COVID-19

দেশের কোভিড যোদ্ধাদের ৫০ শতাংশ টিকা না নিলেও অন্য ছবি বাংলায়, দাবি প্রশাসনের

কোভিড যোদ্ধারা সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন। সংক্রমণ ও তার প্রভাব কাছ থেকে দেখেছেন। তারপরেও দেখা যাচ্ছে, অর্ধেক কর্মী টিকা নেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২১ ১৩:১৫
Share:

কোভিড টিকাকরণ চলছে দেশে।

দেশে দৈনিক কোভিড টিকাকরণ বেড়েছে। গত ১৫ মার্চ, সোমবার তা পৌঁছেছে ৩০ লক্ষে। বলা হচ্ছে, যা এ যাবত একদিনে সর্বাধিক। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় টিকাকরণ হয়েছে ২০,৭৮,৭১৯ জনের। কিন্তু তার পরেও দেশের কোভিড যোদ্ধাদের প্রায় অর্ধেক, অর্থাত্ দেড় কোটি কর্মী এখনও টিকা নেননি। তেমনই দাবি করা হয়েছে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে। কিন্তু অন্য ছবি দেখা যাচ্ছে বাংলায়। এমনটাই দাবি করা হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের তরফে।

Advertisement

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, বাংলা বাদে অন্যত্র কেন সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে এই অনীহা দেখা যাচ্ছে? বিশেষ করে যাঁরা কোভিড যোদ্ধা, তাঁরা তো সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন। এই সংক্রমণ ও তার প্রভাব কাছ থেকে দেখেছেন। তারপরেও রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অর্ধেক কর্মী টিকা নেননি। তাহলে কি টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ভয় বা উদ্বেগ কাজ করছে? অনেকে আবার এ-ও বলছেন, ভারতে পোলিও বা অন্যান্য টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেভাবে সরকারের তরফে প্রচার করা হয়, তেমনটা করা হয়নি এক্ষেত্রে। তার জন্যই কি সচেতনতা গড়ে উঠতে দেরি হচ্ছে?

টিকাকরণের ছবিটা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ঠিক তেমন নয়, বরং উল্টো বলেই দাবি করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেছেন, “টিকাকরণ নিয়ে আমরা খুবই সন্তুষ্ট। এই পর্যায়ে টিকা নেওয়ার জন্য আমরা ৭ লক্ষ লোকের তালিকা তৈরি করেছিলাম। তার মধ্যে ৮৫ শতাংশ ইতিমধ্যেই টিকা নিয়েছেন। সেই ৮৫ শতাংশের মধ্যে ৯০ শতাংশই আবার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। আমরা দেশকে দেখিয়েছি যে আমরাই সকলের আগে।” পাশাপাশিই যোগ করেছেন, “এত বেশি হারে টিকাকরণ সম্ভব হয়েছে। কারণ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বিভিন্ন জেলায় সবাইকে টিকা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে পেরেছেন।”

Advertisement

একই সুর শোনা গিয়েছে রাজ্যের শিক্ষা-স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয় চক্রবর্তীর গলাতেও। তিনি বলেছেন, “বাংলায় টিকাকরণ নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ৯৩ শতাংশ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী টিকা নিয়েছিলেন। এখন সংখ্যাটা হয়তো ৯৫ শতাংশ।” তাহলে কি বাংলায় টিকা নেওয়ার জন্য প্রচার জোরকদমে হয়েছে? তার ফলেই কি ছবিটা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রের উল্টো? অজয়ের জবাব, “টিকাকরণের জন্য আলাদা করে প্রচার করার দরকার পড়েনি। কারণ সাধারণ মানুষের তুলনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেক বেশি সচেতন। যদিও তাঁদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই এখনও টিকা নেননি। তাঁদের কারও কো-মর্বিডিটি রয়েছে। কিংবা অন্য কোনও ব্যক্তিগত সমস্যা রয়েছে।”

ভারতে টিকাকরণ শুরু হওয়ার সময় কেন্দ্র জানিয়েছিল, প্রথম পর্যায়ে ৩ কোটি কোভিড যোদ্ধাকে টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু শুরুতেই দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করে যে, অনেক কর্মী টিকা নেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দিল্লিতে তো চিকিৎসকদের একটা অংশ কেন্দ্রকে চিঠি লিখে জানান যে, তাঁরা সিরাম ইন্সটিটিউটের কোভিশিল্ড টিকা নিতে প্রস্তুত। কিন্তু দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন টিকা নেবেন না। সেই সময় কেন্দ্রের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল, কেউ নিজের পছন্দ মতো টিকা নিতে পারবেন না। পরবর্তীকালে অবশ্য ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই ভারতে আরও ৪-৫টি টিকা চলে আসবে। তখন নিজের পছন্দ অনুযায়ী টিকা নিতে পারবেন সবাই।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে ৩,৭১,৪৩,২৫৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকাকরণের তৃতীয় পর্যায়ে মূলত ৬০ বছরের বেশি বয়সি ও ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের মধ্যে যাঁদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে তাঁদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত মোট টিকার ৩৩ শতাংশ নিয়েছেন এই বয়ঃসীমার মধ্যে থাকা মানুষ।

যদিও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বয়স ভিত্তিক টিকা না দিয়ে প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী টিকা দিতে হবে। অর্থাৎ যে সব জায়গায় সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, সেখানে টিকাকরণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্য ও জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের আরও বেশি টিকাকরণের আওতায় আনতে হবে। তার জন্য প্রচার আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement