এই শীতে উৎসবে দেখতে চলুন দেশের নানা প্রান্তে। ছবি: সংগৃহীত।
বেড়াতে যাওয়া মানে কি শুধুই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা? কারও কারও কাছে তেমন হলেও, সকলের ভ্রমণের উদ্দেশ্য এক নয়। কেউ কেউ চান, কোনও একটি স্থানের পর্যটন কেন্দ্রগুলি ঘুরে দেখার পাশাপাশি সেই স্থানের সংস্কৃতি, মানুষ সম্পর্কে জানতে। সেই জানাশোনা হবে কী ভাবে?
স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে মেলামেশা করে, এলাকার রাস্তাঘাটে ঘুরে, সেই জায়গার খাবার খেয়ে সেখানকার সংস্কৃতি ও মানুষজন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করা যায় ঠিকই। তবে যদি তাঁদের উৎসবে অংশ নেওয়া যায়, সেই জানা হতে পারে আরও গভীর। যেমন, কলকাতা। বছরভর তার এক রূপ। কিন্তু, দুর্গোৎসবে সেই তিলোত্তমাই হয়ে ওঠে একেবারে আলাদা। এমন সময় কলকাতা বেড়ানো চিরস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতেই পারে।
ঠিক তেমনই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেই নানা রকম উৎসব হয়। আর এই সব উৎসবকে কেন্দ্র করেও ইদানীং পর্যটনশিল্প প্রসার লাভ করছে। কেউ কেউ একেই বলছেন, ‘উৎসব কেন্দ্রিক পর্যটন’ বা ‘ফেস্টিভ্যাল ট্যুরিজ়ম’। কী এর বিশেষত্ব? কোনও একটি উৎসবে অংশ নিয়ে সেখানকার সংস্কৃতিকে বোঝা। সাখানকার রীতিনীতি, ভাবনাকে অনুধাবনের চেষ্টা করা।
আপনিও কি এমনই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চান? তা হলে জেনে নিন বিভিন্ন রাজ্যের বিশেষ উৎসবের দিনক্ষণ।
রণ উৎসব: গুজরাতের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে পাকিস্তান সীমান্তঘেঁষা কচ্ছের রণের নামের সঙ্গে অনেকেরই প্রথম পরিচয় ভূগোল বইতে। কচ্ছ জেলায় আদিগন্ত নোনা বালির ‘সাদা রণ’-এর সৌন্দর্য উপভোগে প্রতি বছর এখানে ছুটে আসেন অনেকেই। একে মরসুমি জলাভূমিও বলা চলে। শীতের সময় লবণাক্ত জল বাষ্পীভূত হয়ে বিস্তীর্ণ সাদা ভূভাগ তৈরি করে। রণ-এর ধরদো এলাকাতেই বসে উৎসবের আসর। চার পাশে রঙিন তাঁবু। তারই মধ্যে মঞ্চ বেঁধে গুজরাতি নাচ-গানের আয়োজন। স্থানীয় শিল্পীদের হাতের কাজ বিক্রির ব্যবস্থা। রকমারি গুজরাতি খানা। সে এক দারুণ জমাটি ব্যাপার।
গুজরাতে কচ্ছের রণ। ছবি: সংগৃহীত।
গুজরাত সরকারের পর্যটন দফতরের উদ্যোগে চলতি বছরে রণ উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। ১৫ মার্চ পর্যন্ত তা চলবে। সার সার তাঁবুতে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা। সাজানো খাট-বিছানা, এসি, রুম হিটার, লাগোয়া বাথরুমে গরম জল থেকে প্রসাধনী— সবই রয়েছে। ডাইনিং হলে খাওয়ার আয়োজনও এলাহি। গুজরাতি নিরামিষ খানা থেকে রকমারি স্যুপ, হরেক মিষ্টি। থাকার জন্য বিলাসবহুল তাঁবুর পাশাপাশি রয়েছে রিসর্টও। প্যাকেজ এবং দিন অনুযায়ী মাথাপিছু খরচ ধার্য করা হয়েছে। রয়েছে অনলাইনে আগাম বুকিংয়ের ব্যবস্থা। গুজরাত যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে, এর মধ্যেই কোনও সময় বেছে নিতে পারেন। তবে এই সময় গেলে থাকার জায়গা আগাম বুক করে যাওয়া ভাল।
হর্নবিল উৎসব: পাহাড় ঘেরা রাজ্য নাগাল্যান্ডের অন্যতম উৎসব এটি। গ্রেট ইন্ডিয়ান হর্নবিলের বাংলা নাম ধনেশ। এই পাখির নামেই উৎসবের নামকরণ। প্রতি বছর ১-১০ ডিসেম্বর উৎসব উদ্যাপন করা হয়। কেউ কেউ বলেন, নাগাল্যান্ডের লোককাহিনির সঙ্গে এই পাখির নাম জুড়ে রয়েছে, তা থেকেই এই উৎসবের নামকরণ।
কিসামা গ্রামে প্রতি বছর ডিসেম্বরে হয় এই উৎব।
নাগাল্যান্ড সরকারের পর্যটন এবং শিল্পকলা এবং সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে আয়োজিত হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল হয় নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কিসামা গ্রামে। ১০ দিনের বৈচিত্রপূর্ণ উৎসবে এখানকার বাসিন্দাদের রঙিন পোশাক, সুন্দর গয়নার সাজ দেখার মতো । নাগাল্যান্ডের বাসিন্দাদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার এ এক সুবর্ণ সুযোগ। সঙ্গীত, নৃত্য, ক্রীড়া, খাদ্য, লোকশিল্পের পরিচয় পাওয়া যায় এই উৎসবে।
মানালি উইন্টার কার্নিভাল: হিমাচল প্রদেশের মানালি পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয় শহর। বছরের শুরুতেই মানালির বাসিন্দারা মেতে ওঠেন শীতকালীন উৎসবে। নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েই উৎসবের সূচনা হয়। আগামী বছর ২ থেকে ৬ জানুযারি এই উৎসবের আয়োজন হয়েছে। জানুয়ারিতে হিমাচল প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা ঢেকে যায় তুষারে। মানালির বিভিন্ন স্থান থাকে সেই তালিকায়। এই সময় আয়োজন হয় স্কিইংয়ের। পথনাটক, লোকনৃত্য, লোকসঙ্গীতের আয়োজন থাকে এই উৎসবে। হিমাচল প্রদেশের সংস্কৃতিকে ভাল ভাবে জানতে হলে এই উৎসবের মরসুমেই চলে যেতে পারেন সেখানে। এই সময় একাধিক অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসও আয়োজিত হয় মানালিতে।
মানালি উইন্টার কার্নিভাল হয় প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে। ছবি: সংগৃহীত।
জয়সলমের মরু মহোৎসব: সুদূর রাজস্থানের জয়সলমেরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির আবেগ। চলচ্চিত্রের সুবাদেই সেই সংযোগ গড়েছেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়। ফেলুদাকে নিয়ে বিখ্যাত ছবি ‘সোনার কেল্লা’র শুটিং হয়েছিল জলসলমেরেই। সেই সোনার কেল্লা দেখতে জয়লমেরে যাবেন বলে ভেবে রেখেছেন? তা হলে বরং বেছে নিন উৎসবের মরসুম। জয়সলমেরে শীতে আয়াজন হয় ডেজ়ার্ট ফেস্টিভালের। স্থানীয়েরা একেই বলেন ‘মরু মহোৎসব’। আগামী বছরের ২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি তার দিন ধার্য হয়েছে। জয়সলমের শহর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে স্যাম স্যান্ড ডিউনস-এ এর আয়েজন হচ্ছে।