প্রতীকী ছবি।
প্রাপ্তবয়স্ক স্তর থেকে ধীরে ধীরে উত্তরণের পথটা কিন্তু খুব সহজ নয়। এই সময়েই নির্ভর করে ভবিষ্যতের ওঠা-পড়া, ভাঙা–গড়া সব কিছুই। জীবনের এই পথ চলার সময় সব থেকে প্রয়োজনীয় বস্তুটি হল অর্থ। সঠিক পদ্ধতিতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ফলে যা ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি করে দেয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক কিংবা পোস্ট অফিসগুলিতে স্থায়ী আমানতের ওপরে সুদের হার কমেছে। এই বিষয়টা সবার কপালেই কমবেশি চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। যদিও এর ফলে সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন প্রবীণরা। কারণ, দেখা গিয়েছে অবসরকালীন সময়ে এই স্থায়ী আমানতের উপরেই ভরসা রাখেন প্রবীণরা।
বলা হয়, সমস্যার সৃষ্টি হলে তার সমাধানের পথও ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে। যেখানে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের রিটার্ন মাথাব্যথা ধরিয়েছে, সেই সময়েই প্রবীণ নাগরিকদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে চালু করা হয়েছে একটি প্রকল্প। যার নাম, প্রধানমন্ত্রী বয়োঃবন্দনা যোজনা। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পটি পরিচালনা করে ভারতীয় জীবন বিমা নিগম। বলা যেতে পারে এটি প্রবীণদের জন্য একটি পেনশন প্রকল্প।
২০২০ সালের ৩১ মার্চ, এই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। পরে এটির মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ করা হয়েছে। অর্থাৎ তিন বছর বৃদ্ধি পেয়েছে এই প্রকল্পের মেয়াদ।
প্রধানমন্ত্রী বয়োঃবন্দনা যোজনার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে যেগুলি জেনে রাখা জরুরি। এই প্রকল্পের মেয়াদ সর্বমোট ১০ বছর। শুধুমাত্র ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরাই এই প্রকল্পে অংশ হতে পারবেন। এই যোজনাটিতে টাকা বিনিয়োগের পর আমানতকারী প্রতি মাসে, তিন মাস অন্তর, ছ’মাস অন্তর অথবা প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সুদের টাকা পেয়ে থাকেন। অন্যান্য স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের তুলনায় এতে সুদের হারও অনেকটা বেশি। সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমের মতো এই প্রকল্পেরও সুদের হার বর্তমানে ৭.৪ শতাংশ।
প্রত্যেকে মাসে আমানতকারীর অ্যাকাউন্টে কত টাকা সুদ ঢুকবে তা নির্ভর করছে প্রকল্পের একদম শুরুতে কত পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে তার ওপরে। কোনও ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন এই যোজনায়। অঙ্কের হিসেবে সেখানে তিনি মাসিক সুদ পাবেন ৯২৫০ টাকা। অন্য দিকে এই যোজনায় ন্যূনতম মাসিক সুদ পাওয়া যায় এক হাজার টাকা।
প্রত্যেক অর্থবর্ষের শুরুতেই সুদের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেয় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। স্বামী ও স্ত্রী একই সঙ্গে এই যোজনাটিতে অংশ গ্রহণ করতে পারেন। সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমের মেয়াদ এটির তুলনায় কম। সে ক্ষেত্রে বেশি টাকা এক সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হলে এই যোজনাটি উপযুক্ত।
এই যোজনাটির গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি হল—
১। এই যোজনার সুবিধা পাবেন শুধুমাত্র প্রবীণ নাগরিকরাই
২। বিনিয়োগ করা অর্থ থেকে প্রাপ্ত সুদের ওপর কর দিতে হবে আমানতকারীকে
৩। এই যোজনায় ন্যূনতম লগ্নি এক লক্ষ ৬১ হাজার ৭৪ টাকা
৪। সর্বমোট জমা করা যাবে ১৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ৯৩৩ টাকা
৫। বার্ষিক সুদের হার পরিবর্তনশীল (বর্তমানে বার্ষিক ৭.৬৬ শতাংশ)
৮। ন্যূনতম বয়স ৬০ বছর হলেও প্রকল্পে অন্তর্গত হওয়ার জন্য বয়সের কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই
৯। আমানতের সময় ১০ বছর
১০। মেয়াদ ফুরোনোর আগেই কোনও আমানতকারী তাঁর বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে নিতে চাইলে, তাঁকে দুই শতাংশ জরিমানা দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বয়োঃবন্দনা যোজনাটিতে বেশ কয়েকটি সুবিধে রয়েছে। এক বার বিনিয়োগ করলে ১০ বছর পর্যন্ত নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পেনশন হিসেবে আসতে থাকবে। ১০ বছরের মেয়াদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আমানতকারীর মৃত্যু ঘটলে নমিনি পুরো অর্থ পাবেন। আবার ১০ বছরের শেষে আমানতকারী পুরো অর্থই ফেরত পেয়ে যাবেন। কোনও ভাবে সংশ্লিষ্ট আমানতকারী বা তাঁর স্বামী/স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে পলিসি জমা দেওয়ার সুবিধা রয়েছে। লগ্নির তিন বছর বাদে কোনও বিশেষ দরকারে লগ্নির ৭৫ শতাংশ অর্থ ঋণ হিসেবে পাওয়া যেতে পারে।
একটু ভাল করে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে অবসরের পরে সব দিক থেকেই এটি বেশ লাভজনক যোজনা। পাশাপাশি যে হেতু এটি একটি কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প সে হেতু বিনিয়োগ করা অর্থের নিরাপত্তা নিয়েও নিশ্চিত থাকা যায়।