চিত্রাঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।
দুর্গাপুজোর আসতে মাসখানেক বাকি মানেই চারদিকে রোগা হওয়ার হিড়িক চোখে পড়ে। শহরের জিমগুলিতে মেম্বারশিপ নেওয়ার তোড়জোড় শুরু। কারও চাই কৃতি শ্যাননের মতো ছিপছিপে শরীর, কেউ টাইগার শ্রফের মতো চেহারা বানাতে চান। তবে অফিসের ব্যস্ততার ও সংসারের হাজারটা কাজ সামলে জিমে যাওয়ার সময় কোথায়? এ দিকে, পুজোর আগে একটু ফিট না হলেই নয়। বাড়িতে আধ ঘণ্টা সময় বার করে যোগাসন অভ্যাস করুন। কেবল রোগা হতেই নয়, শরীরের নানা সমস্যার সমাধান কিন্তু দূর হতে পারে নিয়ম করে যোগাসন করলে। সঠিক নিয়ম মেনে যোগাসন করলে তবেই মিলবে ফল। পুজোর আগে শরীর চাঙ্গা রাখতে কোন কোন আসন অভ্যাস করতে পারেন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন। রইল আসন আসান করার পদ্ধতির হদিস। আজকের আসন পদ সঞ্চালনাসন।
এই আসনটি করা হয় ঠিক সাইক্লিং করার ভঙ্গিতে। শোয়া অবস্থায় পায়ের সঞ্চালন পেট, মেরুদণ্ডের নীচের দিক ও পায়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সামগ্রিক ভাবে নমনীয়তা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
কী ভাবে করবেন?
· পা সোজা করে ম্যাটের উপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত থাকুক পাশে, হাতের তালু যেন মাটির দিকে থাকে। এই অবস্থানে চোখ বন্ধ করে কয়েক মিনিট আরাম করুন।
· বাঁ পা মাটিতে সোজা করে রেখে ডান পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে বুকের কাছে আনুন। এ বারে বুকের কাছ থেকে পা সোজা করে উপরের দিকে তুলে নিন।
· কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ডান পা মাটির কাছাকাছি নামান। তবে লক্ষ রাখবেন, গোড়ালি যেন মাটি স্পর্শ না করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবার ডান পায়ের হাঁটু ভাঁজ করে বুকের কাছে নিয়ে আসুন, এক বারের সাইক্লিং মুভমেন্ট শেষ হল। এক পায়ে সাইকেল প্যাডেল করার সময়ে যে ভাবে পা চালানো হয়, সেই ভাবেই পায়ের সঞ্চালন হবে।
· এই ভাবে ৫–৭ বার ডান পায়ের সাইক্লিং মুভমেন্ট অভ্যাস করতে হবে। ব্যায়ামটি করার সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন।
· এ বারে আবার ডান পা উপরে তুলে বিপরীত দিকে প্যাডেল ঘোরানোর মতো করে পা ঘোরাতে হবে। ৫–৭ বার এই রিভার্স সাইক্লিং অভ্যাস করুন।
· তার পর ডান পা মাটিতে রেখে শুরুর অবস্থানে ফিরে এসে মিনিটখানেক বিশ্রাম নিন।
· একই পদ্ধতিতে বাঁ পা ভাঁজ করে বুকের কাছে এনে ও ডান পা সোজা রেখে সাইক্লিং অভ্যাস করুন ৫-৭ বার।
· বাঁ পায়ে রিভার্স সাইক্লিং করতে হবে ৫–৭ বার। শুরুর অবস্থানে ফিরে বিশ্রাম নিন।
· এই বার দুই পা ভাঁজ করে একসঙ্গে সাইকেল চালানোর ভঙ্গিতে পা ঘোরান ৫–৭ বার।
· বিশ্রাম নিয়ে উল্টো দিকে সাইকেল চালানোর মতো করে দু’পা চালান ও বিশ্রাম নিন। সম্পূর্ণ ব্যায়ামটি করার সময়ে স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হবে।
সতর্কতা
এই আসনটি করার সময়ে কোনও রকম মানসিক চাপ নেবেন না। হার্টের অসুখ, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, সায়টিকা, স্লিপ ডিস্ক ইত্যাদির মতো শারীরিক সমস্যা থাকলে পদ সঞ্চালনাসন করবেন না। শুরুতে এই আসনটি জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু মাথায় রাখবেন সাইকেলের প্যাডেল চালানোর কথা, তা হলেই আর সমস্যা হবে না।
কেন করবেন?
যে কোনও পায়ের ব্যায়াম ও আসন স্ট্যামিনা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। নিয়মিত এই আসন অভ্যাস করলে হাঁটু, নিতম্ব, পিঠ ও কোমর-সহ পেটের সমস্ত পেশি টানটান হয়। ফলে হজম শক্তি বাড়ে এবং মেরুদণ্ডের সংলগ্ন পেশিরও ব্যায়াম হয়। নিয়মিত অভ্যাস করলে রোজের জীবনে নানা কাজকর্মে অফুরান শক্তি ও উৎসাহ বাড়বে। হাঁটু ও কোমরে ব্যথা থাকলে এই আসনটি নিয়মিত করলে উপকার পাওয়া যায়।