স্থূলত্বের সঙ্গে পিসিওএসের সত্যিই কোনও যোগ আছে? ছবি: সংগৃহীত।
‘পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রম’!
কিছু দিন আগে পর্যন্ত এই রোগের নাম লোকমুখে তেমন শোনা যেত না। কিন্তু এখন উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবিটিসের মতো পিসিওএস-ও মহিলাদের জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে।
মূলত নারীশরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে, বিপাকহার-জনিত সমস্যা থাকলে পিসিওএসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে। ঋতুস্রাব চলাকালীন পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হয়। ঋতুচক্রেও নানা রকম পরিবর্তন আসে। এ ছাড়া মুখে, দেহের অন্যান্য জায়গায় অবাঞ্ছিত রোমও গজাতে দেখা দেয়।
চিকিৎসকেরা বলছেন, স্থূলত্ব কিংবা রক্তে বাড়তি শর্করা থেকে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে কোনও কোনও মহিলার ক্ষেত্রে জিনগত ফ্যাক্টরও কাজ করে। কারও ক্ষেত্রে আবার প্রদাহজনিত সমস্যার বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়। ডিম্বাশয়ের এই সমস্যা যে ঠিক কী কারণে হয়, তা নিশ্চিত ভাবে বলা মুশকিল।
তবে মহিলাদের মধ্যে প্রচলিত একটি ধারণা রয়েছে। মোটা হলে বা দেহের ওজন বাড়তে থাকলেই পিসিওএসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আর যাঁরা রোগা, তাঁদের এই ধরনের সমস্যা হয় না। মুম্বইয়ের নমাহ্ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অপর্ণা গোভিল ভাস্কর বলছেন, “পিসিওএসের সঙ্গে স্থূলত্বের যোগ আছে ঠিকই। তবে মোটা মানেই পিসিওএস হবে, এ ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়।”
পিসিওএসের সঙ্গে জড়িত কোন ধারণাগুলি আদতে যুক্তিসঙ্গত নয়?
১) পিসিওএসের মতো রোগের একমাত্র কারণ স্থূলত্ব:
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রমের অনেকগুলি রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে একটি হল ওবেসিটি বা স্থূলত্ব। তবে হরমোনঘটিত এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য শুধু এই কারণটিকে দায়ী করা যায় না। জিন, ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা, অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলেও পিসিওএসের সমস্যা বাড়তে পারে।
২) পিসিওএস আক্রান্ত হলেই ওজন বাড়বে:
সকলের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। মোটা কিংবা ভারী ওজনের মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তবে স্বাভাবিক ওজন এবং ‘বিএমআই’ বা ‘বডিমাস ইনডেক্স’ নিয়ন্ত্রণে থাকার পরেও অনেক মহিলা এই রোগে আক্রান্ত হন।
৩) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই পিসিওএস সেরে যাবে:
ওজন ঝরালে শারীরিক সমস্যাগুলি কিছুটা হলেও সামলানো যায়। কিন্তু পিসিওএসের মতো রোগ চিরতরে নিরাময় হয় না। কেউ ডায়েট করে, আবার কেউ শরীরচর্চা করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন। তার ফলে হরমোনের ক্ষরণ এবং কার্যকারিতার মধ্যে সমন্বয় বজায় থাকে। জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে পারলেও খানিকটা সুবিধা হয়। কিন্তু, না খেয়ে হাড় বার করে ফেললেই যে পিসিওএস মুক্ত হতে পারবেন, এমন ধারণা ভ্রান্ত।