অপরাধীর অপরাধ বিচার করেন বিচারক। দোষী সাব্যস্ত হলে সাজা শোনান। হাজতবাস, জরিমানা কিংবা মৃত্যুদণ্ড— এমন নানা ধরনের শাস্তির কথা লেখা আছে আইনের বইতে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডই দেওয়া হয়।
কী ভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়? বিশ্বের অনেক দেশে মৃত্যুদণ্ড মানেই আসামিকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ভারতেও মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয়।
তবে বিশ্বের কয়েকটি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ফাঁসির বদলে অন্য উপায় নেওয়া হয়। যেমন সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামির মাথা কেটে নেওয়া হয়। আবার চিন, ভিয়েতনাম ও আমেরিকাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে। কিছু দেশ আছে যেমন আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়া, প্যালেস্টাইন, সোমালিয়ার মতো দেশে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
সম্প্রতি আমেরিকায় এক আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে নেওয়া হল অভিনব পন্থা। মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে মারা হল। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা বিশ্বে।
১৯৮৮ সালে এলিজাবেথ সেনেট নামে এক মহিলাকে খুন করেন কেনেথ স্মিথ। তিনি ছিলেন একজন ভাড়াটে খুনি। স্ত্রীকে খুন করার জন্য এক হাজার ডলারের বিনিময়ে কেনেথকে ভাড়া করেছিলেন চার্লস সেনেট নামে এক ব্যক্তি। যদিও পরে চার্লস আত্মহত্যা করেন।
এলিজাবেথকে খুন করার জন্য কেনেথ স্মিথের একজন সহযোগীও ছিলেন। তাঁকেও ম়ৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছিল আদালত। ২০১০ সালে তাঁর সাজা কার্যকর করা হয়েছিল। তবে কেনেথের বিচার চলছিল। নিম্ন আদালতের দেওয়া ম়ৃত্যুদণ্ড সাজা উচ্চ আদালত হয়ে সর্বোচ্চ আদালতেও বহাল থাকে।
কী ভাবে কেনেথের ম়ৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ২০২২ সালে এক বার কেনেথকে প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে ম়ৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা স্থির হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত তা স্থগিত হয়ে যায়। পরে আমেরিকার অঙ্গরাজ্য আলাবামার গর্ভনর ফের কেনেথের ম়ৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ব্যাপারে উদ্যোগী হন।
শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি কার্যকর করা হবে কেনেথের। সেই মতো ২৫ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে ‘মারা’ হয় তাঁকে। বিশ্বে প্রথম এই উপায়ে শাস্তি দেওয়া হল কাউকে।
কেনেথের মুখে একটি মাস্ক আটকে দেওয়া হয়। ঠিক যে ভাবে কোনও রোগীকে মাস্কের মাধ্যমে অক্সিজন দেওয়া হয়, সেই প্রক্রিয়াই কেনেথের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু অক্সিজেনের পরিবর্তে ছিল নাইট্রোজেন। অক্সিজেন চলাচলের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
কেনেথের ম়ৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ২২ মিনিট সময় লেগেছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ২২ মিনিটের মধ্যে প্রথম কয়েক মিনিট সচেতন ছিলেন তিনি। যত ক্ষণ তাঁর জ্ঞান ছিল তত ক্ষণ মৃত্যু যন্ত্রণায় চিৎকার করেছিলেন। তার পর অবসন্ন হয়ে পড়েন। শেষে তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, নাইট্রোজেন মাস্ক মুখে পরানোর আগে কেনেথ শেষ কথা বলেছিলেন, ‘‘আজ মানবিকতাকে আরও এক ধাপ পিছনে নিয়ে গেল আলাবামা।’’
৩৬ বছর আগে করা সেই খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত কেনেথের শাস্তি কার্যকর হল বৃহস্পতিবার। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেনেথের স্ত্রী এবং সন্তান। তাঁদের উদ্দেশে কেনেথ বলেন, “ভালবাসা এবং শান্তি নিয়ে আমি পৃথিবী ত্যাগ করছি। তোমরা দুঃখ পেয়ো না।’’
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠক করে কেনেথের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন আলাবামা কারা বিভাগের কমিশনার জন হ্যাম। তিনি বলেন, “অনেক ক্ষণ পর্যন্ত শ্বাস ধরে রেখেছিলেন কেনেথ। শেষ পর্যন্ত বাঁচার লড়াই ছেড়ে দেন তিনি।’’
এ ভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘোর বিরোধী ছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কর্মীরা। এমনকি নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করার অনুরোধও করা হয়েছিল। তবে আলাবামা প্রশাসনের যুক্তি ছিল, নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করার প্রক্রিয়া সবচেয়ে ব্যথাহীন মৃত্যু!
গ্যাস ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা আমারিকায় নতুন নয়। ১৯৯৯ সালে খুনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে মারা হয়।