সন্দীপ জয়পুরিয়া। ফাইল চিত্র।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বন্ধ রাখা হচ্ছে অফিস, দোকান। কম হচ্ছে ব্যবসা। আর তার সঙ্গেই কমছে কাজের সুযোগ। গত দেড় বছরে কত মানুষ যে কাজ হারিয়েছেন, তার ঠিক হিসেব পাওয়াও কঠিন। অতিমারির এই সঙ্কটের সময়ে তেমনই কিছু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। সঙ্গে বন্ধুরাও।
এলাকায় অনেক বাড়িতে একমাত্র রোজগেরে মানুষটিরও কাজ নেই এ সময়ে। নিজের দফতরের কর্মীদের কাছে সে খবর শোনেন ব্যবসায়ী সন্দীপ জয়পুরিয়া। তার পরেই ঠিক করেন, যথা সম্ভব সাহায্য করবেন এমন কিছু পরিবারকে। কাজ শুরু হয় নিজেদের এলাকা থেকেই। আনন্দপুরে একটি গ্যারাজ চালান তিনি। ওই এলাকায় রোজগারহীন কিছু বাড়িতে গিয়ে রেশন পৌঁছতে শুরু করেন সন্দীপ। যার যখন যেমন প্রয়োজন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা করছেন তিনি। চাল-ডাল-আটা-তেল-আলু-পেঁয়াজ দিয়ে আসছেন সে সব বাড়িতে। সব আছে কি না, মাঝেমাঝে খোঁজ নিয়ে আসেন। কারও বাড়িতে ওষুধ দরকার হলে, তা-ও দেন।
এই উদ্যোগে হাত মিলিয়েছেন বন্ধুরাও। সন্দীপ বলেন, ‘‘আমরা বন্ধুরা মিলে নিজেদের টাকাতেই কাজ করছি। বাইরের কারও কাছে সাহায্য চাইছি না।’’ বন্ধুরা যে যেমন পারছেন, সন্দীপকে টাকা পাঠাচ্ছেন। তাঁদেরই কেউ কেউ চলে আসছেন রেশন পৌঁছনোর কাজে হাত লাগাতেও। বন্ধুদরে মধ্যে কারও রয়েছে ওষুধের ব্যবসা। তাঁদের থেকে প্রযোজনীয় ওষুধও মিলছে। নিজেদের এই উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘কেয়ার ফর কলকাতা’। এখন আর শুধু আনন্দপুর নয়। পার্ক সার্কাসের কিছু বাড়িতেও ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছেন ওঁরা। খোঁজ রাখছেন, আর যাঁর যেখানে প্রয়োজন, যেন যেতে পারেন। সন্দীপের বক্তব্য, ‘‘সাহায্য নিতে আমাদের কাছে কেউ আসুন, এমনটা চাই না। তাঁদের অর্থকষ্ট রয়েছে বলে কি সম্মান নেই? আমরা যা পারছি, নিজেরাই ওঁদের বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসছি।’’
আগামী দিনে আরও কিছু কাজ করার ভাবনা আছে ওঁদের। থেমে যেতে যেন না হয়, এটাই ভাবনা। নিজেরাই যোগাযোগ রাখছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে। প্রয়োজন যেখানে বেশি, সে সব জায়গায় এগিয়ে যাবেন এর পরে। অনেক বাড়িতে গিয়ে দেখেছেন শিশুদের খাওয়ানোর মতোও রোজগার করতে পারছেন না বাবা-মা। আপাতত নিয়ম করেই সাহায্য করছেন ওঁদের। শিশুদের যাতে কষ্ট না হয়, সে বিষয়ে দীর্ঘ মেয়াদি কিছু ব্যবস্থা করার ইচ্ছাও আছে সন্দীপ ও তাঁর বন্ধুদের।
তবে প্রচারের আলোয় থাকতে চান না এই যুবক। সংবাদমাধ্যমে নিজের ছবি দিতে অস্বস্তি হয়। বলছেন, ‘‘এমন বড় কিছু তো করছি না, যে ছবি দেখাব!’’