Uttar Pradesh Assembly Election 2022

UP Election and Hathras: ক্ষমতায় যারাই আসুক, বিচার চাই, ওদের ফাঁসি চাই, বলছে হাথরসের নির্যাতিতার পরিবার

দালানের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া। যেমন দু’দেশের সীমান্তের মাঝ বরাবর থাকে। এই দেশের উঠোন থেকে ভিতরবাগে যেতে গেলে পেরিয়ে যেতে হয় ডোরফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর। এই দেশের হাতায়, ছাদে, এপাশে-ওপাশে নিরাপত্তাবাহিনীর তাঁবু। ক্যানভাস আর তার্পোলিনের তৈরি। যেমন দেখা যায় সেনাছাউনিতে।

Advertisement

অনিন্দ্য জানা

হাথরস শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:৫৬
Share:

বাড়ির অদূরেই গণধর্ষণের পর মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। বাড়ির অদূরেই মৃত্যুর পর নির্যাতিতার দেহ পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আলুর ক্ষেতে নির্ভয়ে চরে বেড়াচ্ছে ময়ূর। ময়ূর? জাতীয় পাখি? একেবারেই তাই! ময়ূর। তাও একটা-দুটো নয়। অন্তত গোটা পাঁচেক। পেখম-টেখম তুলছে না। কিন্তু চারপাশ সম্পর্কে খুবই হেলাফেলা নিয়ে ঘুরছে দিব্যি।

Advertisement

মাঝখানে একটা সরু ইটের রাস্তা। সরু হলেও গাড়ি চলাচল করতে পারে। রাস্তার ওপারে আলুর ক্ষেতে ময়ূরের দল। এপারে একটা দালান। ইট বার-করা পাঁচিলের সামনে টন টন গোবর জমেছে। পাঁচিলের গায়ে ভিতরে যাওয়ার আকাশি-নীল ফটক। সেই গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকে একটা উঠোন। তার একপাশে জাবনার খাটো চৌবাচ্চায় মুখ ডুবিয়ে দুটো মহিষ। যাদের খুব স্বাস্থ্যবান মনে হল না।

উঠোনটা নিকোন। সেখানে একটা বেজায় রূপবান মোরগ ঝুঁটি বাগিয়ে ঘুরছে। কখনও এদিক-ওদিক দৌড় মারছে। কিন্তু এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে না। উঠোনের বাঁ-হাতে পাঁচিলের পাশে একটা সাদা রঙের একতলা ঘর। ডানপাশে ক্যাটক্যাটে নীল রঙের পোঁচওয়ালা আরও কয়েকটা ঘর। বাড়ির হাতায় কীসব গাছ যেন।

Advertisement

‘জাতীয় পাখি’ নির্ভয়ে চরে বেড়াচ্ছে যেখানে, তার অদূরেই ঘটেছিল আর এক ‘নির্ভয়া’-কাণ্ড। —নিজস্ব চিত্র।

এই পর্যন্ত একেবারে ঠিক। উত্তরপ্রদেশের ছোট একটি গ্রাম। বড় রাস্তা থেকে গাড়ি চলাচলের যোগ্য পাকা রাস্তা ধরে যেখানে পৌঁছনো যায়। সেই পথের দু’পাশে সর্ষেক্ষেত তার হলুদ ফুল নিয়ে মাথা দোলাতে থাকে যাই-যাই শীতের হাওয়ায়। যেখানে লোকে ‘পাখির ডাকে ঘুমিয়ে ওঠে পাখির ডাকে জেগে’।

দেখতে দেখতে মনে হল, সত্যিই! এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!

দেশ? দেশই বটে! কারণ, এই দালানের চারপাশে গোল গোল কাঁটাতারের বেড়া। ঠিক তেমন, যেমন দু’দেশের সীমান্তের মাঝ বরাবর থাকে। এই দেশের উঠোন থেকে ভিতরবাগে যেতে গেলে পেরিয়ে যেতে হয় ডোরফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর। এই দেশের হাতায়, ছাদে, এপাশে-ওপাশে নিরাপত্তাবাহিনীর তাঁবু। ক্যানভাস আর তার্পোলিন দিয়ে তৈরি। যেমন দেখা যায় সেনাছাউনিতে। ছাদে তো প্রায় বাঙ্কারই বানানো হয়েছে। বানানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। যেমন থাকে দু’দেশের সীমান্তে।

সীমান্তের মতোই কাঁটাতারের বেড়া। এই বাড়ি যেন একটা দেশ। কাঁটাতার, প্রহরী, তাঁবু, ওয়াচ টাওয়ার... ছবি: পিটিআই।

এই দেশের আনাচে-কানাচে মোতায়েন সশস্ত্র সিআরপিএফ জওয়ান। তাঁদের পরনে জংলাছাপ ক্যামোফ্লেজ উর্দি। কারও কাঁধে ইনস্যাস রাইফেল। কারও কাঁধে একে-৫৬। কারও কোমরের বেল্ট থেকে ঝুলছে নাইন এমএম পিস্তল। কারও বুকে আড়াআড়ি বাঁধা বুলেটের ম্যাগাজিন। তাঁরা এই দেশের সীমান্তের পবিত্রতা রক্ষা করেন। সীমান্ত প্রহরা দেন ২৪ ঘণ্টা। বাইরে থেকে কেউ এলে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সন্তুষ্ট হলে রেজিস্টারে নাম-ধাম, মোবাইল নম্বর এবং সময় নথিভুক্ত করে ভিতরে ঢুকতে দেন। দেশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার সময় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন সামনে। নজর রাখেন। ঠাহর করেন। কোথাও বেচাল কিছু হচ্ছে না তো?

এই হল হাথরসের নির্যাতিতার বাড়ি। চারপাশের সবকিছু থেকে আলাদা। একটা দ্বীপের মতো। একটা আলাদা দেশের মতো।

এই বাড়িরই কাছে ধর্ষণ করা হয়েছিল ১৯ বছরের সেই দলিত কন্যাকে। যিনি এই বাড়িতেই থাকতেন তাঁর ঠাকুমা, বাবা-মা, দুই দাদা-বৌদি এবং তাঁদের তিন সন্তানের সঙ্গে। গলায় দোপাট্টা জড়িয়ে হ্যাঁচকা টান দেওয়ায় যাঁর মেরুদণ্ডে বড়সড় চোট লেগেছিল। ধর্ষণের যন্ত্রণা সহ্য করতে যিনি নিজের জিভ কামড়ে দু’টুকরো করে ফেলেছিলেন। যাঁর আর্তনাদ শুনে মা ছুটে এসেছিলেন ঘটনাস্থলে। অচেতন সেই তরুণীকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কাছের পুলিশ ফাঁড়িতে। তার পরে আলিগড়ের হাসপাতাল। সেখান থেকে দেশের রাজধানী দিল্লি। দু’সপ্তাহ পর দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে যাঁর মৃত্যু হয়েছিল এবং যাঁর দেহ এই বাড়িরই ৫০০ মিটার দূরে পেট্রল জ্বেলে জ্বালিয়ে দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের পুলিশবাহিনী।

এই দেশের হাতায়, ছাদে, এ পাশে-ও পাশে নিরাপত্তাবাহিনীর তাঁবু। ক্যানভাস আর তার্পোলিন দিয়ে তৈরি। যেমন দেখা যায় সেনাছাউনিতে। —নিজস্ব চিত্র।

২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ২০ তারিখের আগে অভিযোগ নেয়নি। ২২ তারিখে পুলিশ তাঁর জবানবন্দি নিয়েছিল। তিনটি আলাদা জবানবন্দিতে নির্যাতিতা বলেছিলেন, তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। তাঁকে খুন করারও চেষ্টা হয়েছে। ঘটনা ঘটিয়েছে ঠাকুর সম্প্রদায়ের চার জন।

সেই জবানবন্দিতেই সন্দীপ ঠাকুর, রামু ঠাকুর, লবকুশ ঠাকুর এবং রবি ঠাকুরের নাম অপরাধী হিসেবে বলে গিয়েছিলেন নির্যাতিতা। যারা এখন জেলে রয়েছে। আর কাঁটাতার-ঘেরা দেশে বসে নির্যাতিতার ২২ বছরের দাদা বলছেন, ‘‘আমরা ন্যায়বিচার চাই। সে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক! আমরা ওদের ফাঁসি চাই!’’

পরনে সস্তার জিন্‌স আর শার্ট। মাফলারে কান-মুখ ঢাকা। বাইশের তরুণ বলছিলেন, ‘‘সরকার বলেছিল পরিবারের একজনকে একটা সরকারি চাকরি দেবে। থাকার জন্য একটা বাসস্থান দেবে। আর আমার বোনের ঘটনাটার ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে বিচার হবে। এখনও পর্যন্ত তার একটাও হয়নি!’’

সেই চিতা। গণধর্ষিত এবং নিহত মেয়ের দেহ পরিবারের অনুমতি ছাড়াই পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। ছবি: পিটিআই।

মথুরা থেকে রাজ্যসড়ক ধরে হাথরস। প্রায় ১৭ মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু হাইওয়ের উপর সাইনপোস্টটা দেখলে এখনও ধড়াস করে একটা ধাক্কা লাগে! সবুজের উপর সাদা রঙে লেখা নামটা— হাথরস। কাণ্ডটা কোথায় ঘটেছিল— প্রশ্ন করতেই পথচলতি মানুষ দেখিয়ে দেন। বলেন, পুলিশ থানার উল্টোদিকের রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। এক কিলোমিটার গেলেই সেই বাড়ি।

দেখা গেল, তা-ই।

গ্রামের নাম বুলগঢ়ী। বাড়ি পর্যন্ত চলে যাওয়া গেল গড়িয়ে গড়িয়ে। কিন্তু খুব সহজে ভিতরে ঢোকা গেল না। ছবি-টবি তো তখনও অনেক দূরের বস্তু। বাধা দিলেন সিআরপিএফ জওয়ানরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যাঁরা নির্যাতিতার পরিবারের নিরাপত্তায় অষ্টপ্রহর মোতায়েন থাকেন। বিভিন্ন শিফ্‌টে পাহারা দেন ২৫ থেকে ৩০ জন। কোথা থেকে আগমন, কী বৃত্তান্ত, বাড়ি কোথায়— ইত্যাদি খুঁটিয়ে জেনে তার পরে তাঁরা ডাকলেন নির্যাতিতার দাদাকে। তিনি কথা বলতে রাজি হলেন আগন্তুকের সঙ্গে। মেটাল ডিটেক্টর পেরিয়ে ভিতরে গিয়ে চেয়ার টেনে বসা গেল।

এবং দেখা গেল, ২২ বছরের সেই তরুণই গোটা পরিবারের মুখপাত্র। কারণ, তিনি জানালেন, তাঁর বাবা-মা দু’জনেরই শরীরটা ভাল না। ফলে তাঁরা কথা বলতে পারবেন না। ভাই কথা বলার সময় কাছে এসে বসলেন তাঁর ৩০ বছর বয়সি দাদা। কিন্তু তিনিও বিশেষ কিছু বললেন না। বা বলার চেষ্টা করলেন না। ছোটভাই গড়গড়িয়ে বলে গেলেন, ‘‘এখন আমাদের দিন চলে সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকায়। ঘটনার পর সরকার ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। সেই টাকাতেই আমাদের দিন গুজরান হয়। আদালতে মামলার তারিখ পড়লে নিজেদের গাড়ি ভাড়া করতে হয়। সঙ্গে সিআরপিএফ-কে নিয়ে যেতে হয়। তবে দিল্লির নির্ভয়ার হয়ে যিনি মামলা লড়েছিলেন, তিনিই আমার বোনের মামলাটা লড়ছেন। তিনি আমাদের থেকে কোনও টাকা-পয়সা নিচ্ছেন না।’’ আপাত-নীরবতা ভেঙে পাশ থেকে দাদা বললেন, ‘‘এখনও অনেকের সাক্ষ্য দেওয়া বাকি আছে। আমাদের পরিবারের সকলেরই সাক্ষ্য দেওয়া হয়ে গিয়েছে যদিও।’’

এই সেই বাড়ি, এখানেই থাকে সেই পরিবার, যার কাহিনি উত্তরপ্রদেশ এবং কালক্রমে ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে গিয়েছে বিদেশে। —নিজস্ব চিত্র।

কেন তাঁর বোনের উপর অত্যাচার করা হয়েছিল? জানেন না। বলেন ছোটভাই। আরও বলেন, ‘‘গ্রামের লোকেরা আমাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখে না। আগে অনেকে আমাদের বাড়িতে আসত। আমরা অনেক সময় ওদের ক্ষেতে কাজও করেছি। কিন্তু এখন আর কেউ সম্পর্ক রাখে না। দোষীরা তো সব ঠাকুর। আমরা দলিত। বাল্মীকি সম্প্রদায়ের। এখানকার লোকেরা সব ঠাকুরদের সঙ্গে। তাই ওরা অপরাধীদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’’ পাশ থেকে বড়ভাই বলেন, ‘‘দলিতোঁ কো কিড়ে-মকোড়ে সমঝতে হ্যায় ওহ্ লোগ।’’ দলিতদের ওরা পোকামাকড়ের মতো মনে করে।

মামলা নিয়ে বলবেন। কিন্তু ভোট নিয়ে কিছু বলবেন না। ভোট নিয়ে প্রশ্নও করা যাবে না। বললেন ছোটভাই। বললেন, ‘‘রাজনীতি হয়ে যাবে। আমরা ওটা বলতে পারব না।’’ তবে জানালেন, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে দেখেছেন। জানালেন, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন। জানালেন, তাঁরা কেউই কোনও কাজকর্ম করেন না। কারণ, তাঁরা বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না। ওই ক্ষতিপূরণের টাকাই তাঁদের পরিবারের যাবতীয় ব্যয় বহন করে। করছে এখনও। তবে আর কতদিন করবে, জানেন না।

জানালেন, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি। তাঁদের পরিবারের অনুমতি ছাড়াই বোনের দেহ পেট্রল জ্বেলে পুড়িয়ে দিয়েছিল। তাই তাঁরা পুলিশের উপর ভরসা না-করে নিরাপত্তার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছিলেন। দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশেই তাঁদের চারদিকে আধা সামরিক বাহিনীর ঘেরাটোপ।

গত পাঁচ বছরে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ভারতীয় রাজনীতির বিভিন্ন মাইলফলক। আনন্দবাজার অনলাইন সেই সমস্ত দিকচিহ্ন ছুঁয়ে দেখার যাত্রা শুরু করেছে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, এই সেই বাড়ি, এই সেই পরিবার, যাঁদের কাহিনি উত্তরপ্রদেশ এবং কালক্রমে ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে গিয়েছে বিদেশে। হরদিন আসছে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের দল। কিছুদিন আগে জাপান থেকে দুই সাংবাদিক এসে ড্রোন উড়িয়ে শ্যুট করেছেন এই বাড়ি। যাতে ভাল ‘টপ ভিউ’ পাওয়া যায়।

বেরিয়ে আসার সময় এক ফুটফুটে খুকির সঙ্গে দেখা। অভ্যস্ত গলায় সে সিআরপিএফ জওয়ানকে বলল, ‘‘জয়হিন্দ আঙ্কল!’’ আর পাশের মধ্যবয়সিকে, ‘‘নমস্তে আঙ্কল।’’

নাম কেয়া হ্যায় তুমহারা?

আয়ুশি। ভ্রূ-তে খানিক কুঞ্চন-সহ রিনরিনে গলায় জবাব এল। পাশ থেকে সশস্ত্র কিন্তু ততক্ষণে বন্ধুভাবাপন্ন জওয়ান বললেন, ‘‘মেয়েটা ওই ঠাকুর পরিবারের। যাদের পরিবারের ছেলের নামে এরা অভিযোগ করেছে।’’

পিছনে তাকিয়ে দেখলাম, পাঁচিলের ওপারে বেঞ্চে এসে বসেছেন এক প্রৌঢ়। পরনে শার্ট-ট্রাউজার্স আর একটা ধুসো হাফস্লিভ সোয়েটার। গলার নীল গামছাটা তুলে মুখ-কান ভাল করে ঢাকা দিয়ে নিলেন নির্যাতিতার বাবা।

আয়ুশির দেশ আর তাঁর দেশের মধ্যে কাঁটাতারের গোল গোল বেড়া উঠে গিয়েছে। (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement