ইতিহাস নিয়ে বহু বছর চর্চা করে ফেলেছেন উইলিয়াম। ছবি: সংগৃহীত।
ইতিহাসকে ফিরে দেখা মাঝেমাঝে জরুরি। তবে দায়িত্ববোধও থাকা দরকার। বক্তব্য লেখক উইলিয়াম ডালরিম্পলের।
নতুন বইয়ের কাজ শুরু করেছেন উইলিয়াম। হিন্দু ধর্মের বিদেশযাত্রা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হিন্দু ধর্মের প্রসার নিয়ে কাজ করছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘ইতিহাসকে ফিরে দেখা নিয়ে আমার কোনও আপত্তিই নেই। বরং মাঝেমাঝে সে কাজ হওয়া ভাল। জরুরি। যেমন আমি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইতিহাস নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু এখন যখন অ্যাপল, গুগ্ল, টুইটারের যুগে কোম্পানির ইতিহাস দেখবেন, তার আলাদা মানে বেরোবে।’’ উইলিয়াম বলে চলেন। তাঁর মতে, কোনও বড় সংস্থা যদি কাজ করতে শুরু করে, তা হলে সারা বিশ্বে সাড়া পড়ে। অনেক ধরনের বদল আসে। যেমন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়ে হয়েছিল, এখনও তো তেমনই হচ্ছে। পৃথিবীটা এই সব বড় সংস্থার হাতে পড়ে একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে ইতিহাসের মানেও বদলে যায় বলে মনে করেন উইলিয়াম।
তাই বলে ইতিহাস বানিয়ে দেওয়া যায় না। দিল্লির অলিগলির গল্প থেকে মুগল জমানার ইতিহাস, নানা কিছুই লিখেছেন উইলিয়াম। কিন্তু পুরনো ঘটনাকে ফিরে দেখা আর তা বদলে ফেলার মধ্যে পার্থক্য আছে বলে মনে করেন ‘নাইন লাইভস: ইন সার্চ অফ দ্য সেকরেড ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’, ‘দ্য লাস্ট মুগল, দ্য ফল অফ দ্য ডাইনেস্টি’-র লেখক। ‘‘ইতিহাস-চর্চার প্রধান শর্ত হল মূল কথার উপর ভিত্তি করে গবেষণা করা। রাজনৈতিক ভাবধারার কারণে বয়ে গেলে চলবে না’’, বক্তব্য ঐতিহাসিকের।
দেশভাগের ইতিহাস নিয়েও কথা তোলেন উইলিয়াম। যেমন এককালে শুধু রাজনীতি ছিল ইতিহাস চর্চার বিষয়বস্তু, সময়ের সঙ্গে তা বদলাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে দেশভাগের নানা কাহিনি উঠে আসে। ৭৫ বছর পর যখন ইতিহাসকে ফিরে দেখা হচ্ছে, তত দিনে কত রকমের কথা জানা গিয়েছে। লেখক বলেন, ‘‘ইতিহাস চর্চায় নানা রকম কাহিনির জায়গা আছে। তবে নিরপেক্ষ থাকা জরুরি। না হলেই মুশকিল। সকলের কথা তো শুনতে হবে। বলতে হবে।’’
কিন্তু সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হওয়া কি সহজ কথা, না কি আদৌ হওয়া যায়?
ইতিহাস নিয়ে বহু বছর চর্চা করে ফেলেছেন উইলিয়াম। তিনি মানেন নিরপেক্ষ হওয়া কঠিন। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘নিরপেক্ষ হওয়ার চেষ্টা করা কঠিন নয়। অন্তত চেষ্টা তো করতে হবে। সকলের নিজের নিজের পছন্দ-অপছন্দ থাকবে। কিন্তু সে সব বাদ দিতেও তো শিখতে হবে।’’ ভারতের ইতিহাস লিখতে গিয়ে কি তা বলে অসুবিধা হয়নি উইলিয়ামের, তা কিন্তু নয়। বেশ সমস্যায় পড়েছেন মাঝেমধ্যে। ‘‘তবে সাদা আর কালোর মাঝে যে অনেকটা ধূসর জগৎ আছে, ইতিহাস চর্চার সময়ে তা খেয়াল রাখতেই হবে। আমি যে হেতু ইংল্যান্ডে জন্মাইনি, সেটা একটা সুবিধা ছিল। আমি স্কটল্যান্ডের লোক। ফলে আমাদেরও ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে,’’ বলেন ইতিহাসবিদ। তাই হয়তো ভারতের ইতিহাস লিখতে গিয়ে কিছুটা নিরপেক্ষ থাকতে পেরেছেন বলে মনে করেন ‘হোয়াইট মুগলস’-এর লেখক।