নিজস্ব চিত্র।
করোনা আবহ কাটিয়ে স্কুল কলেজ খোলার আশায় এ বছর সরস্বতী প্রতিমা তৈরির সংখ্যা বাড়িয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের মৃৎশিল্পীরা। মাস দু’য়েক আগে থেকেই কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ বছর কোনও স্কুল কলেজ থেকে একটিও বরাত জোটেনি। তাই তৈরি করা সরস্বতী প্রতিমা আদৌ বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে চিন্তায় ভাতারের কাশীপুরের মৃৎশিল্পীরা।
ভাতারের কাশীপুর বাসস্ট্যাণ্ডের কাছেই প্রতিমা তৈরির কারখানা। ৬-৭ জন মৃৎশিল্পীর বাস এখানে। যাঁদের পেশা বিভিন্ন পুজো উপলক্ষে মূর্তি তৈরি করা। মূর্তি বিক্রি করেই তাঁদের পেট চলে। কিন্তু করোনা আবহে এমনিতেই ওই মৃৎশিল্পীদের বাজার মন্দা। দুর্গাপুজো, কালীপুজো থেকে শুরু করে বছরের বিভিন্ন পুজোয় মাটির তৈরি প্রতিমা বিক্রি কমার জন্য তাঁরা দায়ী করছেন করোনা পরিস্থিতিকে।
কাশীপুরের মৃৎশিল্পী সুরেশ পাল বলেন, ‘‘দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় আমরা প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছি। ভাতার, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর, এমনকি কলকাতা থেকে প্রতিমার বরাত আসত। কিন্তু গত দু’বছর ধরে বরাত নেই। সকলেই আশায় ছিলাম এ বছর করোনার প্রকোপ খানিক কমায় স্কুল কলেজ খুলবে। সেই আশাতেই সরস্বতী প্রতিমা তৈরির কাজে নামি। কিন্তু এখনও স্কুল কলেজ খোলেনি। প্রতিমার অর্ডারও আসেনি।’’ একটা সময় কয়েক হাজার সরস্বতী প্রতিমা বিক্রি হয়েছে। এ বছর কোনও সরস্বতী প্রতিমা তৈরির বরাত না মিললেও বিক্রির আশায় শতাধিক সরস্বতী প্রতিমা তৈরি। প্রতিমা আদৌ বিক্রি হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত শিল্পীরা।
আগে ১৬ থেকে ১৭ জন মৃৎশিল্পী রাত দিন পরিশ্রম করেও সরস্বতী প্রতিমা তৈরীর কাজ সময়ে শেষ করতে পারতেন না। সেই ভাবে বরাত না মেলায় এ বছর মাত্র পাঁচ থেকে ছ’জন মৃৎশিল্পীকে কাজ করছেন। এক শিল্পী বললেন, ‘‘এমনিতেই শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। খড়, বাঁশের দাম বেড়েছে। মাটি কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। তাই মূর্তি তৈরির খরচও বেড়েছে। এখন যদি মূর্তিগুলি বিক্রি না হয় তাহলে প্রচুর লোকসান হয়ে যাবে। জানি না কী করব।’’
সব মিলিয়ে অন্যান্যবার যে সরস্বতী পুজো মুখে হাসি ফোটাত, এ বার করোনার মারে আশঙ্কায় বুক দুরু দুরু ভাতারের কাশীপুরের মৃৎশিল্পীদের।