ জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত যে হিসেব রাজ্য বিজেপি দিচ্ছে, তা বলছে, প্রায় ৪২ লক্ষ সদস্য সংগ্রহ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ লক্ষেরও বেশি সদস্যপদ ‘ভেরিফায়েড’ (যাচাইকৃত) বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। অর্থাৎ, মোবাইলে ‘মিস্‌ড কল’ দিয়ে যাঁরা প্রাথমিক সদস্য (৪২ লক্ষ) হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৩৮ লক্ষেরও বেশি লোকের কাছে বিজেপির সক্রিয় সদস্যেরা সরাসরি পৌঁছেছেন। তাঁদের নাম, বয়স, ঠিকানা, ফোন নম্বর, বুথ নম্বর, পোস্টাল ইনডেক্স নম্বর, বয়স, পেশা-সহ মোট আটটি ‘ব্যক্তিগত তথ্য’ সংগ্রহ করেছেন। ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় তা নথিবদ্ধ করেছেন। তবেই তাঁদের ‘ভেরিফায়েড’ প্রাথমিক সদস্য হিসেবে ধরা হয়েছে। রাজ্য বিজেপির ইতিহাসে এত সংখ্যক ভেরিফায়েড সদস্য ‘রেকর্ড’ বলেও বিজেপির একটি অংশের দাবি। কিন্তু দাবির পাশাপাশি প্রশ্নও আছে— এই ‘রেকর্ড’ সংখ্যা বিজেপি স্পর্শ করল কী ভাবে? গত ২৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সদস্য সংগ্রহ অভিযান ১৯ ডিসেম্বরে পৌঁছেও ‘হতাশাজনক’ জায়গায় ছিল। শেষ দু’সপ্তাহে কী এমন ঘটল যে, সেই সংখ্যা ২৬ লক্ষ থেকে বেড়ে ৪২ লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছে গেল?

কারণ একাধিক। প্রথমত, রাজ্য বিজেপির নেতারা মনে করছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ‘শাপে বর’ হয়েছে রাজ্য বিজেপির জন্য। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের প্রথম পর্বেও প্রতিবেশী রাষ্ট্রে অশান্তি ছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের দ্বিতীয় ভাগে ঘটনা আরও সঙ্গিন হতে শুরু করে। অন্তত প্রচার তেমনই। যে প্রচার বলছে, বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালু আছে। তার সঙ্গে চড়েছে ভারত বিরোধিতার স্বর। পাশাপাশিই, বাংলার একাধিক জেলা থেকে জেএমবি বা এবিটি জঙ্গিদের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের পুলিশও।

Advertisement

দ্বিতীয়ত, পুরোপুরি উল্টো ভূমিকায় দেখা গিয়েছে সিপিএমকে। প্রথমে সিপিএম সে ভাবে পথেই নামতে চায়নি বাংলাদেশ ইস্যুতে। পরে নামলেও ভারতে আর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতিকে একই রকম ভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছে তারা। এই ঘটনাপ্রবাহ বিজেপির সদস্যপদ অভিযানের পালে হাওয়া যুগিয়েছে বলে দলের একাংশের অভিমত।

এই ঘটনাপ্রবাহ বিজেপি কর্মীদের ‘সক্রিয়’ করেছে বলেও দাবি দলের নেতাদের। ‘মিস্‌ড কল’ পাওয়ামাত্রই তাঁরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচাই করার কাজ করেছেন। ২০ ডিসেম্বরের কর্মশালায় মঙ্গল পান্ডের ‘ধমক’ও কাজ করেছে বলে অভিমত অনেকের। তবে কর্মীদের মাঠে নামানোর জন্য বিজেপি একটা ‘কৌশল’ও নিয়েছিল। শর্ত রেখেছিল ‘সক্রিয় সদস্যপদ’-এর জন্য। শর্ত ছিল একজনকে দলের ‘সক্রিয় সদস্যপদ’ পেতে হলে অন্তত ৫০ জনকে ‘ভেরিফায়েড’ প্রাথমিক সদস্য করতে হবে। ‘সক্রিয় সদস্য’ হতে পারলে তবেই দলীয় পদ, দায়িত্ব বা ভোটের টিকিটের জন্য নাম বিবেচনায় আসবে, নচেৎ নয়। ফলে গত দু’সপ্তাহ ধরে রাজ্য জুড়ে রোজ বিজেপির ৭৫-৮০ হাজার কর্মী রাস্তাঘাটে বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সদস্যপদ করানোর কাজ করেছেন বলে বিজেপি সূত্রের হিসেব দাবি করছে। ওই কর্মীরা সর্বত্র আলোচনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং রাজ্যের অবস্থার কথাও তুলে ধরেছেন।

রাজ্য বিজেপির ‘সদস্যতা প্রমুখ’ তথা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য এই কৌশলের কথা স্বীকার করতে রাজি নন। তাঁর প্রাথমিক জবাব, ‘‘বাংলাদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের সদস্যপদ বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।’’ শমীকের বরং দাবি, ‘‘সাধারণ মানুষ বিজেপির ডাকে দারুণ ভাবে সাড়া দিচ্ছেন। এলাকায় তৃণমূলের সমর্থক হিসেবে পরিচিত লোকজনও বিজেপির সদস্যপদ নিয়েছেন।’’ কেন? শমীকের জবাব, ‘‘রাজ্যের পরিস্থিতি দেখে। তৃণমূলের শাসন থাকলে ভবিষ্যতে আদৌ তাঁরা এ রাজ্যে থাকতে পারবেন কি না, মানুষ তা নিয়ে আতঙ্কে। তাঁরা বুঝতে পারছেন, বিজেপির সদস্য হওয়া ছাড়া পথ নেই।’’ রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো অবশ্য বলেই দিয়েছেন, ‘‘সব কিছুই আছে। কোনওটাই অস্বীকার করছি না। বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রভাবও রয়েছে। আমাদের কর্মীরাও হইহই করে মাঠে নেমেছেন গত কয়েক সপ্তাহে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা বলেই এ ভাবে পথে নেমে সদস্য সংগ্রহ করতে পারি। ৪২ লক্ষ করেছি। ৫০ লক্ষও করে ফেলব। তৃণমূলকে ৫ লক্ষ সদস্য এই ভাবে করে দেখাতে বলুন। দেখবেন নিজেদের মধ্যে খুনখারাপি শুরু হয়ে গিয়েছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement