অবসরের সময় সামনে। ভাবছেন কোথায় টাকা রাখবেন,যাতে আপনার অবসরকালীন আয় নিয়ে সমস্যায় না পড়েন?
অবসরের সময় সামনে। ভাবছেন কোথায় টাকা রাখবেন আর কী ভাবে, যাতে আপনার অবসরকালীন আয় নিয়ে সমস্যায় না পড়েন? সেটা করতে গিয়েই মাথায় হাত! কোনটা বাছবেন! এত রকম সুযোগ অথচ ভেবে উঠতে পারছেন না, আপনার জন্য কোনটা উপযোগী! এই সমস্যার সমাধানের রাস্তাগুলো দেখে নেওয়া যাক।
প্রথমেই যে ঝুঁকির কথা ভাববেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কোনটা ছেড়ে কোনটা ধরবেন, তার চিন্তায় আপনার মাথায় হাত। প্রথমে দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন অ্যাসেট ক্লাস বা কী জাতীয় শ্রেণিতে বিনিয়োগ করবেন। আমার মনে হয় আর যেখানেই করুন, ইকুইটি, সোনা আর ডিপোজিট বাদ দেবেন না। ব্যতিক্রম হতেই পারে। কিন্তু কেন এই তিনটি আপনার বিনিয়োগের লক্ষ্যে থাকা উচিত তা সংক্ষেপে দেখা নেওয়া যাক।
শুরু করি ডিপোজিট দিয়ে। বলাই বাহুল্য, নির্দিষ্ট হারে এবং নির্দিষ্ট সময়ে এক বা একাধিক ডিপোজিট দিয়ে আপনি স্থায়ী রোজগার করতে পারবেন, সেইরকম রোজগারের মেয়াদও জানা থাকবে। ভাল ডিপোজিট প্রকল্পে যদি বিনিয়োগ করেন, তা হলে ডিফল্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই ক্রেডিট রেটিং না দেখে ডিপোজিটে লগ্নি করবেন না। এ ক্ষেত্রে পোস্ট অফিস তথা স্মল সেভিংস স্কিম, যেখানে ডিফল্টের সম্ভাবনা নেই, তা নিয়ে বলছি না। তার বদলে কর্পোরেট ডিপোজিটের কথা বলছি। ইদানিং এই ধরনের ডিপোজিট প্রকল্প একশ্রেণির বিনিয়োগকারীর কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য। বিশেষত, হাউজিং ফাইন্যান্স কোম্পানি তথা অন্যান্য ফাইনান্স কোম্পানির প্রকল্প বেশ জনপ্রিয়।
অবসরকালীন সময় প্রতিশ্রুত রিটার্ন যদি চান এবং সেই রিটার্নের মাধ্যমে রোজগারের পন্থা যদি আরও জোরদার করতে চান, তা হলে ডিপোজিট প্রকল্পে একটু বেশি টাকা ঢালতে পারেন। তবে অন্য দুই অ্যাসেটের তুলনায় তা কতটা হবে সেটা সম্পূর্ণ আপনার নিজস্ব পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। এ ব্যাপারে দ্বিধায় থাকলে পেশাদার পরামর্শদাতার সঙ্গে আলোচনা করাই সমীচীন।
ভারতবর্ষের বহু মানুষ আজীবন গোল্ডের উপর আস্থা রেখেছেন, বেশিরভাগ রিটায়ারমেন্ট-মুখী লগ্নিকারীও তার ব্যতিক্রম নন। তবে গোল্ড সাধারণত নিয়মমাফিক এবং দীর্ঘস্থায়ী রোজগার এনে দিতে সর্বদা সক্ষম নয়। এ ছাড়াও ফিজিক্যাল গোল্ডের নানা অসুবিধা রয়েছে। সোনায় বিনিয়োগ করার সময় এই কয়েকটি বিষয় মনে রাখতেই হবে।
তা-ও বলে রাখা ভাল যে, মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে সোনা আপনার প্রধান হাতিয়ারগুলির অন্যতম, তাই রিটায়ারমেন্ট পোর্টফোলিয়োর অন্তর্গত অন্তত একটি ছোট অংশ যেন এই ধাতুটি হয়। ফিজিক্যাল গোল্ড না কিনে আধুনিক বিনিয়োগকারী গোল্ড ফান্ড তথা গোল্ড ইটিএফ কিনতে পারেন। তাতে বেচাকেনার পদ্ধতি অনেক সরল এবং স্বচ্ছ হয়ে যাবে। সাবেকি উপায়ে সোনার ক্রয়বিক্রয় হলে তা সর্বদা সম্ভব না-ও হতে পারে।
অন্য দু’টির মতো ইকুইটিও সাধারণ রিটায়ারমেন্ট পোর্টফোলিওর মধ্যে অবশ্যই রাখতে হবে। সাম্প্রতিক অতীতের ঘটনাপ্রবাহ দেখলে বোঝা যাবে, স্টক মার্কেটে ইনভেস্টমেন্ট একেবারে অপরিহার্য। তাতে ঝুঁকি আছে অবশ্যই। তবে ভাল রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনাও প্রচুর। কোনও অবসরপ্রাপ্তের পক্ষেই সে সম্ভাবনা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়।
অবসর নেওয়ার পরেও এবং নিয়মিত রোজগার (যেমন বেতন) বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও, শুধু বাছাই করা কয়েকটি ইকুইটি হোল্ডিংয়ের জোরে উন্নত রিটার্ন এসেছে— এমন ঘটনা অতীতে বহুবার ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, যদি সময়ের অভাব থাকে বা ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা সীমিত হয়, তা হলে কয়েকটি ভাল ইকুইটি ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা বাঞ্ছনীয়। আগে কিছু ডাইভারসিফাইড ফান্ড বাছুন তার পর সুযোগ বুঝে সেক্টর ফান্ড।
মাঝারি মাপের ঝুঁকি নিতে যিনি রাজি, তিনি তাঁর পোর্টফলিয়োটি এই ভাবে ভাগ করতে পারেন— ৪০ রাখলেন স্টকে, ৪০ রাখলেন ডিপোজিট প্রকল্পে এবং বাকি ২০ শতাংশ রাখলেন সোনায়। যদি সামান্য হলেও ঝুঁকির বহর বাড়াতে পিছপা না হন, তা হলে ৬০ শতাংশ স্টকে রেখে বাকি দুটি ক্ষেত্রে সমান ভাবে (২০ শতাংশ করে প্রতিটিতে) নিজের সম্পদ ছড়িয়ে দিতে পারেন।
তবে একেবারেই যদি রক্ষণশীল হন, অর্থাৎ নির্ভাবনায়, ঝঞ্ঝাটমুক্ত এবং ঝুঁকিহীন জীবনে বিশ্বাস করেন, তা হলে ইকুইটির ভাগ একেবারেই কমিয়ে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শুধু ২০ শতাংশ রাখুন স্টক মার্কেটে। ডিপোজিটে রাখুন বেশি আস্থা, ধরুন ৫০ শতাংশ ভাল রেটিং-যুক্ত ডিপোজিট প্রকল্প নিলেন। বাকিটুকু, অর্থাৎ ৩০ শতাংশের জন্য ভরসা রাখুন গোল্ড ফান্ডের উপর।