COVID 19

Covid Hero: বিজ্ঞানে বিশ্বাস আছে, তাই রিকশায় কোভিড রোগীদের নিয়ে ছুটছেন বিষ্ণু

কোভিডের সময়ে অনেককেই নাকি সাহায্য করেছেন আপনি? কী ভাবে? প্রশ্ন শুনে বিষ্ণু খানিক হকচকিয়ে গেলেন!

Advertisement

সুমন রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২১ ০৯:০৬
Share:

বিষ্ণু ছাটুই। নিজস্ব চিত্র

বক্তা ১: কোভিডের সময়ে মানুষের সাহায্য করছেন— এ রকম কাউকে খুঁজছেন? তা হলে বিষ্ণুর নম্বরটা রাখুন। বিষ্ণু নামে ওকে অবশ্য কেউ চিনবেন না, সবাই কালু বলে ডাকেন।

Advertisement

বক্তা ২: কালুকে এখানকার সবাই চেনেন। কেউ বিপদে পড়লেই কালুকে ফোন করেন। রিকশা নিয়ে সে-ও হাজির!

বক্তা ৩: কোভিডের সময়ে কালুর মতো করে ক’জন আর এই এলাকার গরিবদের পাশে দাঁড়িয়েছে! ও হল, যাকে বলে ‘লোকাল হিরো’!

Advertisement

৩ বক্তাই দক্ষিণ কলকাতার ব্রহ্মপুর এলাকার বাসিন্দা। করোনা পরিস্থিতি যে ৩ জনই কোনও না কোনও ভাবে বিষ্ণু ছাটুইয়ের দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। বিষ্ণু পেশায় রিকশাচালক। বয়স ২৯ বছর। ফোন নম্বর জোগাড় করে যখন তাঁকে ধরা গেল, তখন সন্ধ্যা। বিষ্ণু ইয়াস বিধ্বস্ত সুন্দরবনে। এলাকার কয়েক জন সমাজসেবীর সঙ্গে খাবারদাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে গিয়েছেন সেখানে। ফোনের উল্টো দিকে তীব্র হাওয়ার শব্দ। তার মধ্যেই ভাঙা ভাঙা স্বরে কথা!

কোভিডের সময়ে অনেককেই নাকি সাহায্য করেছেন আপনি? কী ভাবে? প্রশ্ন শুনে বিষ্ণু খানিক হকচকিয়ে গেলেন! ‘‘কোথায়! ওই ক’জনকে বাজার করে দিতাম। আর কেউ কেউ বললে ডাক্তারখানায় নিয়ে যেতাম। আর দরকারে হাসপাতালে পৌঁছে দিতাম,’’ একটু ভেবে তাঁর জবাব। যদিও স্থানীয় মানুষ এই ‘স্বল্প’ কথায় বিষ্ণু-‘গুণগান’ শেষ করতে রাজি নন।

স্থানীয় রায় পরিবার যেমন। চার সদস্যের পরিবার। বাবা-মা-মেয়ে-জামাই। চলতি বছরে পরিবারের চার জনই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাবা-মা’কে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। নিজেরা সংক্রমিত বলে মেয়ে-জামাই সে কাজ করতে পারছিলেন না। অতএব কে? কেন কালু! পাড়ার এক অধ্যাপককে সঙ্গে নিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনিই গেলেন ওই দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে এক এক করে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে আসতে। এক প্রকার কোলে করেই তাঁদের শুইয়ে দিয়ে এলেন হাসপাতালের ট্রলিতে।

কোভিড নিয়ে ভয় করে না? যদি আপনারও হয়? বাড়িতে তো স্ত্রী, সন্তান আছে। ‘‘দেখুন, আমার বিজ্ঞানে বিশ্বাস আছে। কিন্তু বিজ্ঞান কি বলেছে কোভিড রোগীদের ঘৃণা করতে? আমি মাস্ক পরে, গ্লাভস পরে ওঁদের ধরি। রিকশায় বসাই। তার পরে নিয়ে যাই। রিকশাও স্যানিটাইজ করি,’’ সুন্দরবনের হাওয়ার মধ্যে ফোনে বিষ্ণুর জবাব।

স্থানীয়েরা বলেন, এলাকা আর আশপাশের অঞ্চল মিলিয়ে নিদেনপক্ষে ৩০০ আক্রান্তকে তো কালু হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেনই। তাঁদের বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত বা তিন কূলে কেউ নেই! দুশো-তিনশোর হিসেব অবশ্য বিষ্ণু ছাটুইয়ের কাছে নেই। বললেন, ‘‘বছর খানেক আগে বাবা যখন হাসপাতালে মারা গেল, তখন মনে হয়েছিল, অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে হলে, যত কষ্টই হোক না কেন— ঠিক দেব। কেউ ডাকলে তাই দিয়ে আসি।’’

আর রোজগারপাতি? ‘‘কাজের অভাব হয় না। এলাকার মধ্যে সব সময়ই কেউ না কেউ রিক্সা ডাকছেনই। খাওয়া নিয়েও চিন্তা নেই। বাড়ির সবার ভাত জুটেই যায়। যদি কোনও দিন না জোটে? জানি, কারও একটা দরজা ঠকঠক করে যদি বলি দু’মুঠো ভাত দিতে, দিয়েই দেবেন,’’ সুন্দরবন থেকে ফেরার গাড়িতে উঠতে উঠতে বললেন কালু। ব্রহ্মপুরের বিষ্ণু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement