— ফাইল চিত্র।
লোকসভায় বৃহস্পতিবার পেশ হল ওয়াকফ সংশোধনী বিল। আইন সংশোধনের চেষ্টা নিয়ে আগেই সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। এ বার লোকসভায় বিল সংশোধনী উত্থাপনের বিরুদ্ধে নোটিস দিলেন কংগ্রেস সাংসদ কেসি ভেনুগোপাল এবং হিবি ইডেন। সংসদেও বার বার ভারতীয় সংবিধান উদ্ধৃত করে ভিন্ন ধর্মের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করলেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরেই সংসদে ওয়াকফ বিল পেশ হয়েছে। পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তার পর তা সংখ্যালঘু মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হবে বলে সূত্রের খবর। তবে ওয়াকফ প্রসঙ্গ উত্থাপন করা মাত্রই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁরা মনে করছেন, হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি উস্কে দিতেই ওই বিতর্কিত বিল পেশের পরিকল্পনা।
সমাজবাদী পার্টির সাংসদ অবধেশ প্রসাদের মতে, ‘বিলটি ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের জন্য সরকারের একটি প্রচেষ্টা।’ অবধেশ জানিয়েছেন, বিলটি সংসদে পেশ হওয়ার সময়েই বিল সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান খোলসা করবে সমাজবাদী পার্টি। উদ্ধবপন্থী শিবসেনা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলছেন, ‘‘জোটের সকলের সঙ্গে আলোচনা করে বিলটি আনা হচ্ছে তো? জেডিইউ এবং টিডিপি কি এই ওয়াকফ বিল দেখেছে এবং বিল পাশে সম্মতি দিয়েছে? যদি তা না হয়ে থাকে তা হলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। প্রয়োজনে সংশোধন করতে হবে বিল।’’ আরএসপি সাংসদ এনকে প্রেমচন্দ্রন আবার বলছেন, ‘‘সামনেই হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র নির্বাচন রয়েছে। সেই ভোটের কথা ভেবেই ধর্মীয় মেরুকরণের লক্ষ্যে বিলটি আনা হচ্ছে।’’
প্রস্তাবিত সংশোধনটি গ্রাহ্য হলে এর পর থেকে আইনটির নতুন নাম হবে ‘ইউনিফায়েড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট’। এই বিলে পুরনো আইনটিতে ৪৪টি সংশোধন আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে সংশোধনের মূল লক্ষ্য হল একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ নিয়ন্ত্রণ করা। এ ছাড়াও প্রস্তাবিত অন্যান্য সংশোধনগুলির মধ্যে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলের পাশাপাশি প্রতি রাজ্যে ওয়াকফ বোর্ড গঠন, যেখানে মুসলিম মহিলা এবং অমুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
১৯৫৪ সালে প্রথম ওয়াকফ আইন পাশ হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইনে সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের হাতে সব ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়। তার পর থেকেই বার বার প্রশ্ন উঠেছে বোর্ডের একচ্ছত্র অধিকার নিয়ে। সরকারের যুক্তি, এ বার বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আনতে চলতি বিলে ৪৪টি সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে ওয়াকফ আইনের ধারা ৪০ অনুযায়ী, যে কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণার অধিকার ছিল ওয়াকফ বোর্ডের হাতেই। ফলে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বার বার বহু গরিব মুসলিমের সম্পত্তি, অন্য ধর্মালম্বীদের ব্যক্তির সম্পত্তি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের সেই একচ্ছত্র অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও আধিকারিকের হাতে।
ওয়াকফ সংশোধনী অনুয়ায়ী, এই নবগঠিত কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হবেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী। পাশাপাশি, কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যেও আনা হবে রদবদল। নতুন প্রস্তাব বলছে, কাউন্সিলে দু’জন অমুসলিম সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক। থাকবেন দু’জন মহিলা সদস্যও। পাশাপাশি, রাজ্যগুলিতে যে ওয়াকফ বোর্ড গঠন হবে, তা শিয়া ওয়াকফ বোর্ড হলে তাতে সব সদস্য শিয়া হবেন। তেমনি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড হলে তাতে থাকবেন কেবল সুন্নিরাই।
তবে মুসলিম সংগঠনগুলি বলছে, ওয়াকফ বোর্ডের বিতর্কিত জায়গাগুলি বিভিন্ন শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হওয়ায় সে সব সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যেই ওই বিল আনছে কেন্দ্র। জামায়াতে ইসলামী হিন্দের সহসচিব ইনআমুরহমান খানের মতে, গেরুয়া শিবির দীর্ঘ সময় ধরেই দিল্লি-সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সেই কারণেই তড়িঘড়ি পাশ করাতে চাইছে সংশোধনী বিল। যদিও কেন্দ্রের যুক্তি, খোদ মুসলিম সমাজের গরিব এবং মহিলারা নিজেরাই নাকি এত দিন ওয়াকফ আইন সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন।