মুহাম্মদ ইউনূস। — ফাইল চিত্র।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় দণ্ড বাতিল হল মুহাম্মদ ইউনূসের। বুধবার কারাদণ্ড থেকেও খালাস পেয়েছেন নোবেলজয়ী। এমনটাই জানাচ্ছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’।
গত জানুয়ারি মাসেই মুহাম্মদ ইউনূসকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল বাংলাদেশের আদালত। অশীতিপর নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে সে দেশের শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল। ছ’মাসের জেলের সাজাও হয় তাঁর। ঢাকা আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেছিলেন ইউনূস-সহ অন্যেরা। সেই শুনানিতেই বুধবার নতুন রায় জানিয়েছে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল।
ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লা আল মামুন ‘প্রথম আলো’কে জানিয়েছেন, ইউনূস-সহ মামলায় প্রাথমিক ভাবে দোষী সাব্যস্ত হওয়া চার জনকেই বুধবার বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে আদালত।
বাংলাদেশের
সমাজকর্মী তথা একমাত্র নোবেলজয়ী ইউনূসের বয়স এখন ৮৪। তাঁর সংস্থা গ্রামীণ
টেলিকমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শ্রম আইন লঙ্ঘন করে বেআইনি ভাবে কাজ চালানোর মামলা
চলছিল। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী যে কোনও সংস্থায় কর্মীদের কল্যাণমূলক তহবিল
তৈরি করতে হয়। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকমে ওই তহবিলের ব্যবস্থা ছিল না। এ ব্যাপারে
ইউনূসকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি লাভের অর্থের জন্য সংস্থা চালান না। তাই তাঁর সংস্থার
ক্ষেত্রে ওই নিয়ম খাটে না। এর পরেই ইউনূস-সহ তাঁর সংস্থার তিন কর্মী আশরাফুল হাসান,
নুর জাহান বেগম এবং মহম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের
অভিযোগে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি চার জনকে দোষী সাব্যস্ত
করে ঢাকা আদালত। ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা হয়
প্রত্যেকের। এর পরেই নানান আন্তর্জাতিক মহল থেকে আসতে শুরু করে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
ইউনূসের মামলায় আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও দাবি করেন তাঁর অনুগামীরা।
যদিও ঢাকা আদালতের নির্দেশের পর ইউনূস নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছিলেন। তাঁর আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুনও জানিয়েছিলেন, আদালতে তাঁরা সুবিচার পাননি। এর পরেই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে আবেদন করেন তাঁরা।
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন ইউনূস। তাঁকে ওই সম্মান দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে তাঁর তৈরি মাইক্রোফিন্যান্স ব্যাঙ্কের জন্য। ওই ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে ইউনূস বাংলাদেশের লক্ষাধিক দরিদ্র মানুষকে দারিদ্রসীমা থেকে টেনে তুলেছেন বলে মনে করেছিল নোবেল প্রদানকারী সংস্থা। যদিও তাঁর নিজের দেশের সরকারের মনোভাব ছিল অন্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই ইউনূসের সমালোচনা করেছেন প্রকাশ্যে। এমনকি, ইউনূসকে ‘গরিবের রক্তচোষা’ বলতেও ছাড়েননি তিনি। ভাগ্যের কী পরিহাস! গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে ক্ষমতার কুর্সিতে রদবদল হওয়ায় শেখ হাসিনার শূন্যস্থানে বসতে চলেছেন সেই ইউনূসই।