(বাঁ দিকে) শেখ হাসিনা এবং মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর কথা বলে ভারতকে চিঠি পাঠাল বাংলাদেশ। সোমবার এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, তৌহিদ জানিয়েছেন “প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বাংলাদেশ ফেরত চেয়েছে। ভারতকে এই বিষয়ে জানানো হয়েছে।” ঢাকা থেকে দিল্লিতে এ বিষয়ে ‘নোট ভারবাল’ (কূটনৈতিক বার্তা) পাঠানো হয়েছে বলেও জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারের পতন হয়। বাংলাদেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। সাময়িক ভাবে তিনি আশ্রয় নেন ভারতে। হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সাইদুর রহমানের খুনের ঘটনায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে সে দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ২৩৩টি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ১৯৮টি ক্ষেত্রে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। হাসিনা-সহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে আগেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল।
অক্টোবরের শেষের দিকে আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘ফিনানশিয়াল টাইমস্’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও ইউনূস তাঁর অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, এখনই হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর কোনও ভাবনা নেই তাঁদের। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আদালতের রায় ঘোষণা হলে আমরা ভারতের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে তাঁকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করব।”
তবে এ সবের মধ্যেই হাসিনাকে ঢাকায় ফেরানোর জন্য ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। জানা যায়, ইতিমধ্যে হাসিনার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে আবেদনও জানিয়েছে ইউনূসের প্রশাসন। এরই মধ্যে সোমবার দুপুরে ইউনূস সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, হাসিনাকে ফেরত চেয়ে তারা চিঠি পাঠিয়েছেন ভারতে।
বাংলাদেশে হাসিনার পতনের পর থেকে দিল্লি ও ঢাকার কূটনৈতিক সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁর। সৌজন্য সাক্ষাৎ হয় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদের সঙ্গেও। দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর জমাট বাধা মেঘ কাটানোর চেষ্টা হয় বৈঠকে। ভারত এবং বাংলাদেশ দু’পক্ষই জানায়, কূটনৈতিক স্তরে একে অপরের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাইছে।
সম্প্রতি আমেরিকা এবং ব্রিটেনে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের উদ্দেশে ভার্চুয়ালি বার্তা দিয়েছেন হাসিনা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন নিজের ভাষণে। হাসিনার এই ধরনের কার্যকলাপেও না-খুশ ইউনূসের সরকার। এর পরে বিদেশ সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং (স্থায়ী) কমিটির বৈঠকে মিস্রী জানান, ভারতে থেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে যে বিবৃতি দিয়েছেন তা সমর্থন করে না নয়াদিল্লি।