অন্তরালে রয়েছে হিন্দুত্বের দুই ‘পোস্টারবয়’-এর প্রতিযোগিতা। চার্লস ডিকেন্স জীবিত থাকলে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে আরও একবার ‘আ টেল অব টু সিটিজ’ লিখতে পারতেন। কারণ, প্রতিযোগিতা দুই শহরের। সড়কপথে যাদের দূরত্ব ২২০ কিলোমিটার। যারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত আছে দু’টি জাতীয় সড়কের মাধ্যমে।
ভবিষ্যতে কোন শহর হবে হিন্দুদের পীঠস্থান? বারাণসী না অযোধ্যা? বিশ্বের দরবারে কে হবেন ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’? বারাণসীর মোদী না অযোধ্যার যোগী? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ভোটের উত্তরপ্রদেশে বিভিন্ন শহর ছয়লাপ তাঁদের যুগল ছবি সংবলিত পোস্টার আর হোর্ডিংয়ে। প্রতিটির সঙ্গে দু’লাইনের অন্ত্যমিলযুক্ত পংক্তি। তার সঙ্গে ধরতাই দিয়ে তৃতীয় এবং অনিবার্য লাইন, ‘ইউপি ফির মাঙ্গে ভাজপা সরকার।’
যুগল হলেন মোদী-যোগী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তা হলে উত্তরপ্রদেশ কার নামে ভোট চাইছে? জবাব হল, দলের নামে। পাশাপাশিই, দলের দুই ‘হিন্দু মুখ’-কে পোস্টারে, হোর্ডিংয়ে সারা রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে দিয়ে। প্রত্যাশিত ভাবেই মোদীর ছবি মাপে সামান্য বড় যোগীর তুলনায়।
সে সব ঠিকই আছে। কিন্তু এর অন্তরালে রয়েছে হিন্দুত্বের দুই ‘পোস্টারবয়’-এর প্রতিযোগিতাও। উত্তরপ্রদেশ বিজেপি-র নেতাদের একাংশ সে কথা একেবারে উড়িয়েও দিতে চাইছেন না। চার্লস ডিকেন্স জীবিত থাকলে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে আরও একবার ‘আ টেল অব টু সিটিজ’ লিখতে পারতেন। কারণ, প্রতিযোগিতা দুই শহরের। সড়কপথে যাদের দূরত্ব ২২০ কিলোমিটার। যারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত আছে দু’টি জাতীয় সড়কের মাধ্যমে।
দলের দুই ‘হিন্দু মুখ’-কে পোস্টারে, হোর্ডিংয়ে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। ছবি: পিটিআই।
কিন্তু সে তো ভৌগোলিক মানচিত্রে। এই দুই শহর তার চেয়েও পরস্পরের সঙ্গে অনেক বেশি যুক্ত হিন্দুত্বের ভাবধারায়। আর তাদের দুই ‘ম্যাসকট’-এ। বারাণসীতে মোদী। অযোধ্যায় যোগী।
যুক্ত। আবার বিযুক্তও বটে। যুক্ত হিন্দুত্বে। বিযুক্ত সেই হিন্দুত্বেরই প্রতিযোগিতায়। ভবিষ্যতে কোন শহর হবে হিন্দুদের পীঠস্থান? বারাণসী না অযোধ্যা? বিশ্বের দরবারে কে হবেন ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’? বারাণসীর মোদী না অযোধ্যার যোগী? কালক্রমে অযোধ্যা কি ‘উন্নততর বারাণসী’ হবে? অযোধ্যার উন্নয়নে ভর করে হিন্দুত্বের রাজনীতিতে বয়ঃকনিষ্ঠ যোগী কি কালক্রমে মোদীকে পিছনে ফেলে প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার হবেন?
বস্তুত, অসমর্থিত সূত্রের খবর, গোরক্ষপুরের বদলে যোগী অযোধ্যা থেকে বিধানসভা ভোটে লড়তে চেয়েছিলেন। বাদ সেধেছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব (অনেকের মতে মোদী স্বয়ং)। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে সে কথা কেউই স্বীকার করছেন না। বরং বলছেন, ‘‘যোগী পাঁচবার গোরক্ষপুর লোকসভা থেকে সাংসদ হয়েছিলেন। এই এলাকা তাঁর একেবারে নিজস্ব। তিনি কেন জীবনের প্রথম বিধানসভা ভোট অন্য কেন্দ্র থেকে লড়তে যাবেন!’’
অযোধ্যা থেকেই বিধানসভা ভোটে লড়তে চেয়েছিলেন যোগী। ছবি: পিটিআই।
কিন্তু প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে হিন্দুত্বের দুই বিগ্রহের। প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বারাণসী আর অযোধ্যার।
বারাণসী আধ্যাত্মিক। বারাণসী রহস্যময়। বারাণসী পবিত্র। বারাণসী ভারতীয় সভ্যতার সনাতনী অভিজ্ঞান। কিন্তু এই প্রথম এই শহর কোনও প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী কেন্দ্র। এই প্রথম বারাণসী সেই ‘মর্যাদা’ পেল। ‘মর্যাদা’ লিখলাম। কারণ, এ দেশে প্রধানমন্ত্রীই হোন বা মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর কেন্দ্রটি আলোকবৃত্তে থাকে শুধুমাত্র ভোটের সময়েই। দু’টি ভোটের মধ্যবর্তী সময়ে আর কেউ তার খেয়াল রাখে না।
কিন্তু বারাণসী এবং মোদী সেই নিয়মের ব্যতিক্রম। কারণ, মোদী চান বারাণসীর উপর (প্রকারান্তরে, তাঁর উপর) স্পটলাইট ফেলতে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরঁ এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে বারাণসী নিয়ে এসে গঙ্গায় নৌকাবিহার করিয়েছেন মোদী। সাড়ম্বরে গঙ্গা আরতি দেখিয়েছেন। সারা বিশ্বের স্পটলাইটের তলায় বারাণসীকে নিয়ে ফেলেছেন সাংসদ মোদী। আশ্চর্য নয় যে, তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘‘আমার উপর কাশীর অধিকার রয়েছে। আমি কাশীর ভালবাসায় বন্দি।’’
মোদী চান বারাণসীর উপর (প্রকারান্তরে, তাঁর উপর) স্পটলাইট ফেলতে। ছবি: পিটিআই।
নিজের ৬৮তম জন্মদিনে মোদী গিয়েছিলেন বারাণসীতে। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আপনারা আমায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু আমি সাংসদ হিসেবে কী করেছি, তার রিপোর্ট কার্ড আপনাদের দেওয়া আমার কর্তব্য। আপনারাই আমার হাইকম্যান্ড। আপনারাই আমার প্রভু। আমি আপনাদের সেবক। বারাণসীর জন্য যে অর্থ এবং সময় আমি ব্যয় করেছি, তার হিসেব আপনাদের দিতে আমি দায়বদ্ধ।’’
যে হিসেব বলছে, মোদী বারাণসীতে নতুন হাসপাতাল উদ্বোধন করেছেন। বারাণসীর চারদিকে রিং রোডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। বস্তুত, বারাণসীর পরিকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন মোদী। বারাণসী-প্রয়াগরাজের মধ্যে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ককে ছ’লেনের করার কাজ শুরু হয়েছে। বারাণসী-গাজিপুর রাস্তার উপর তিন লেনের উড়ালপুল উদ্বোধন করা হয়েছে। পুরোপুরি ‘কর্পোরেট’ ট্রেন ‘কাশী মহাকাল এক্সপ্রেস’ চালু হয়েছে তিনটি জ্যোতির্লিঙ্গ তীর্থ— বারাণসী, উজ্জয়িন এবং ওঙ্কারেশ্বরকে জুড়তে।
বারাণসী বিমানবন্দরকে বাস্তবিকই ‘আন্তর্জাতিক’ মানের করা হয়েছে।
বারাণসীর পরিকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন মোদী। ছবি: পিটিআই।
২০১৪ সাল থেকে বারাণসীর সাংসদ মোদী। গত প্রায় আট বছরে গঙ্গার ঘাটগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। তবে ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের ফলে গঙ্গার জল মিনারেল ওয়াটারের মতো হয়ে গিয়েছে বলে যাঁরা দাবি করছিলেন, তাঁদের সঙ্গে একমত হওয়া গেল না। গঙ্গার ঘাটে কাপড়-কাচা, মস্তকমুণ্ডনের পর প্লাস্টিকের প্যাকেটে বর্জ্য বিসর্জন, ফুলমালার জঞ্জাল ফেলা— সবই বহাল। মাঝেমধ্যে কিছু কর্মী ঘাটের কাছের জঞ্জাল ছাঁকনি দিয়ে তুলে আনছেন বটে। কিন্তু মাঝগঙ্গায় গবাদি পশুর লাশ ভেসে গেলে তিনি আর কী করবেন! বস্তুত, প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রে এখনও পর্যন্ত যা যা ‘উন্নতি’ হয়েছে, সবই মন্দির এবং তৎসংলগ্ন এলাকায়। বিশ্বনাথের মন্দির থেকে গঙ্গা পর্যন্ত যাওয়ার চওড়া করিডর তৈরি হয়েছে। মন্দির চত্বর নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। পাম্পিং স্টেশন, নর্দমা তৈরি করা হয়েছে। শহরের ছ’টি প্রান্তে বিশাল এলইডি স্ক্রিন লাগানো হয়েছে। যেখানে প্রতি সন্ধ্যার গঙ্গা আরতি দেখানো হয়। কিন্তু শহর এখনও যানজটময়। ট্র্যাফিক পুলিশকে কেউ মানে না। যে যার ইচ্ছেমতো যানবাহন নিয়ে যাতায়াত করে।
এবং বারাণসী আর ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’-এর বারাণসী নেই। গভীর রাতে বারাণসীর সরু সরু গলিতে চলতে চলতে ‘অলিগলি চলি রাম, ফুটপাথে ধুমধাম, কালি দিয়ে চুনকাম’ লাইনগুলোকে বহু দূরবর্তী গ্রহের বলে মনে হয়েছে। কারণ, বারাণসীর প্রতিটি গলি এলইডি আলোর বন্যায় ভাসছে।
বারাণসীর গলির সেই রহস্যময়তাটা চলে গিয়েছে। কিন্তু নাগরিক পরিষেবার নিরিখে বারাণসী শহর একধাপ জাতে উঠেছে। ছবি: পিটিআই।
বারাণসীর গলির গলি তস্য গলির রহস্যময়তাটা চলে গিয়েছে। কিন্তু নাগরিক পরিষেবার নিরিখে শহরটা একধাপ জাতে উঠেছে। সেটা দিয়ে কি যোগীর অযোধ্যার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যাবে? যেখানে আস্ত একটা শহর গড়ে উঠছে?
রামমন্দিরের ভিত্তি স্থাপনের কাজ শেষ। এর পর শুরু হবে মূল মন্দিরের কাজ। ১১০ একরের চত্বর। যেখানে রামমন্দির ছাড়া আরও ছ’টি মন্দির থাকবে সূর্য, গণেশ, শিব, দুর্গা, বিষ্ণু এবং ব্রহ্মার। কারণ, হিন্দু ধর্মে বলে, রামের সঙ্গে এই ছয় দেবতার পুজো করাও জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ। সেই ‘মন্দির কমপ্লেক্স’-এ থাকবে একটি জাদুঘর, একটি গবেষণাগার এবং একটি প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্রও। এমনই জানিয়েছেন ‘রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট’-এর সম্পাদক সম্পত রাই।
২০২০ সালের ৫ অগস্ট রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। মন্দির সম্পূর্ণ করে সেটি ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়ার কথা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে (মনে রাখুন, ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে লোকসভা ভোট)। খরচ ধরা হয়েছে ৯০০ থেকে ১,০০০ কোটি টাকা।
ভবিষ্যতের অযোধ্যার সঙ্গে বারণসী কি আর পাল্লা দিতে পারবে? শুধু রামমন্দিরই নয়, মন্দিরকে কেন্দ্র করে গোটা অযোধ্যার খোলনলচে বদলে ফেলার কাজে চলছে। অযোধ্যার অত্যাধুনিক রেল স্টেশনও গড়ে তোলা হবে রামমন্দিরের আদলে। গ্রাফিক: রাম জন্মভূমি ট্রাস্ট।
কিন্তু এ তো গেল মন্দির। সেই মন্দিরকে কেন্দ্র করে যোগী সরকার গোটা অযোধ্যার খোলনলচে বদলে ফেলার কাজে মন দিয়েছে। যেখান থেকে এক মন্দির শহর বারাণসীর সঙ্গে শুরু হয়েছে এই মন্দির শহরের ‘প্রতিযোগিতা’।
অযোধ্যার জন্য দু’টি পরিকল্পনা করেছেন যোগী। এক, ‘ভিশন ডকুমেন্ট’ এবং দুই, ‘মাস্টার প্ল্যান-২০৩১’। ‘মাস্টার প্ল্যান’ অনুযায়ী অযোধ্যা উন্নয়ন পরিষদ তাদের অন্তর্গত এলাকার উন্নয়ন করবে। অন্যটি অযোধ্যার সন্নিহিত এলাকাগুলির উন্নয়ন করবে।
ঢেলে সাজানো হচ্ছে অযোধ্যা স্টেশন। এক লক্ষ বর্গফুট মাপের স্টেশন হবে রামমন্দিরের আদলেই। বস্তুত, রামমন্দিরে ব্যবহারের জন্য রাজস্থান থেকে আনীত পাথর দিয়েই। দ্বিতল স্টেশনে থাকবে মোট ছ’টি লিফ্ট, একটি এসকালেটর এবং ফুড প্লাজা। ধর্মসংক্রান্ত টুকিটাকি কেনার জন্য দোকানও থাকবে। আগত ভক্তদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য থাকবে ‘রিটায়ারিং রুম’ এবং ‘ক্লোকরুম’ থাকবে। এমন জমকালো স্টেশন বানানোর খরচ ১২৬ কোটি টাকা। প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০০ কোটি। পরে আরও ২৬ কোটি টাকা বেড়েছে। সেই পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে মোট ১৫.৯৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করেছে যোগী সরকার। এখন শুধু ফৈজাবাদ স্টেশনে (যা ‘অযোধ্যা ক্যান্ট’ স্টেশন বলে পরিচিত) সমস্ত এক্সপ্রেস ট্রেন থামে। অযোধ্যা স্টেশনে থামে মাত্র কয়েকটি। সেই ছবি বদলে যাবে। এখন অযোধ্যা স্টেশন দিয়ে দৈনিক ৩,০০০ লোক যাতায়াত করেন। সেই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। অর্থাৎ। ফৈজাবাদের চেয়ে গুরুত্ব বাড়বে অযোধ্যার। বস্তুত, অযোধ্যা এবং ফৈজাবাদ যমজ শহর হলেও নগরায়নের যা পরিকল্পনা, তাতে অযোধ্যা ফৈজাবাদকে গিলে নেবে বলেই মনে হচ্ছে। ৬৫ কিলোমিটার লম্বা রিং রোড অযোধ্যাকে ঘিরে।
গত পাঁচ বছরে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে রয়েছে ভারতীয় রাজনীতির বিভিন্ন মাইলফলক। নির্বাচনের আবহে আনন্দবাজার অনলাইন সেই সমস্ত দিকচিহ্ন ছুঁয়ে দেখার যাত্রায় ছিল। এটি ত্রয়োদশ এবং শেষ কিস্তি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পাশাপাশি ১,২০০ একর জমিতে তৈরি হবে বৈদিক টাউনশিপ। পৃথিবীর প্রথম ‘স্মার্ট ভেদিক সিটি’। যেখানে দেশের বিভিন্ন রাজ্য এবং দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের ভবন থাকবে। অনেকটা নয়াদিল্লির চাণক্যপুরী এলাকার মতো। সংশ্লিষ্ট রাজ্য এবং দেশের পর্যটকেরা এসে সেখানে উঠতে পারবেন। আশ্রম থাকবে। পাঁচতারা হোটেল থাকবে। টাউনশিপের একেবারে মাঝখানে থাকবে ‘ব্রহ্মস্থান’। সেটি হবে রামমন্দিরের চূড়ার আদলে।
সরযূ নদীর দু’পার ইতিমধ্যেই বাঁধিয়ে ফেলেছেন যোগী। বারাণসীতে গঙ্গা আরতির মতোই অযোধ্যায় সরয়ূ তীরেও রোজ সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে ‘রাম কৈ পৈড়ি’ হয় হরিদ্বারের ‘হর কৈ পৈড়ি’র মতো। সরযূ নদীতেও নৌকাবিহার করা যাবে। বারাণসীর মতো। গুপ্তারঘাট (যেখানে রামচন্দ্রের ‘জলসমাধি’ হয়েছিল) থেকে জানকীঘাট পর্যন্ত এলাকার সৌন্দর্যায়ন হবে। শহরে থাকবে ‘রাম স্মৃতিবন’। যাতে রামের ১৪ বছরের বনবাসের কাহিনি থাকবে। পর্যটকেরা পায়ে হেঁটে সেখানে ঘুরতে পারবেন।
বাকি ছিল বারাণসীর মতো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তা-ও তৈরি করছেন যোগী। নাম হবে ‘মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’। বিমানবন্দরের জমি অধিগ্রহণ করতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৩,০০০ কোটি টাকা। সিআরপিএফ তাদের তিন একর জমি ছেড়ে দিয়েছে নতুন টার্মিনাল বানানোর জন্য। প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে অযোধ্যায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণকে ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
অযোধ্যার উন্নয়নে ভর করে হিন্দুত্বের রাজনীতিতে বয়ঃকনিষ্ঠ যোগী কি কালক্রমে মোদীকে পিছনে ফেলে প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার হবেন? ছবি: পিটিআই।
অযোধ্যামুখী সমস্ত রাস্তা ছ’লেন বা চারলেনের হবে। শহরে ঢোকার মুখে থাকবে রামমন্দিরের আদলে এবং নকশায় অনুপ্রাণিত বিশাল বিশাল তোরণ।
অযোধ্যার বিজেপি নেতারা ভক্তিভরে বলছিলেন, যোগী আদিত্যনাথের ‘বিচারধারা’ হল অযোধ্যাকে বিশ্বের দরবারে আধ্যাত্মিক, ধর্মীয় এবং পর্যটন-কেন্দ্রিক শহর হিসেবে তুলে ধরা। তাঁদের কথায়, ‘‘এ এক বিচারধারার উত্থান। এক নতুন নেতার জন্ম হয়েছে। সেই বিচারধারার উপর নির্ভর করেই যোগী’জি ২০২৯ সালের প্রধানমন্ত্রী হবেন।’’
শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল কোন তিনটি লক্ষ্য রেখে অযোধ্যা শহর তৈরি করার কথা বলছেন যোগী-ভক্তেরা— ‘অতীত কি ভব্যতা, বর্তমান কি আবশ্যকতা, ভবিষ্য কি তৈয়ারি’। অর্থাৎ অতীতের গরিমা, বর্তমানের প্রয়োজনীয়তা এবং ভবিষ্যতের প্রস্তুতি।
মনে হল, আসল লাইন শেষেরটাই। ‘ভবিষ্য কি তৈয়ারি’। ভবিষ্যতের প্রস্তুতি। লখনউয়ের ৫, কালিদাস মার্গ থেকে ভবিষ্যতে নয়াদিল্লির ৭, লোককল্যাণ মার্গে পৌঁছনোর প্রস্তুতি। (শেষ)