(বাঁ দিক থেকে) দেবেন্দ্র ফডণবীস, একনাথ শিন্ডে এবং অজিত পওয়ার। —ফাইল চিত্র।
হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোর পরে বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে দেখা করলেন মহারাষ্ট্রের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা (শিন্ডে) নেতা একনাথ শিন্ডে। আর সেই সঙ্গেই মরাঠা রাজনীতিতে ১০ দিনের টানাপড়েনের ইতি হওয়ার বার্তা মিলল।
তবে বিজেপি-শিন্ডেসেনা-এনসিপি (অজিত)-এর জোট মহাজুটির একটি সূত্র জানাচ্ছে, দফতর ভাগাভাগি নিয়ে এখনও কিছু মতভেদ থাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় মুম্বইয়ের আজ়াদ ময়দানে পুরো মন্ত্রিসভা শপথ না-ও নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিজেপির ফডণবীস মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন। তাঁর সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন দুই সহযোগী দলের দুই প্রতিনিধি। এনসিপির তরফে উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন অজিত। কিন্তু শিন্ডেসেনার প্রতিনিধি কে হবেন? প্রথমে শোনা গিয়েছিল শিন্ডে রাজি নন। তাঁর পুত্র তথা সাংসদ শ্রীকান্ত ওই পদে বসতে পারেন। কিন্তু সোমবার শ্রীকান্ত সরাসরি তেমন সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিন্ডে উপমুখ্যমন্ত্রী পদ গ্রহণে রাজি হয়েছেন বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রে বিজেপির আর এক সহযোগী আরপিআই(এ) প্রধান তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস অঠওয়ালে দাবি করেছেন, শিন্ডে উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব গ্রহণে রাজি হয়েছেন। প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুরে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীকে মহারাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযোগ করায় মুখ্যমন্ত্রিত্বের ব্যাপারে রফাসূত্র পাওয়া গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু বিকেলেই অসুস্থতার কথা বলে শিন্ডে বৈঠক বাতিল করে দেন বিজেপির ফডণবীস ও অজিতের সঙ্গে। তার ফলে চলতি অচলাবস্থা আদৌ কেটেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার দুপুরে ঠাণের একটি হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান শিন্ডে। এর পরে মুম্বইয়ে নিজের বাড়িতে যান। সেখানেই ফডণবীসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। অজিতও মঙ্গলবার দিল্লি থেকে মুম্বই ফিরেছেন। শিন্ডেসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় শিরসত বলেন, ‘‘তিন নেতার কথা হয়েছে। সমস্যা মিটে গিয়েছে।’’ বিজেপি সূত্রের খবর, রফা অনুযায়ী বিধায়ক সংখ্যার আনুপাতিক হিসেবে বিজেপি ২১-২২, শিন্ডেসেনা ১২-১৩ এবং এনসিপি (অজিত) ৯-১০টি মন্ত্রিপদ পেতে পারে। তবে দফতর বণ্টন নিয়ে আলোচনা এখনও চলছে।
সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে মহারাষ্ট্রের ২৮৮টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন জোটের তিন দল— বিজেপি, শিন্ডেসেনা এবং এনসিপি(অজিত) যথাক্রমে ১৩২, ৫৭ এবং ৪১টি আসনে জিতেছে। সূত্রের খবর, ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী পদ না-ছাড়ার বিষয়টিতে কার্যত অনড় ছিলেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে। বিস্তর দর-কষাকষির পরে শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রীর দৌড় থেকে পিছিয়ে আসার ইঙ্গিত দেন তিনি। নতুন সরকারে কোন দল কী মন্ত্রিত্ব পাবে, তা নিয়ে এখনও জট না কাটায় শিন্ডেশিবির পাল্টা চাপের রণনীতি নিয়েছিল বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু তাতে ‘কাজ’ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। কারণ পরিষদীয় পাটিগণিতের হিসেব বলছে, অজিতের দলকে সঙ্গে পেলেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ১৪৫ পেরিয়ে যাবেন ফডণবীস। তাই কি শেষে সমঝোতায় এলেন শিন্ডে?