আর জি করের ঘটনা সংক্রান্ত বিভিন্ন ছবি লাগানো হচ্ছে বোর্ডে। বুধবার, রোটারি সদনে সম্মেলনের ফাঁকে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে তৈরি হয়েছে জনজাগরণ। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সেই আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রেখেই ছিনিয়ে আনতে হবে নির্যাতিতার ন্যায় বিচার। বুধবার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’ আয়োজিত সম্মেলনে এমনই অঙ্গীকার করলেন উপস্থিত চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে সমাজের প্রতি স্তরে যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তার বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াতে এই জনজাগরণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরলেন সম্মেলনে উপস্থিত প্রায় সকলে।
বুধবার রোটারি সদনে আয়োজিত এই সম্মেলনে আয়োজক চিকিৎসকেরা দাবি করলেন, তাঁদের সংগঠন অরাজনৈতিক। কিন্তু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিগ্রহের প্রতিবাদ থেকে তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে সুষ্ঠু সম্পর্ক তৈরিই এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য। তাই আর জি কর-কাণ্ডের পরে প্রতিবাদের যে জোয়ার জনজাগরণের জন্ম দিয়েছিল, তার সামনের সারিতে সব সময়েই থেকেছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’। আর জি করের নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের দাবিতে তৈরি ‘অভয়া মঞ্চ’-এর সঙ্গে রয়েছে চিকিৎসকদের ওই সংগঠন। এ দিন সম্মেলনের শুরুতে আর জি করের ওই চিকিৎসক-পড়ুয়ার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
আর জি করের ঘটনার পাঁচ মাস পরেও ন্যায়বিচার না পাওয়ার যে অভিযোগ উঠছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এখন ‘বিচার’ ও ‘প্রমাণ’ শব্দ দু’টি হাস্যকর পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেও দাবি করেন সম্মেলনে উপস্থিত ব্যক্তিরা। তাঁদের প্রত্যেকের কথাতেই উঠে আসে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ। এক বক্তার কথায়, ‘‘চোর বলছে, আমি চোর তার প্রমাণ কোথায়? কিন্তু যেখানে প্রমাণের স্থলই ভেঙে ফেলা হয়েছে, সেখানে প্রমাণ আর মিলবে কী ভাবে?’’ আর এক বক্তার কথায়, ‘‘এই সমস্ত বিষয় দেখে নিজেদের প্রতি ঘৃণা হয়। আজ তারই শোক জ্ঞাপন করলাম নীরবতা পালন করে।’’ উপস্থিত ব্যক্তিরা এ-ও দাবি করেন, হুমকি কোনও সংস্কৃতি হতে পারে না। আইনের ভাষায় সেটা ঘৃণ্য অপরাধ। কিন্তু সে বিষয়ে কিছুই করা হচ্ছে না। বরং বিচার চাওয়া অপরাধে পরিণত হয়েছে। যে কারণে দুর্গাপুজোর সপ্তমীতে ন্যায়বিচারের দাবিতে মিছিল করে কয়েক জন আন্দোলনকারীকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে হয়।
আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে দীর্ঘ আন্দোলনে নামা জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের বেশ কয়েক জন সদস্যও এ দিন সম্মেলনে হাজির ছিলেন। আজ, বৃহস্পতিবার আর জি কর-কাণ্ডের পাঁচ মাস পূর্ণ হওয়ার দিনে কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিল করবেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তার পরে পাঁচ মাথার মোড়ে রাতভর অস্থায়ী মঞ্চে চলবে প্রতিবাদ কর্মসূচি। এ দিনের সম্মেলনের আয়োজক সংগঠনের তরফে কৌশিক চাকী, তমোনাশ চৌধুরী, রাজীব পাণ্ডে-সহ অন্যেরা দাবি তোলেন, ‘‘নতুন বছরের শপথ হোক, ন্যায় বিচার ছিনিয়ে আনা।’’