জয়পুরের এই সাহিত্য উৎসবে দেশ-বিদেশের মানুষজন আসেন। ঊষার কথা শুনতে হাজির হয়েছিলেন সকলেই। নিজস্ব চিত্র।
দেশের যে প্রান্তেই সাহিত্য উৎসব হোক না কেন, কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ থাকে। জয়পুর থেকে কেরল, বাঙালি নাম এখনও সর্বত্রই দেখা যায়। তবে এ বারের ‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’ অন্য নজির গড়ল। কলকাতা ঝড় তুলল এমন এক জনের মাধ্যমে, যিনি সচরাচর কোনও সাহিত্য সভায় দেখা দেন না।
কলকাতার ঊষা উত্থুপের গানের ছন্দে সাহিত্য উৎসবের চিরাচিরত গাম্ভীর্যে বিরতি ঘটল। সাহিত্যিক থেকে সমালোচক, ছাত্র থেকে শিক্ষক— পা মেলালেন ঊষার গানের ছন্দে।
সঙ্গীতশিল্পী ঊষার জীবনী লেখা হয়েছে হিন্দিতে। লেখক বিকাশ কুমার ঝার কন্যা সৃষ্টি ঝা সেই বই অনুবাদ করেছেন। ইংরেজিতে গায়িকার জীবনীর নাম হয়েছে ‘দ্য কুইন অফ ইন্ডিয়ান পপ: দ্য অথরাইজড বায়োগ্রাফি অব ঊষা উত্থুপ’। সেই বই নিয়ে বৃহস্পতিবার সাহিত্য উৎসবের মঞ্চে সৃষ্টির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন ঊষা। বইয়ে ধরা রয়েছে প্রবীণ গায়িকার জীবনের নানা ধাপের কথা। চেন্নাইতে স্কুলে যাওয়া, মুম্বইয়ে গান, কলকাতায় বসবাস— নানা সময়ের নানা গল্প উঠে এল এ দিনের আলোচনায়। গায়িকা জানালেন, সকলকে নিয়ে চলতে শেখার পাঠ পেয়েছেন স্কুলবেলা থেকেই। মুসলিম পাড়ায় বড় হয়েছেন, গিয়েছেন খ্রিস্টান স্কুলে। সর্ব ধরনের ভাবনা, মতামত, যাপনকে সম্মান করতে শিখেছেন। কখনও মজা করে বললেন, কখনও একটু গম্ভীর ভাবে তেমনই নানা কথা বললেন গায়িকা। তবে গান নিয়েই কাটিয়েছেন গত ৫৩ বছর। ফলে কিছু ক্ষণ আলোচনার পরেই ঊষা বলে উঠলেন, ‘‘অনেক কথা হল, এ বার একটু গান হোক? গান ছাড়া কি চলে?’’
উৎসাহ দর্শকের মধ্যেও। জয়পুরের এই সাহিত্য উৎসবে দেশ-বিদেশের মানুষজন আসেন। দেশের নানা প্রান্তের শ্রোতা যেমন আছেন, বিদেশিদের সংখ্যাও কম নয়। ঊষার কথা শুনতে হাজির হয়েছিলেন সকলেই। বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি ভিড় জমেছিল তাঁরই আলোচনার সময়েই। মান রাখলেন ভিড়ের। আন্তর্জাতিক উৎসবে গান ধরলেন ইংরেজিতে। জেমস্ বন্ডের ছবি ‘স্কাইফল’-এর গান ধরলেন কলকাতাবাসী গায়িকা। শীতের জয়পুরে পড়ন্ত বিকেলে আরও যেন ভিড় বাড়ল। পর পর তিনটি গান। শেষে ‘ডার্লিং’। তত ক্ষণে পারদ বেড়ে তপ্ত। প্রবীণার চোখে জল। বললেন, ‘‘আমার কান্না পাচ্ছে। আপনারা দারুণ!’’ কুড়ি থেকে ষাট, তত ক্ষণে তাঁর গানের তালে পা মিলিয়েছেন সকলেই।