প্রতীকী চিত্র
মনে করুন, আর বছর ২ বাদেই আপনি অবসর নিতে চলেছেন। আজীবন খেটেছেন, অবসরের পর কেমন করে সময় কাটাবেন তা নিয়েও ভেবে রেখেছেন। যা ভাবেননি এবং এখনও হয়তো সম্পূর্ণ ভাবে বুঝে উঠতে পারছেন না, তা হল দীর্ঘায়ু হওয়ার সম্ভাবনা। হ্যাঁ, এই যুগে গড়পড়তা মানুষ বেশি দিন বেঁচে থাকছেন এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নতি হওয়ায় আয়ু সাধারণ ভাবে বেড়ে চলেছে। তবে এ ব্যাপারে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। আপনি সুস্থ দেহে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন, এই কামনা আমরা অবশ্যই করি।
অসুবিধাটা সেখানে নয়। অসুবিধা হয় তখনই, যখন এই দীর্ঘ জীবনে আপনি রিটায়ারমেন্ট সেভিংস নষ্ট করে ফেলেন। অর্থাৎ সোজা কথায়, এই অবসর পরবর্তী অধ্যায়ে এত বেশি দিনই রয়ে গেলেন যে আপনার পুঁজি তথা সঞ্চয় নিঃশেষ হয়ে গেল।
বুঝতেই পারছেন, আমি কী বলতে চাইছি। অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির যেন অবসরোত্তর জীবনেও যথেষ্ট সময় ও ইচ্ছা থাকে বিনিয়োগের ব্যাপারে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, এত সহজেই ছেড়ে দেওয়া চলবে না। সম্ভাব্য দীর্ঘ জীবনের কথা মাথায় রেখে লড়াই আপনাকে জারি রাখতে হবে। ব্যাপারটা গভীর ভাবে ভাবার মতো, কারণ অনেকের মনে হয়তো বৈরাগ্য সাধনের চিন্তা জাঁকিয়ে বসতে চলেছে অবসর গ্রহণের মুখে দাঁড়িয়ে আছেন বলে। উঁহু, তেমন বৈরাগ্য সাধনের সুযোগ হয়তো নাও পেতে পারেন আপনার তথাকথিত ‘গোল্ডেন ইয়ার্স’-এ।
এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের দেশে তথা পৃথিবীতে, সামগ্রিক ভাবে যদি খতিয়ে দেখেন, স্বাস্থ্যের খাতে খরচাপাতি কিন্তু বেশ ঊর্ধ্বমুখী। বেসরকারি হাসপাতালে যদি আপনি যান, তা হলেই চট করে বুঝতে পারবেন, খবরের কাগজে কোভিড-প্রসঙ্গ আর আলাদা ভাবে পড়ার দরকার হবে না। চিকিৎসা চিরকালই ভুগিয়েছে খরচের দিক থেকে ধরলে। প্রসঙ্গত বলে রাখি, শুধু অস্ত্রোপচার বা ওষুধপত্রের ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে তা নয়, স্বাস্থ্যবিমাও আজকাল বেশ মোটা রকমের প্রিমিয়াম দাবি করছে। এবং সেই খাতে দাম বাড়াটাও যে খুব একটা অস্বাভাবিক, তা জোর গলায় বলা যায় না। সোজা বাংলায় বললে, এর জন্য বেশি বরাদ্দ আপনাকে করে যেতেই হবে।
এ তো গেল কেবল একটি দিক। অন্য দিকে, বেশি দিন বাঁচা মানে মূল্যবৃদ্ধির স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী সংসার খরচ বেড়ে চলা। তেল-সাবান, চাল-নুন তো কিনতেই হবে, নয় কি? আপনি অবসরপ্রাপ্ত বলে তো জগতের চাকা থেমে যাবে না, জীবন নিজের গতিতেই ছুটে চলবে।
বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, কাজ থেকে অবসরের পরে মানুষ স্বচ্ছন্দে দশ-বিশ বছর বেঁচে রয়েছেন। এই সময়টুকু অবশ্যই সাবধানে থাকতে হবে- নীরোগ, সুস্থ দেহে অবসরকালীন বছরগুলি কাটানোর বিকল্প আর কিছু নেই। তবে কখনওই বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া চলবে না। ভাল কিছু অ্যাসেট থাকতে হবে, যা থেকে আপনি রোজগার সচল রাখতে পারবেন, এবং কিছু বাজার-সৃষ্ট রিটার্নেরও সন্ধান রাখতে হবে। এই দু’টির সমন্বয়ই একজন অবসরপ্রাপ্ত মানুষের জীবনে একান্ত কাম্য।