রূপান্তরিত মহিলা সাঁতারুদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ফাইল চিত্র
রূপান্তরিত মহিলা সাঁতারুদের প্রতিযোগিতায় নামার ক্ষেত্রে নতুন বিধিনিষেধ জারি করল আন্তর্জাতিক সাঁতার সংস্থা ফিনা। পুরুষ থেকে মহিলায় রূপান্তরিত হয়েছেন এমন সাঁতারুদের মহিলাদের বিভাগে অংশ নেওয়ার আগে প্রমাণ দিতে হবে যে বয়ঃসন্ধির পরে তাঁদের শরীরে পুরুষত্বের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। নইলে তাঁদের মহিলাদের বিভাগে অংশ নিতে দেওয়া হবে না।
বুদাপেস্টে সাঁতারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীন ফিনার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থার ১৫২ জন সদস্যের মধ্যে ১০৮ জন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফিনা জানিয়েছে, বয়ঃসন্ধির পরে কোনও রূপান্তরিত মহিলা সাঁতারুর শরীরে যদি পুরুষত্বের লক্ষণ দেখা গিয়ে থাকে তা হলে তাঁর শারীরিক ক্ষমতা মহিলাদের থেকে বেশি হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে মহিলাদের বিভাগে অংশ নিতে দিলে বাকিদের থেকে তিনি কিছুটা হলেও বেশি সুবিধা পাবেন। কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রত্যেক প্রতিযোগীর জন্য যাতে নিয়ম সমান থাকে তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফিনা আরও জানিয়েছে, রূপান্তরিত সাঁতারুদের জন্য পুরুষ, মহিলা বাদে অন্য একটি বিভাগ নিয়ে আসার কথা হয়েছে। সংস্থার সভাপতি হুসেন আল মুসল্লম বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে প্রত্যেক প্রতিযোগী সমান। আলাদা একটি বিভাগ তৈরি করলে রূপান্তরিত প্রতিযোগীরা সর্বোচ্চ স্তরে অংশ নিতে পারবে। আর কোনও সমস্যা থাকবে না। আগে খেলায় এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই সব সাঁতারুদের মতামত জানতে চেয়েছি আমরা।’’
মহিলাদের বিভাগে রূপান্তরিত মহিলা সাঁতারুদের অংশ নিতে দেওয়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিবাদ করছেন গ্রেট ব্রিটেনের প্রাক্তন সাঁতারু শ্যারন ডেভিস। ফিনার সিদ্ধান্তে খুশি তিনি। শ্যারন বলেন, ‘‘চার বছর আগে ৬০ জন অলিম্পিক্স সাঁতারুর সঙ্গে মিলে আমি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স সংস্থার কাছে এই আবেদন করেছিলাম। বলেছিলাম, বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে আগে সবার শারীরিক ক্ষমতা বিচার করা হোক। কিন্তু কেউ শোনেনি। ফিনা সেটাই করল। ওরা বিজ্ঞানের সাহায্য নিল।’’
শ্যারন মনে করেন, প্রতিযোগীদের উপর যাতে কোনও অবিচার না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংস্থার। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই আরও বেশি সাঁতারু উঠে আসুক। কিন্তু ১৫ বছর বয়সি কাউকে তো অনূর্ধ্ব-১২ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া হয় না। হেভিওয়েট বক্সারদের লাইটওয়েট বক্সারদের বিরুদ্ধে লড়তে দেওয়া হয় না। তা হলে সাঁতারে কেন সেটা হবে। সবার জন্য আলাদা বিভাগ করা হোক।’’
ফিনার এই সিদ্ধান্তে অখুশি এলজিবিটি সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করা সংগঠন অ্যাথলিট অ্যালি। সংস্থার ডিরেক্টর অ্যানে লিবারম্যান বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক ও অবৈজ্ঞানিক। এ ভাবে কারও ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলানো উচিত নয়। রূপান্তরিত মহিলাদের শারীরিক পরীক্ষা করা মানবাধিকার লঙ্ঘন। কোনও সংস্থা সেটা করতে পারে না।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।