Uttar Pradesh Assembly Election 2022

UP Election & Varanasi: ভোটপ্রদেশের ধর্মীয় মেরুকরণেও বারাণসী ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের এক অটুট অভিজ্ঞান

দুই সম্প্রদায়ের কথা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, এই বারাণসী মহম্মদ আকলাখকে পিটিয়ে মারার শহর নয়। এই বারাণসী চিকিৎসক কাফিল খানকে গ্রেফতার করার বারাণসী নয়। হতে পারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র। কিন্তু ভোটপ্রদেশের রাজনীতিতেও বারাণসী অটুট রেখেছে তার আবহমান কালের সংস্কৃতি।

Advertisement

অনিন্দ্য জানা

বারাণসী শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১২:৫৯
Share:

তীব্র মেরুকরণের রাজনীতির মধ্যেও প্রাচীন এই শহর রয়ে গিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের অভিজ্ঞান হয়ে। যেখানে ধরহরা মসজিদের নমাজের পাশে শান্তির সহাবস্থানে থাকে বিষ্ণুমন্দিরের আরতি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

জুতো খুলে প্রবেশ করুন।

একটা মার্বেল ফলকের গায়ে ইংরেজি, হিন্দি এবং উর্দুতে লেখা। তার পাশে ভারত সরকারের একটা মলিন কালচে-নীল রঙের সাইনবোর্ড। তাতে সাদা অক্ষরে লেখা ‘ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ, ধরহরা মসজিদ’। তারও পাশে একটা বোর্ড। সেটার অবস্থা খানিক দরের। গাঢ় নীল রঙের সেই বোর্ডে ঝকঝকে সাদা হরফে সাবধানবাণী— ‘এই এলাকার ১০০ মিটারের মধ্যে বিনা অনুমতিতে কোনওরকম নির্মাণ নিষিদ্ধ। নির্দেশ অমান্য করলে দু’বছরের জেল বা এক লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা দুটোই হতে পারে।’

বেশ খানিকটা নীচে পঞ্চগঙ্গার ঘাট। মসজিদের পাদদেশ থেকে খাড়াই সিঁড়ি নেমে গিয়েছে গঙ্গাজলের কাছে। সেই সিঁড়ির কয়েকটা ধাপে বসে গেরুয়াধারী সাধুদের একটা দঙ্গল। তাঁদের বারাণসী শহরের স্থানমাহাত্ম্য বোঝাচ্ছিলেন স্মার্ট দলনেতা। মুণ্ডিতমস্তক নেতার চোখে রিমলেস চশমা। ঠোঁটের কাছে ঝিঙেবিচি সদৃশ ব্যাটারি-চালিত মাইক্রোফোন। যা তাঁর কণ্ঠকে কিছু বেশি শ্রুতিসুখকর এবং সম্ভবত কিছু বেশি বিশ্বাস্য করে তুলেছে।

Advertisement

ধরহরা মসজিদ। নানা বিপরীতবর্ণিত কাহিনি নিয়ে এই ইতিহাস দাঁড়িয়ে আছে বারাণসীর ঘাটে। ছবি: পিটিআই।

দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, কী অসামান্য সহাবস্থান! বিশেষত, উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের পটভূমিতে। উত্তরপ্রদেশ। জাতপাতের সঙ্গেই যে রাজ্যের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে ধর্ম। যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আসন গত পাঁচ বছর ধরে অলঙ্কৃত করে রয়েছেন এক গেরুয়াধারী হিন্দু সাধু। ভোট এলে যে রাজ্যকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করার চেষ্টা হয়ে থাকে এবং এবারেও হচ্ছে। ধর্মীয় মেরুকরণই যে রাজ্যের রাজনীতির মেরুদণ্ড, সেই রাজ্যেরই হিন্দুপ্রধান এবং হিন্দুধর্মের পীঠস্থানে গঙ্গার ধারে নির্দ্বিধায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে মোগল সম্রাট অওরঙ্গজেবের আমলের ধরহরা মসজিদ।

পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের গাইডবুক বলছে, মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৬৬৩ সালে। শেষ হয়েছিল ১৭০৭ সালে। শুরু করেছিলেন অওরঙ্গজেব। শেষ করেছিলেন শাহ আলম। ধরহরা মসজিদ নির্মাণের তদারকি করেছিলেন বারাণসীর ফৌজি অফিসার আলি ইব্রাহিম খান।

Advertisement

সামান্য ভুলই হল। ‘ধরহরা’ নয়, ‘মাধবদাসের ধরহরা’।

কতকাল ধরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ধরহরা মসজিদ এবং বিষ্ণুমন্দির। পঞ্চগঙ্গার ঘাটে মসজিদের সিঁড়িতে বসে বারাণসীমাহাত্ম্যকথা বলেন হিন্দু সাধুরা। ছবি: পিটিআই।

কে মাধবদাস? যাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে মসজিদের নাম? মসজিদ চত্বরের একেবারে লাগোয়া বিষ্ণুমন্দিরের পূজারি ছিলেন মাধবদাস। মসজিদের নামে যেমন হিন্দু বৈষ্ণবের ‘মাধবদাস’ নাম সম্পৃক্ত, তেমনই মসজিদের স্থাপত্যেও হিন্দু নকশার ছোঁয়া। এ কি মায়া? এ কি জাদু?

মায়া নয়। জাদুও নয়। ইতিহাস। ধরহরা মসজিদের চত্বরে দাঁড়িয়ে সেই ইতিহাস শোনালেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের এক পদস্থ কর্মী।

বিষ্ণুমন্দিরের বয়স মসজিদের চেয়ে বেশি। সেখানকারই পূজারি ছিলেন মাধবদাস। ধর্মে বৈষ্ণব। পুজোপাঠ করে দিন কাটত তাঁর। অচমকাই বারাণসীর কোতোয়ালি থানার দারোগার চোখে লেগে যায় পূজারির কন্যার রূপ। তিনি ঝুলে পড়েন সেই পরমাসুন্দরীকে বিয়ে করার জন্য। মুসলিম পাত্র নিয়ে আপত্তি ছিল ঘোর বৈষ্ণব মাধবদাসের। তিনি সটান অওরঙ্গজেবের দ্বারস্থ হন। কিন্তু বাদশা জানিয়ে দেন, মাধবদাসের কন্যার বিবাহ দারোগার সঙ্গেই দিতে হবে। সে বিয়েতে তিনি নিজেও উপস্থিত থাকবেন।

গত পাঁচ বছরে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে রয়েছে ভারতীয় রাজনীতির বিভিন্ন মাইলফলক। নির্বাচনের আবহে আনন্দবাজার অনলাইন সেই সমস্ত দিকচিহ্ন ছুঁয়ে দেখার যাত্রায়। এটি একাদশ কিস্তি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বিয়ের দিন সপার্ষদ অওরঙ্গজেব পৌঁছন মাধবদাসের বিষ্ণুমন্দিরে। হবু বর দারোগা এগিয়ে এসে বাদশাহকে অভ্যর্থনা জানান। কয়েক লহমার বিরতি। অওরঙ্গজেবের চোখের ইশারায় তাঁর সঙ্গী সেনাপতি তলোয়ারের কোপে দারোগাকে দু’ফালা করে কেটে ফেলেন!

কম্পিত মাধবদাস অওরঙ্গজেবকে কৃতজ্ঞতা জানাতে এলে বাদশাহ বলেন, তাঁর রাজত্বে জোর করে এমন কিছু করা তিনি সমর্থন করেন না। জানান, এবার তাঁকে বিদায় নিতে হবে। কারণ, তাঁর সান্ধ্যকালীন নমাজের সময় হয়েছে। বিষ্ণুমন্দিরের পূজারি মাধবদাস বাদশাহকে বলেন, মন্দিরের পাশেই একটি খোলা জমি রয়েছে। সেখানেই বাদশাহ নমাজ পড়তে পারেন। অওরঙ্গজেব প্রশ্ন করেন, মন্দিরের লাগোয়া জমিতে সত্যিই কি তিনি নমাজ পড়তে পারেন? মাধবদাস ঘাড় নেড়ে সম্মতি দেন। বাদশাহ দ্বিতীয়বার একই প্রশ্ন করেন। মাধবদাস আবার সম্মতি দেন। অওরঙ্গজেব সদলবলে মন্দিরের পাশের জমিতে নমাজ পড়তে যান। নমাজ পড়া সেরে মাধবদাসকে বাদশাহ বলেন, তিনি যেখানে নমাজ পড়েন, সেখানে মসজিদ তৈরি করতে হয়। এটাই দস্তুর। তিনি সে জন্যই পরপর দু’বার মাধবদাসকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন মন্দিরের পাশে নমাজ পড়তে পারেন কি না। পূজারি আপত্তি করেননি। সম্ভবত বিষয়টা না-জেনেই। কিন্তু এখন তো সেই জমিতে মসজিদ তৈরি করতেই হবে। মাধবদাসের সায় দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। সেই পত্তন ধরহরা মসজিদের।

কাশী তথা বারাণসীর জৈন ঘাট। সুপ্রাচীন এই শহরে যদি ৩,৩০০টি হিন্দু ধর্মস্থান থেকে থাকে, তা হলে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদেরও ১,৩৮৮টি পবিত্র স্থান রয়েছে। যেমন রয়েছে ১২টি গির্জা, ৯টি বৌদ্ধমন্দির, ৩টি জৈনমন্দির এবং ৩টি গুরুদ্বার। ছবি: রয়টার্স।

যদিও অন্য তথ্যও রয়েছে। যার সঙ্গে এই সহাবস্থানের কোনও মিল নেই। সেই তথ্য বলছে, এক মরাঠা নেতা মধুর রাও শিন্ডের তৈরি বিষ্ণুমন্দিরটি গুঁড়িয়ে দিয়ে তার ধ্বংসাবশেষের উপরেই অওরঙ্গজেব মসজিদ নির্মাণ করেন ১৬৬৯ সালে। নাম দেন ‘আলমগির মসজিদ’। যে ‘আলমগির’ খেতাব তিনি নিজেকে অর্পণ করেছিলেন মোগল সাম্রাজ্যের সম্রাট হওয়ার পর। বারাণসী দখল করার পর অওরঙ্গজেব শহরের সমস্ত মন্দির ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। ভাঙা পড়ে পঞ্চগঙ্গা ঘাটের উপরের বিষ্ণুমন্দিরও। মসজিদের নীচের দিকে হিন্দু নকশা থাকার কারণ মন্দিরটি বিষ্ণুমন্দিরের ধ্বংসস্তূপের উপর নির্মিত।

আরও বলা হয়েছে, মসজিদে ২৪ ঘণ্টা পুলিশি প্রহরা থাকে এবং এই মসজিদে অ-মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। মন্দিরের চত্বরে একটা তাঁবু চোখে পড়ল বটে। কিন্তু পুলিশ-টুলিশ চোখে পড়ল না। আর অ-মুসলিম হয়েও তো দিব্যি মসজিদে ঢোকা গেল। এমনকি, ভারতীয় পুরতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তরফেও ‘আলমগির মসজিদ’ নামটা কোথাও নজরে পড়ল না!

এ শহরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে ভেসে আসে লাউডস্পিকারে আজানের সুর। আবার তার কয়েক ক্রোশ দূরত্বে কাশী বিশ্বনাথের মন্দির বা দশাশ্বমেধ ঘাটের এলইডি স্ক্রিনে দিনভর চলতে থাকে ‘ওম নমঃ শিবায়’ মন্ত্রোচ্চারণ। ছবি: রয়টার্স।

উল্টে মসজিদের চত্বরে বসে-থাকা লুঙ্গি-ফতুয়া-ফেজটুপির প্রবীণ জানালেন, এখনও এই মসজিদে দিনে পাঁচবার নমাজ পড়া হয়। ঠিক যেমন সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত আরতি হয় পাশের বিষ্ণুমন্দিরেও। নীচের পঞ্চগঙ্গা ঘাটে (যা বারাণসীর প্রাচীনতম ঘাট বলেই কথিত) হিন্দুরা পূজার্চনা করেন।

ভোটের বারাণসীতে এসে এই সহাবস্থান দেখে চমৎকৃত লাগছিল! যেখানে মদনপুরার গলিতে শাড়ির ব্যবসায়ী মহম্মদ আসিফের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন পানের দোকানি উমেশ যাদব। হাজির-জবাব আসিফ বলছেন, ‘‘বারাণসী কেন, পুরো হিন্দুস্তানে মুসলিমদের কোথাও থাকার কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা তো তৈরি করেন রাজনীতিকরা। ইংরেজ চলে গিয়েছে। কিন্তু তাদের ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতি এখনও চলছে। এই রাজনীতিকরাই হিন্দু-মুসলিমে ঝগড়া লাগান! আমরা তো দিব্যি মিলেমিশে থাকি এখানে।’’ পাশে দাঁড়িয়ে উমেশ হাসতে হাসতে বলছেন, ‘‘আরে, আমার দোকানে বিক্রিবাটা কম হলে ও গিয়ে পান খেয়ে খেয়ে আমার বিক্রি বাড়িয়ে দেয়!’’

সকল হংস মেঁ রাম বিরাজে... কবীরের সেই রাম এখনও হারিয়ে যায়নি তাঁর জন্মস্থান বারাণসী থেকে। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বেড়া ভেঙে তাই বিভা, মৃদুলা, পুনমদের সঙ্গে রামের বন্দনা করেন নাজনিন, রুবিনা, তসলিমারা। ছবি: পিটিআই।

বস্তুত, ‘উত্তরপ্রদেশের ভোট-বুক’ সিরিজ লিখতে এসে এই কথাটা বারবার মনে হয়েছে। বারাণসীতে এসে আবার মনে হল। পৃথিবীর প্রাচীনতম হিন্দু শহর বলেই পরিচিত বারাণসী বা কাশী বিশ্বনাথ ধাম। যার অলিগলিতে হিন্দুত্বের উচ্চকিত আস্ফালন। গোটা দেশ থেকে পুণ্যার্থীরা আসেন বিশ্বনাথ দর্শন করতে। মন্দিরের আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা কিলবিল করছে তাঁদের ভিড়ে। দশাশ্বমেধ ঘাটে বিখ্যাত ছত্রীর তলায় তারস্বরে পূজাপাঠ চলছে। নববিবাহিত দম্পতি ‘গঙ্গাপূজন’ সারছেন। চলছে মস্তক মুণ্ডন-সহ আরও যা যা উপাচার হতে পারে সমস্ত। তার মধ্যেই চোখে পড়ে ইতিউতি বোরখা-আবৃত চেহারা। মন্দির মার্গে ডালা নিয়ে বসা দোকানিদের থেকে টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনছেন তাঁরাও।

কে বলবে, বারাণসীর বাসিন্দাদের মধ্যে শতকরা সাড়ে ৮৪ ভাগ হিন্দু। সংখ্যালঘুদের মধ্যে মুসলিমরাই সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। প্রায় ১৫ শতাংশ। সঙ্গে রয়েছেন কিছু শিখ, জৈন, খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীও। সুপ্রাচীন এই শহরে যদি ৩,৩০০টি হিন্দু ধর্মস্থান থেকে থাকে, তা হলে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদেরও ১,৩৮৮টি পবিত্র স্থান রয়েছে। যেমন রয়েছে ১২টি গির্জা, ৯টি বৌদ্ধমন্দির, ৩টি জৈনমন্দির এবং ৩টি গুরুদ্বার।

মণিকর্নিকা ঘাট শ্মশান। এর অদূরেই বেনিয়া পার্কে আছে মুসলিমদের গোরস্থান। —নিজস্ব চিত্র।

শহরের বেনিয়াবাগ, নয়ি সড়ক, শাহি মসজিদ এলাকায় অবিশ্রান্ত ভিড় মুসলিমদের। সেই সমস্ত মহল্লা থেকে নিয়ত ভেসে আসে লাউডস্পিকারে আজানের সুর। আবার তার কয়েক ক্রোশ দূরত্বে কাশী বিশ্বনাথের মন্দির বা দশাশ্বমেধ ঘাটের এলইডি স্ক্রিনে দিনভর চলতে থাকে ‘ওম নমঃ শিবায়’ মন্ত্রোচ্চারণ।

গঙ্গার তীরে মণিকর্নিকা ঘাটে (যে শ্মশানকে ভিত্তিভূমিতে রেখে তৈরি হয়েছিল ভিকি কৌশলের প্রথম ছবি ‘মসান’) এবং হরিশ্চন্দ্র ঘাটে যেমন সতত চিতা বহ্নিমান (কাশীতে দেহত্যাগ করলে এবং গঙ্গাতীরের এই দুই শ্মশানে দাহ-সংস্কার হলে আর মানবজন্ম নিতে হয় না, এমনই লোকগাথা), তেমনই তার অদূরে বেনিয়া পার্কে মুসলিমদের গোরস্থান।

দশাশ্বমেধ ঘাটের এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে যাঁকেই ভোট নিয়ে প্রশ্ন করেছি, জবাব মিলেছে, ‘‘হম সব ভাজপা-কো ভোট ডালেঙ্গে। যোগী (আদিত্যনাথ) আচ্ছা হ্যায়।’’ তাঁরা বলেছেন, ‘‘যোগী আদিত্যনাথের তো আগেপিছে কেউ নেই। নিজের ভাই-বেরাদরদের সরকারি উঁচু পদে বসানোর প্রশ্ন নেই। তাই ওঁর শাসন অনেক নিরপেক্ষ।’’ আবার শহরের মুসলিম মহল্লার বাসিন্দারা খোলাখুলি জানিয়েছেন, তাঁরা অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির পাশে রয়েছেন। তাঁরা বিনাদ্বিধায় বলেছেন, ‘‘অখিলেশ যাদব কাজ করেছেন। যোগীর সরকার যে বিনাপয়সার রেশন দিচ্ছে, সেটা তো করোনার জন্য। মার্চ মাস পর্যন্ত। ভোট হয়ে গেলেই রেশন শেষ! আর ওই রেশনে যে ছোলা দেয়, তা তো ঘোড়াতেও খেতে পারে না!’’

এই বারাণসী মহম্মদ আকলাখকে পিটিয়ে মারার শহর নয়। কাফিল খানকে গ্রেফতার করার বারাণসী নয়। ছবি: রয়টার্স।

শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, এই বারাণসী মহম্মদ আকলাখকে পিটিয়ে মারার শহর নয়। এই বারাণসী চিকিৎসক কাফিল খানকে গ্রেফতার করার বারাণসী নয়।

হতে পারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র। কিন্তু ভোটপ্রদেশের রাজনীতিতেও বারাণসী অটুট রেখেছে তার আবহমান কালের সংস্কৃতি। তীব্র মেরুকরণের রাজনীতির মধ্যেও প্রাচীন এই শহর রয়ে গিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের অভিজ্ঞান হয়ে। যেখানে ধরহরা মসজিদের নমাজের পাশে শান্তির সহাবস্থানে থাকে বিষ্ণুমন্দিরের আরতি।

ভাগ্যিস! (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement