গত ১১ জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশের হাপুড়ে এক অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে নেমেই ফাঁপরে পড়ে পুলিশ। তবে প্রায় এক সপ্তাহ পর সেই অপরাধের কিনারা করে পুলিশ। অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করা হয়েছে।
গত ১১ জানুয়ারি সিমভালি থানা এলাকায় নির্মীয়মান গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে সেতুর কাছে ওই অর্ধদগ্ধ দেহটি উদ্ধার হয়েছিল।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মৃতদেহটি দিল্লির এক ব্যবসায়ীর। নিহতের নাম নাসির ওরফে লালু। দিল্লিতে তাঁর কাপড়ের ব্যবসা ছিল।
কিন্তু কেন খুন হতে হয়েছিল নাসিরকে? তদন্তে নেমে আমির এবং ফুরকান নামে নাসিরেরই দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অভিযুক্ত ও নিহত ব্যক্তি একে অপরের পরিচিত ছিলেন। প্রতিশোধ নিতে নাসিরের বন্ধুরা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। ধরা পড়ে অপরাধের কথা কবুল করেন তাঁরা।
তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই উঠে আসে বন্ধুর উপর বন্ধুদের প্রতিশোধের এক অবিশ্বাস্য উপাখ্যান।
পুলিশ জানিয়েছে, ফুরকানের সন্দেহ ছিল নাসির তাঁর ভাই ইরফানকে মুক্তিপণ সংক্রান্ত একটি মামলায় জেলে পাঠিয়েছিলেন। অন্য দিকে আমিরের সন্দেহ ছিল, নাসির তাঁর পিছনেও পুলিশ লাগিয়েছেন।
এর পরেই প্রতিশোধ নিতে নাসিরকে খুনের পরিকল্পনা করে ফেলেন তাঁর বন্ধুদ্বয়। ১০ জানুয়ারি রাত ৮টা নাগাদ কালিয়ার শরিফে নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে নাসিরকে গাড়িতে ওঠান আমির।
অভিযুক্তেরা আগে থেকেই নাসিরকে হত্যা করে দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাই আমিরের স্কুটার থেকে পেট্রল বার করে গাড়িতে রাখা হয়েছিল।
গাড়ি চালাচ্ছিলেন ফুরকান। তাঁর পাশে বসেছিলেন নাসির। আমির ছিলেন পিছনে। যাওয়ার সময় গতিপথ বদলান ফুরকান। গাজ়িয়াবাদের দিকে ছোটাতে থাকেন গাড়ি।
গাড়ি ছিজারসি টোলের কাছে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই আমির পিছন থেকে নাসিরের মাথায় গুলি করেন। এর পর মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে শুরু করেন দু’জন।
গাড়িটি মোরাদাবাদের দিকে ঘুরিয়ে জাতীয় সড়কে পৌঁছন তাঁরা। নির্মীয়মান সেতু দেখতে পেয়ে সেখানেই মৃতদেহ ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
ব্রিজের নীচে পৌঁছে গাড়ি থেকে নাসিরের দেহ বার করেন ফুরকান এবং আমির। নাসিরের পরিচয় গোপন রাখতে তাঁরা তাঁর মুখে এবং সারা শরীরে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। দেহ পুরো পোড়ার অপেক্ষা না করেই তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
পর দিন অর্থাৎ, ১১ জানুয়ারি সকালে নাসিরের দেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তের পর বোঝা যায় নিহতের দেহ পোড়ানোর আগে তাঁকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল। তদন্তে নামে পুলিশ।
ঘন কুয়াশা থাকায় সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষার সময়ে সমস্যায় পড়ে পুলিশ। তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর গ্রেফতার করা হয় ফুরকান এবং আমিরকে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের সময় চাপের মুখে পড়ে অপরাধের কথা স্বীকার করেন তাঁরা।
খুনে ব্যবহৃত বেআইনি পিস্তল এবং এসইউভি গাড়িও উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া আরও একটি পিস্তল এবং কয়েকটি কার্তুজও উদ্ধার করা হয়। দুই অপরাধীকেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাপুরের এসপি জ্ঞানঞ্জয় সিংহ।