ফাইল চিত্র।
অযোধ্যার রামমন্দিরের গর্ভগৃহে বসেছে তাঁরই হাতে ‘তৈরি’ রামলালার মূর্তি। কষ্টিপাথরের ৫১ ইঞ্চির মূর্তি দর্শনে উপচে পড়ছে ভিড়। ‘বালক’ রামের মূর্তি তৈরি করে ‘লাইম লাইট’ কেড়ে নেওয়া সেই ভাস্কর অরুণ যোগীরাজেরও এক সময় ঘুম উড়ে গিয়েছিল। সাত মাস প্রায় প্রতি রাতেই ঘুম থেকে উঠে বলতেন, ‘‘রামলালা আমায় ডাকছেন!’’
সাত-আট মাস ধরে ধীরে ধীরে শিশু রামের মূর্তি গড়ে তুলেছিলেন অরুণ। গত ২২ জানুয়ারিতে সেই মূর্তির ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ হয়। ‘প্রধান যজমান’ হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ অনুষ্ঠানে ছিলেন সংস্কৃত এবং সঙ্গীতের পণ্ডিত আচার্য সুমধুর শাস্ত্রী। তিনি রামলালার মূর্তি তৈরির প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত অরুণের সঙ্গে ছিলেন। তিনিই অরুণের মাঝ রাতে জেগে ওঠার গল্প শোনান।
শিশু রামের মূর্তি তৈরি নিয়ে বলতে গিয়ে শাস্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথমে রামমন্দিরের গর্ভগৃহে মূর্তি তৈরির জন্য এসেছিলেন আরেক ভাস্কর সত্যনারায়ণ পাণ্ডে। তার পর ভেসে ওঠে জেজে ভট্টের নাম। শেষ পর্যন্ত অরুণ যোগীরাজকে মূর্তি তৈরির জন্য নির্বাচিত করা হয়।’’ শাস্ত্রী জানান, রামের মূর্তি তৈরি করার প্রথম শর্তই ছিল সেটি যেন শিশুর মতো দেখতে হয়।
কী ভাবে অরুণ তিল তিল করে রামলালার মূর্তি তৈরি করেছেন? তার বর্ণনা দিতে গিয়ে শাস্ত্রী বলেন, “অরুণ যোগীরাজ মূর্তি তৈরির কাজ কিছুটা দেরিতে শুরু করেছিলেন। তবে ওর সঙ্গে কথা বলা প্রথম দিকে একটু চ্যালেঞ্জের ছিল। পরে ‘ভাঙা ভাঙা’ ইংরেজির সাহায্যে কথাবার্তা চলত দু’জনের মধ্যে।’’
রামলালার মূর্তি তৈরি করা সহজ কাজ ছিল না। কাজ শুরুর আগে বিস্তর পড়াশোনা করতে হয়েছে। শাস্ত্রীর কথায়, ‘‘আমরা দু’জনে মিলে অনেক মন্দিরে ঘুরেছি। সাধু সন্তদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। শাস্ত্র পাঠ করেছি।’’ রামলালার মূর্তির মধ্যে প্রাণবন্ত ভাব ফুটিয়ে তোলাই কঠিন ছিল। রামের চোখ তৈরির প্রক্রিয়ায় একটা বিশেষ মাহাত্ম্য ছিল। সোনার ছেনি ও রূপার হাতুড়ি। যতক্ষণ না চোখ তৈরি হচ্ছিল, ততক্ষণ মূর্তির মধ্যে ‘প্রাণ’-এর অভাব ছিল। এক বার চোখ তৈরি হওয়ার পর মনে হয়েছিল মূর্তিতে সত্যিকারে দেবত্বের আবির্ভাব ঘটেছে।’’