পূজা খেড়কর। ছবি: সংগৃহীত।
আগেই বন্ধ হয়েছিল প্রশিক্ষণ। সপ্তাহখানেক আগে বাতিল হয়েছিল নিয়োগও। এ বার ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (ইউপিএসসি) সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাই কোর্টে গেলেন বিতর্কিত প্রাক্তন আমলা পূজা খেড়কর!
বুধবারই ইউপিএসসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন করেন পূজা। খেড়করের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই মামলার অস্বাভাবিক দিকটি হল, পূজা কিন্তু এখনও সরাসরি আমলা পদ বাতিলের নির্দেশ পাননি। এ বিষয়ে কেবল একটি প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। ইন্দিরার যুক্তি, এত দিন পেরিয়ে গেলেও কোনও সরকারি নির্দেশ পাননি তাঁর মক্কেল। তাই প্রেস বিবৃতির উপর ভরসা না করে কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ট্রাইব্যুনালে যেতে চান পূজা। বুধবার পূজাকে সেই স্বাধীনতা দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট।
যদিও ইউপিএসসি দিল্লি হাই কোর্টকে জানিয়েছে, আগামী দু’দিনের মধ্যেই আমলা পদ বাতিলের নির্দেশটি পেয়ে যাবেন পূজা।
প্রসঙ্গত, এক সপ্তাহ আগেই বিতর্কিত আইএএস পূজা খেড়করের নিয়োগ বাতিল করে দিয়েছে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন। জানানো হয়েছে, আর কখনও ইউপিএসসি পরিচালিত কোনও পরীক্ষায় বসতে পারবেন না পূজা। আগেই একটি বিবৃতিতে ইউপিএসসি জানিয়েছিল, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ মেলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সেই মতো গত ১৮ জুলাই তাঁকে শোকজ় নোটিসও পাঠানো হয়। প্রাথমিক ভাবে তাঁকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কারণ দেখাতে বলা হয়েছিল, তাতে আগামী ৪ অগস্ট পর্যন্ত বাড়তি সময় দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন পূজা। কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করে ইউপিএসসি ৩০ জুলাই, বুধবার পর্যন্ত সময় দিয়েছিল তাঁকে। জানানো হয়, পূজার কাছে এটিই শেষ সুযোগ। এর পর তাঁর কোনও অনুরোধ-উপরোধ আর শোনা হবে না। শেষমেশ ৩০ জুলাইয়ের বিবৃতিতে ইউপিএসসি জানিয়েছে, বাড়তি সময় দেওয়া সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন পূজা। তাই ২০২২-এর আইএএস নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁর নির্বাচন বাতিল করা হল এবং আজীবনের জন্য তাঁকে বহিষ্কার করা হল।
কয়েক সপ্তাহ আগে মহারাষ্ট্রের পুণের অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসাবে নিযুক্ত পূজার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়িতে মহারাষ্ট্র সরকারের স্টিকার, লালবাতি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলাশাসকের কক্ষ ‘দখল’ করা এবং জেলাশাসকের সহকারীর কাছে বেআইনি দাবিদাওয়া পেশ করে সেই দাবি পূরণের জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। সেখান থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। তার পর পূজার একের পর এক ‘কীর্তি’ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে! জানা যায়, ইউপিএসসি পরীক্ষায় সংরক্ষণের সুবিধা পেতে ভুয়ো প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের আবেদন করেছিলেন তিনি। দু’বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় সেই ভুয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমাও দেন তিনি। এক বার দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কথা উল্লেখ করে, আর দ্বিতীয় বার মানসিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে। তবে নিয়োগের আগে ২০২২ সালে এমসে প্রতিবন্ধকতার পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হলেও ছ’বার নানা অজুহাতে পূজা তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এত গলদ সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে চাকরি পেলেন, তা নিয়েই উঠেছিল প্রশ্ন।