বিরাট কোহলি। —ফাইল চিত্র।
রান পাচ্ছিলেন না বলে দল থেকে বাদ পড়েছেন (দলের কথা অনুযায়ী, নিজেই বসেছেন।) রোহিত শর্মা। তার পরেও সতর্ক হলেন না বিরাট কোহলি। সিডনির প্রথম ইনিংসে আবার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে আউট হলেন তিনি। একই ভুল আবার করলেন বিরাট। ভারতীয় ব্যাটারদের ব্যর্থতায় প্রথম ইনিংস শেষ হল ১৮৫ রানে। অস্ট্রেলিয়া দিনের শেষে ৯/১।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আলোচনা ছিল রোহিতকে নিয়ে। শুক্রবার জসপ্রীত বুমরাহ টস করতে নামতেই বোঝা গেল সব জল্পনা সত্যি। ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন স্বয়ং অধিনায়কই। বুমরাহ যদিও বলেন, “আমাদের দলের একতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু আমাদের ক্যাপ্টেন নিজেই দলের স্বার্থে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এটাই প্রমাণ করে আমাদের দলে কতটা একতা রয়েছে। আমাদের দলের কেউ নিজের জন্য খেলে না। দলের জন্য যেটা ভাল হবে, সেই সিদ্ধান্তটাই নেওয়া হয়।” তবে রোহিত যে রান পাচ্ছিলেন না বলেই বাদ তা স্পষ্ট।
সিডনির পিচে ঘাস ছিল। তার পরিমাণ এতটাই বেশি যে, পিচের সঙ্গে মাঠের বাকি অংশের পার্থক্য করাই কঠিন হচ্ছিল। এমন পিচে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন বুমরাহ, যা খুবই সাহসী সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু অধিনায়কের সাহসের দাম দিলেন না বিরাটেরা। তাঁরা একই ভুল করলেন।
পঞ্চম টেস্টে আবার ওপেন করতে নেমেছিলেন লোকেশ রাহুল। কিন্তু ৪ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। অন্য ওপেনার যশস্বী জয়সওয়ালও ১০ রানের বেশি করতে পারেননি। দুই ওপেনার ১৭ রানের মধ্যে ফিরতেই ভারতীয় দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। প্রথম বলেই আউট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল বিরাটেরও। তাঁকে ইনিংসের প্রথম বলটি করেন স্কট বোলান্ড। অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে থাকা বলে খোঁচা দেন বিরাট। বল চলে যায় স্লিপে দাঁড়ানো স্টিভ স্মিথের হাতে। তিনি ক্যাচ ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন। গোটা অস্ট্রেলিয়া দল উচ্ছ্বসিত। কিন্তু মাঠের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা নিশ্চিত ছিলেন না ক্যাচ ঠিক ভাবে নেওয়ার ব্যাপারে। তিনি তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নেন। সেই দায়িত্বে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের জোয়েল উইলসন। তিনি প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বার বার রিপ্লে দেখেন। সেখানে দেখা যায় স্মিথ ক্যাচ নিলেও বল মাটিতে ছুঁয়ে ছিল। যে কারণে নট আউটের সিদ্ধান্ত জানান উইলসন। সে বারের মতো বেঁচে যান বিরাট।
সিডনিতে ৬৯টি বল খেলেন বিরাট প্রথম সেশনে ভারতকে ভরসা দিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি। স্কট বোলান্ডের বল ছিল পঞ্চম স্টাম্পে। সেই বলে ব্যাট এগিয়ে দিলেন বিরাট। খোঁচা লেগে বল চলে গেল বিউ ওয়েবস্টারের হাতে। আরও এক বার অফ স্টাম্পের বাইরের বলেই আউট হলেন বিরাট। এটাই এখন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গিয়েছে। প্রথম বলের ধাক্কা সামলে ব্যাট শরীরের কাছেই রাখছিলেন বিরাট। ছেড়ে দিচ্ছিলেন মিচেল স্টার্কের বলগুলি। কিন্তু হঠাৎ ব্যাট বাড়ালেন এক বার। তাতেই শেষ তাঁর ইনিংস।
পরিসংখ্যান বলছে ২০২৪ সাল থেকে টেস্টে প্রথম ইনিংসে বিরাটের গড় ৭। যা দলের প্রধান পেসার জস বুমরাহের থেকেও কম। ২০২১ সাল থেকে টেস্টে ২২ বার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে আউট হয়েছেন বিরাট। এত দিনেও তাঁর এই রোগ সারাল না। ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম সেরা ব্যাটার বলা হয় বিরাটকে। কিন্তু প্রথম ইনিংসে ২০২৪ সালের পর থেকে তাঁর গড় নিম্নমুখী। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে বুমরাহের গড় ১০। অর্থাৎ, নিজের দলের বোলারের থেকেও ব্যাট হাতে ম্যাচ প্রতি কম রান করছেন বিরাট। অন্তত পাঁচটি ইনিংস খেলেছেন, এমন ব্যাটারদের মধ্যে ২০২৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত টেস্টে প্রথম ইনিংসে যে ক্রিকেটারদের গড় সবচেয়ে কম, তাঁদের মধ্যে বিরাট দ্বিতীয় স্থানে। শীর্ষে রয়েছেন কেশব মহারাজ। তাঁর গড় ৫.৪। ভারতের সব ব্যাটারদের মধ্যে প্রথম ইনিংসে গড় সবচেয়ে কম বিরাটের, যে পরিসংখ্যান খুব একটা খুশি করতে পারবে না তাঁকে।
শুক্রবার যদিও শুধু বিরাট নন, ব্যর্থ সব ব্যাটারই। ঋষভ পন্থ (৪০) এবং রবীন্দ্র জাডেজা (২৬) জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পন্থ যে ভঙ্গিতে আউট হয়েছেন, তাতে তাঁর করা ৪০ রান ঢাকা পড়ে গিয়েছে। হঠাৎ করে বড় শট মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন মিড-অনে। ম্যাচের পরিস্থিতি বিচার না করে খেললেন পন্থ। আরও এক বার। কোনও রানই করতে পারলেন না নীতীশ কুমার রেড্ডি।
বিতর্ক রয়ে গেল ওয়াশিংটন সুন্দরের আউট নিয়ে। ৬৬তম ওভারের শেষ বলে আউট হলেন ওয়াশিংটন। প্যাট কামিন্সের বল ছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে। সেই বলে পুল মারতে গেলেন ওয়াশিংটন। তাঁর গ্লাভস ঘেঁষে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারের হাতে। কিন্তু মাঠের আম্পায়ার আউট দেননি। অস্ট্রেলিয়া রিভিউ নেয়। সেখানে তৃতীয় আম্পায়ার ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের জোয়েল উইলসন আউট দেন। কিন্তু বার বার রিভিউ দেখেন তিনি। স্নিকোমিটারেও বড় স্পাইক আসে। তবে বল আদৌ গ্লাভসে লেগেছে কি না তা স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়নি।
কৃতিত্ব দিতে হবে অধিনায়ক বুমরাহকে। তিনি যেমন বল হাতে দলের ভরসা, তেমনই ব্যাট হাতেও শুক্রবার দলকে টানলেন। ১৭ বলে ২২ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে গেলেন বুমরাহ। তিনটি চার এবং একটি ছক্কা মারা ভারত অধিনায়কের জন্যই দলের রান ১৮৫ ছুঁল। না হলে আরও আগেই শেষ হয়ে যেতে পারত। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিলেন বোলান্ড। তিনি চার উইকেট নিয়েছেন। তিন উইকেট মিচেল স্টার্কের। দু’উইকেট নেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। শুভমনকে আউট করেন স্পিনার নেথন লায়ন। মধ্যাহ্নভোজে যাওয়ার আগের বলে আউট হয়েছিলেন ভারতীয় ব্যাটার।
ব্যাট হাতে কাজ শেষ হতেই বল হাতে তুলে নিলেন বুমরাহ। ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার পর বেশি ক্ষণ খেলা বাকি ছিল না। মাত্র তিন ওভার খেলা হল। তার মধ্যেই উইকেট তুলে নিলেন বুমরাহ। দিনের শেষ বলে উসমান খোয়াজাকে আউট করেন তিনি। দিনের শেষ বেলায় যেমন অগ্নিশর্মা হয়ে উঠেছিলেন ভারত অধিনায়ক, তাতে দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের খুব স্বস্তিতে থাকতে দেবেন বলে মনে হচ্ছে না।