সেনার তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে সেনাবাহিনী নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেয় না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে তাদের মনোভাব দৃঢ়। —প্রতীকী চিত্র।
৩ পরিযায়ী শ্রমিককে সন্ত্রাসবাদী বলে ভুয়ো সংঘর্ষে (ফেক এনকাউন্টার) হত্যার ঘটনায় সেনার এক ক্যাপ্টেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দিল সেনা আদালত। সোমবার সেনাবাহিনীর সূত্র উদ্ধৃত করে একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে ২০২০ সালে কাশ্মীরের আমশিপোরায় ৩ শ্রমিক নিহত হন সেনার গুলিতে। ওই ঘটনায় সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে ভুয়ো এনকাউন্টারের অভিযোগ ওঠে। ভূপেন্দ্র সিংহ নামে ওই ক্যাপ্টেন আফস্পা-র অপব্যবহার করে এই এনকাউন্টারের নির্দেশ দেন। তাই তাঁর যাবজ্জীবন সাজার সুপারিশ করেছে একটি সেনা আদালত। এখন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষ এই সাজার অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করছেন বলে খবর।
প্রসঙ্গত, করোনাবিধি শিথিল হওয়ার পরে রাজৌরির ৩ বাসিন্দা কাশ্মীরের সোপিয়ানে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন। এঁরা হলেন ইমতিয়াজ আহমেদ, আব্রার আহমেদ এবং মোহাম্মদ ইব্রার। ২০২০ সালের ১৮ জুলাই সোপিয়ানে একটি ভুয়ো সংঘর্ষ হয়। তাতে প্রাণ হারান ওই ৩ জন। আমশিপোরায় নিহত হওয়া এই ৩ যুবকের ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই শুরু হয় বিতর্ক।
নিহতদের পরিবার দাবি করে, সাধারণ কাজ নিয়ে সোপিয়ানে গিয়েছিলেন ৩ জন। উগ্রপন্থী কার্যকলাপের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু তাঁদেরই ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাক্রমে নাম জড়ায় রাষ্ট্রীয় রাইফেলস্-এর ৬২ নম্বর বাহিনীর। সেনাবাহিনীর তরফে শুরু হয় তদন্ত। অন্য দিকে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের তরফে বিশেষ তদন্তকারী দল এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। তারা মোট ৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। তাতে নাম ছিল ক্যাপ্টেন ভূপেন্দ্র সিংহের।
সম্প্রতি সেনার তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে সেনাবাহিনী নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেয় না। মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যে কোনও খারাপ কাজের ক্ষেত্রে তাদের মনোভাব দৃঢ়। এর পরই সামনে আসে ওই ক্যাপ্টেনের যাবজ্জীবন সাজার বিষয়টি।
সেনা আদালতের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন পিডিপি সভাপতি তথা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের জুলাই মাসের মধ্যে সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর বিরুদ্ধে ১১৬টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে শুধু ১০৮টি অভিযোগ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে সেনার তরফে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে অভিযোগ জানার জন্য আলাদা করে একটি সেল তৈরি হয়েছে।