(বাঁ দিক থেকে) দুষ্মন্ত চৌটালা, ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা এবং নয়াব সিংহ সাইনি। — ফাইল চিত্র।
আগামী ২৫ মে ষষ্ঠ দফায় সে রাজ্যের ১০টি লোকসভা কেন্দ্রের সব ক’টিতে ভোটগ্রহণ। তার আগেই হরিয়ানায় ধাক্কা খেয়েছে শাসকদল বিজেপি। তিন নির্দল বিধায়ক বিজেপি সরকারের থেকে মঙ্গলবার রাতে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। যার জেরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর মুখে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিংহ সাইনির সরকার।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও নিশ্চিন্তে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সাইনি। জানিয়েছেন, তাঁর সরকারের কোনও সঙ্কট নেই। যদিও সাইনি সরকারের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বলে জানিয়ে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছেন প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা। প্রসঙ্গত, শুধু সমর্থন প্রত্যাহারই নয়, তিন নির্দল বিধায়ক— রণধীর গোলান (পান্ডুরি), ধর্মপাল গোন্ডার (নিলোখেরি) এবং সোমবীর সিংহ সঙ্গওয়ান (দাদরি) প্রকাশ্যে কংগ্রেসকে সমর্থনের ঘোষণাও করেছেন।
গত ১০ বছর ধরে হরিয়ানায় বিজেপি ক্ষমতাসীন। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা আঁচ করে মনোহরলাল খট্টরকে সরিয়ে গত মার্চে সাইনিকে মুখ্যমন্ত্রী করেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সে সময়েই লোকসভার আসন বণ্টন নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে হরিয়ানায় এনডিএ সরকার ছেড়ে বেরিয়ে যায় দুষ্মন্ত চৌটালার জননায়েক জনতা পার্টি (জেজেপি)। এর পর থেকেই নির্দল বিধায়কদের ভরসায় সরকার বাঁচিয়ে রেখেছেন সাইনি।
হরিয়ানা বিধানসভার সদস্য সংখ্যা হল ৯০। দু’টি পদ খালি থাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ম্যাজিক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫। স্পিকার-সহ বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৪০। পাশে চার নির্দল বিধায়ক। ফলে জাদুসংখ্যা থেকে এক জন বিধায়ক কম রয়েছে। বিরোধী শিবিরে কংগ্রেসের ৩০, জেজেপির ১০ এবং আইএনএলডির ১ জন বিধায়কের পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন তিন নির্দল।
একদা জোট সঙ্গী জেজেপি জানিয়েছে, বিধানসভা শক্তি পরীক্ষা হলে তারা বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেবে। সাইনিকে হরিয়ানার ইতিহাসে দুর্বলতম মুখ্যমন্ত্রী বলে আক্রমণ শানিয়েছেন জেজেপি প্রধান তথা প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত। যদিও মুখ্যমন্ত্রী সাইনির দাবি, ‘‘সরকার পড়ে যাওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। অন্য নির্দল বিধায়কদের সমর্থন পাশে রয়েছে।’’ একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা হলে জেজেপির ১০ বিধায়কের মধ্যে অন্তত চার জন বিজেপির পাশে থাকবেন। জেজেপি বিধায়ক রামনিবাস সূর্যখেড়া এবং যোগিরাম শিহগ ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে বিজেপিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে হরিয়ানা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হুডা এখনও সাইনি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিস জমা দেননি। আগামী অক্টোবরে হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচন। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস মনে করছে, আর পাঁচ-ছ’মাসের জন্য ওই সরকার ফেলে আখেরে লাভ হবে না। বরং সেখানে লোকসভায় কংগ্রেস ভাল ফল করলে বিধানসভায় বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাবে। তা ছাড়া, বিধানসভা নির্বাচন হতে যে হেতু ছ’মাসের কম সময় বাকি, তাই নতুন করে সরকার গড়ার সুযোগ কংগ্রেস পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়। উল্টে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। সে ক্ষেত্রে সহানুভূতির ভোট পেতে পারে পদ্মশিবির। সেই সুযোগ দিতে চায় না কংগ্রেস।