প্রতীকী ছবি।
কোভিডের চোখরাঙানি বদলে দিয়েছে অনেক কিছুই। দৈনন্দিন জীবনযাপন থেকে শুরু করে ভবিষ্যতের পথ চলার রূপরেখা সব কিছুতেই কোনও না কোনও প্রভাব পড়েছে। বাজারে এসেছে আর্থিক মন্দা। কমেছে সুদের হার। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি। যার ফলে বেশ খানিকটা বিপদেই পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যদিও বর্তমানে এমন কিছু প্রকল্প রয়েছে, যা এই অন্ধকার সময়ে আশার আলো দেখাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হল সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম।
বদলে যাওয়া এই বাজারে বার বার প্রকট হচ্ছে আর্থিক সঙ্কট। চাকরিরত অবস্থায় তো সব কিছু কোনও ক্রমে চলে যাচ্ছে। কিন্তু তার পরে? অবসর পরবর্তী জীবনের রোজগারের আশঙ্কা বেশ ভাবাচ্ছে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের। সাধারণত এই সময়ে সাহায্য করে ফিক্সড ডিপোজিট। কিন্তু যে ভাবে সুদের হার তলানিতে ঠেকেছে, তাতে চিন্তা বাড়ছে বই কমছে না। এই পরিস্থিতিতে বয়স্কদের ভবিষ্যত তথা অবসরকালীন জীবনের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম।
বাজারচলতি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির মধ্যে বেশ জনপ্রিয় এই প্রকল্প। অবসরকালীন সময়ে দেশের প্রবীণ নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই ২০০৪ সালে এই প্রকল্পের নকশা তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রবীণ বা বয়স্করা তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা এই প্রকল্পের অধীনে জমা রাখতে পারেন। বর্তমানে সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে ৭.৪ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাচ্ছে।
ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক তিন মাস অন্তর অর্থাৎ প্রতি কোয়ার্টারে সুদের হার নির্ণয় করে। সেই অনুযায়ী বছরে চারবার সুদের অঙ্ক জমা হয় আমানতকারীদের খাতায়। এপ্রিল, জুলাই, অক্টোবর ও জানুয়ারি মাসের প্রথম বিজনেস ডে-তে সুদ পান আমানতকারীরা। যদিও এই প্রকল্পে টাকা রাখার বেশ কিছু শর্ত রয়েছে।
কোনও ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর হলেই সেই ব্যক্তি সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে টাকা রাখতে পারবেন। তবে পঞ্চান্ন থেকে ষাট বছর বয়সের ব্যক্তিও এই প্রকল্পে টাকা রাখতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট বা স্বেচ্ছায় অবসর নিলে তবেই কোনও ব্যাক্তি এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারবেন। সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত বা বেসরকারি— যে কোনও সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরাই এই সুযোগ পাবেন। তবে এই সময় পেরিয়ে গেলে সাধারণ নিয়ম অনুসারে ৬০ বছরের বেশি বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তা ছাড়াও এই সরকারি এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন দেশের পঞ্চাশোর্ধ্ব অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ানরা।
নূন্যতম ১০০০ টাকা জমা রেখে এই প্রকল্পের অধীনে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন গ্রাহকরা। পাশাপাশি সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে সর্বোচ্চ ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা রাখতে পারবেন কোনও ব্যক্তি। এমনকি এই প্রকল্পের অধীনে স্বামী-স্ত্রীকে একসঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগও দেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
তবে কোনও আমানতকারীকে এই প্রকল্পে টাকা রাখলে অন্তত পাঁচ বছর রাখতেই হয়। অর্থাৎ প্রকল্পে লক-ইন সময়সীমার মেয়াদ অন্তত পাঁচ বছর। একবার এই মেয়াদ পূর্ণ হলে কোনও গ্রাহক ফের তিন বছরের জন্য এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে পারেন।
এই সময়সীমার আগে অর্থ তুলে নিলে গ্রাহকদের মোটা টাকা জরিমানা দিতে হয়। যদি কোনও কারণে আমানতকারী এক বছর সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই এই অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দিতে চান, তা হলে জমা অর্থের ১.৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে। আবার একই ভাবে দু’বছর অ্যাকাউন্ট চালানোর পরে তা বন্ধ করে দিলে গ্রাহককে এক শতাংশ জরিমানা দিতে হবে।
অবসরকালীন সময়ে কর ছাড়ও পেতে পারেন আমানতকারীরা। আয়কর আইনের ৮০(সি) ধারায় সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম অ্যাকাউন্টে লগ্নি করলে আয়করের ঊর্ধ্বসীমায় ছাড় পাওয়া সম্ভব। আবার এই প্রকল্প থেকে যে সুদ পাওয়া যায় তা তোলা হলেও তার উপরে কোনও অতিরিক্ত কোনও সুদ পাওয়া যায় না।