মেঘালয়ের বিধানসভা ভোটে রাহুল গান্ধী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরজা। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মেঘালয়ে ভোটপ্রচারে গিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগের জবাবে বুধবার বিকেলে ধারাবাহিক টুইট করেছেন অভিষেক। সেখানে রাহুলের ‘রাজনৈতিক যোগ্যতা’ নিয়েও খোঁচা দিয়েছেন তিনি।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেকের পাশাপাশি মঙ্গলবার মেঘালয়ে বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়েছিলেন রাহুলও। শিলংয়ে কংগ্রেসের সভায় রাহুল বলেন, ‘‘বিজেপিকে ক্ষমতা দখলের সুযোগ করে দিতেই তৃণমূল ভোটে লড়ছে।’’ টুইটে তার জবাবে অভিষেক লিখেছেন— ‘‘একই যুক্তি মেনে জানতে চাই, যখন কংগ্রেস ২০২১ সালের বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে ৯২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, তখন কি তাদের বিজেপিকে সাহায্য করার মতলব ছিল?’’
এর পর প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতিকে খোঁচা অভিষেকের মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধীর অভিযোগ বেশ কৌতূকপূর্ণ। বিশেষত, কংগ্রেস এমন একটি দল যারা দেশে গত ৪৫টি বিধানসভা ভোটের ৪০টিতেই হেরেছে।’’ অন্য একটি টুইটে অভিষেক লেখেন, ‘‘বিজেপিকে রুখতে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। নিজেদের অযোগ্যতার জন্য অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। রাহুল গান্ধীকে বলছি, আমাদের আক্রমণের রাজনীতি থেকে বিরত থাকুন। টাকার জোরে আমাদের শ্রীবৃদ্ধি হয়নি, মানুষের ভালবাসায় হয়েছে।’’
গত সপ্তাহেই রাহুলের দলকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেছিলেন ‘কংগ্রেসের আদর্শটা ঠিক কী, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।’’ এই প্রশ্নের প্রেক্ষিত বোঝাতে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস বাংলায় বামেদের সঙ্গে জোট করেছে, আবার কেরলে তাদের বিরুদ্ধেই লড়াই করছে। অসমে এআইডিইউএফ-এর সঙ্গে বোঝাপড়া করেছে, অন্য দিকে শিবসেনার মতো দলের সঙ্গেও বোঝাপড়া করেছে। আমরা কখনও আদর্শগত অবস্থান নিয়ে আপস করিনি।’’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় সিপিএমকে হারিয়ে দিয়েছি, বলতেই পারতাম, ত্রিপুরায় তাদের (সিপিএম, কংগ্রেস) সঙ্গে সমঝোতা করে ভোটে যাব। তা যাইনি।’’
প্রসঙ্গত, বুধবার মেঘালয়ে ‘বিজেপির বন্ধু’ এবং ‘ভোট কাটার দল’ হিসাবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিরও অভিযোগ তুলেছেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা তৃণমূলের ইতিহাস জানেন। পশ্চিমবঙ্গে কেমন হিংসা এবং দুর্নীতি হয় তা-ও সকলের জানা। এমন ঐতিহ্য থেকে সাবধান হোন।’’ গত বছর গোয়ার বিধানসভা ভোটে তৃণমূল বিপুল খরচ করে ভোটে লড়ে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি। তারই জবাবে ‘টাকার জোরের’ প্রসঙ্গ অভিষেকের টুইটে এসেছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
গত বছর গোয়ায় বিধানসভা ভোটের সময় তৃণমূলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হলেও রাহুল তা নাকচ করে দিয়েছিলেন। এর পর স্থানীয় দল মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির সঙ্গে সমঝোতা করে ২২টি আসনে লড়েছিল তৃণমূল। কোনও আসনে না জিতলেও গোয়ায় ৫ শতাংশের বেশি ভোট পান জোড়াফুল প্রার্থীরা। পরিসংখ্যান বলছে, বেশ কয়েকটি আসনে কংগ্রেস এবং তৃণমূল প্রার্থীর মিলিত ভোট জয়ী বিজেপি প্রার্থীর তুলনায় বেশি ছিল। নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে প্রথম বার গোয়া বিধানসভা ভোটে লড়তে গিয়ে তৃণমূল ব্যয় করেছে মোট ৪৭ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। শাসক দল বিজেপির খরচ ১৭ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা।
মেঘালয়ের বিধানসভা ভোটে অবশ্য তৃণমূলকে অন্যতম শক্তিশালী পক্ষ বলে মনে করছেন ভোট পণ্ডিতদের অনেকেই। ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যের ৬০টি আসনের মধ্যে ২১টিতে জিতে ‘বৃহত্তম দল’ হয়েছিল কংগ্রেস। ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মুকুল সাংমা-সহ ১২ জন কংগ্রেস বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেন। বাকি কংগ্রেস বিধায়করা শাসকদল এনপিপি এবং বিজেপি, ইউডিপি, এইচএসপিডিপির মতো দলে যোগ দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। ফলে ওই রাজ্যে এ বার কার্যত ‘শূন্য’ থেকে শুরু করতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। অন্য দিকে বিদায়ী বিধানসভার হিসাবে মেঘালয়ের প্রধান বিরোধী দল তৃণমূল।