চিত্রাঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।
দুর্গাপুজোর আগে কেউ রোগা হওয়ার আশায়, কেউ আবার শুধুমাত্র ফিট হতেই ভর্তি হচ্ছেন জিমে। তবে অফিসের ব্যস্ততার কারণে কিংবা সংসারের হাজার কাজ সামলে অনেকেই আবার জিমে ভর্তি হতে পারেন না। এ দিকে, পুজোর আগে একটু ফিট না হলেই নয়। বাড়িতে আধ ঘণ্টা সময় বার করে যোগাসন অভ্যাস করতে পারেন। কেবল রোগা হতেই নয়, শরীরের নানা সমস্যার সমাধান কিন্তু দূর হতে পারে নিয়ম করে যোগাসন করলে। সঠিক নিয়ম মেনে যোগাসন করলে তবেই মিলবে ফল। পুজোর আগে শরীর চাঙ্গা রাখতে কোন কোন আসন অভ্যাস করতে পারেন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন। রইল আসন আসান করার পদ্ধতির হদিস। আজকের আসন অর্ধ বজ্রাসন।
এই আসনকে বজ্র ও অশনি ভঙ্গিমাও বলা হয়। ‘বজ্রনদী’ কিংবা ‘বজ্রপথ’ সাধারণ অবস্থা থেকে উপলব্ধির এক উজ্জ্বল পথ। আকাশের বিদ্যুতের মাটিতে নেমে আসার আলোকোজ্জ্বল পথের মতোই মানুষ এই আধ্যাত্মিক অনুভবের পথে অন্ধকার থেকে আলোর ঠিকানা খুঁজে পায়। নিয়মিত এই আসন অভ্যাসের সঙ্গে নাকি আধ্যাত্মিক সম্পর্কও আছে। ইসলাম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা প্রার্থনা করার সময় বজ্রাসনের ভঙ্গিতেই বসেন।
কী ভাবে করবেন?
· ম্যাটের উপর হাঁটু গেড়ে মেরুদণ্ড টানটান করে বসুন। নিতম্ব থাকুক গোড়ালির উপর। পায়ের আঙুলে বেশি চাপ দেবেন না।
· এ বারে হাঁটুর উপরে হাত রাখুন। এই অবস্থানে পিঠ ও মাথা একই সরলরেখায় রাখার চেষ্টা করুন। তবে এই ভাবে থাকার জন্য যাতে বাড়তি চাপ না পড়ে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই অবস্থানে মেরুদণ্ড কিছুটা ধনুকের মত বেঁকে থাকবে। কিন্তু বেশি বাঁকালে চাপ পড়বে, খেয়াল রাখবেন।
· এ বারে চোখ বন্ধ করে হাত সহ সারা শরীর শিথিল করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। নাক দিয়েই শ্বাস নেবেন, মুখ দিয়ে নয়।
· এই অবস্থায় দু’মিনিট থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করুন। পরে সময় আরও বাড়ানো যেতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, মনে মনে গুনে ১৫–২০ বার শ্বাস নিন।
· তার পর চোখ খুলুন। পা সোজা করে ছড়িয়ে দিন, দরকার হলে গোড়ালি নাড়াচাড়া করে নিন।
সতর্কতা
আসন করার সময় যদি ঊরুতে ব্যথা হয়, গোড়ালির দূরত্ব সামান্য বাড়িয়ে নিতে পারেন। আসন শুরু করলে অনেকের গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে একটা নরম ও পাতলা বালিশ বা পাট করা চাদর গোড়ালির উপর রাখতে পারেন।
কেন করবেন?
বজ্রাসন অভ্যাস করলে শ্রোণিচক্র অর্থাৎ তলপেট ও কোমরের নিচের দিকে রক্তচলাচলের মাত্রা বাড়ে। স্নায়ুর কার্যকারিতা বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলের পেশি সুদৃঢ় করতেও সাহায্য করে বজ্রাসন। হার্নিয়া, অর্শ বা পাইলসের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করে এই আসন। হাইপার অ্যাসিডিটি ও পেপটিক আলসারের মতো সমস্যা দূর করে হজমশক্তি বৃদ্ধি করতেও বজ্রাসন উপকারী। মেয়েদের ঋতুচক্রের সমস্যা দূর করতে ও স্বাভাবিক প্রসব হতে সাহায্য করে এই আসন। নিয়মিত বজ্রাসন অভ্যাস করলে কোনও বাড়তি চেষ্টা ছাড়াই মেরুদণ্ড সোজা থাকে। সায়াটিকা ও স্যাক্রাল সংক্রমণ প্রতিরোধেও এই আসন কাজে আসে।