নিজের কথা বললেন ঊষসী।
১৭ ফেব্রুয়ারি ঊষসী চক্রবর্তীর জন্মদিন। ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাবা বামপন্থী নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তীর জন্মদিন। গত দু’বছর ধরে অভিনেত্রীর জন্মদিনে তাঁর বাবা আর নেই। চলতি বছর গোয়ায় বন্ধুদের নিয়ে নিজের মতো করে এই প্রথম উদযাপনে মেতেছিলেন তিনি। ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট, পাশে পানীয়... বিকিনিতে সেজে গোয়ায় জন্মদিনে দেখা গিয়েছিল ‘জুন আন্টি’কে। সেই ছবি ফেসবুকে দিতেই হেনস্থার শিকারও হন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে সেই ক্ষোভ উগরেও দিয়েছিলেন সঙ্গে সঙ্গে। বাবার জন্মদিনে শ্যামল চক্রবর্তীর আদর্শ বর্ণনা করে ঊষসী সেই কটাক্ষের সমুচিত জবাব দিলেন ফেসবুকেই।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই অভিনেত্রীর ফেসবুক পাতায় বাবা-মেয়ের রঙিন, সাদা-কালো বহু সময়ের ছবি।শ্যামল-কন্যা এ ভাবেই যেন ফিরে দেখতে চেয়েছেন তাঁর বাবাকে। সেই সঙ্গে বামপন্থী বাবার জীবনাদর্শ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। সেখানেই ঊষসীর স্পষ্ট দাবি, ‘আমার বাবাকে যাঁরা ঘনিষ্ট ভাবে চিনতেন তাঁরা অবশ্যই জানেন, উনি কতটা উদার মনের মানুষ। এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কতটা সহজে মিশতে পারতেন। সে কারণেই বোধহয় ওঁর বন্ধু তালিকা ছিল দীর্ঘ। এবং তাঁদের মধ্যে অনেকের বয়স আমার চেয়েও কম ছিল। আমার বাবা কোনও দিন আমার জীবনকে কোনও ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেননি। আমি কী পোশাক পরব, এই নিয়ে কোনও মতামতও দেননি। তাই বামপন্থী পরিবারের মেয়েরা হাফপ্যান্ট পরতে পারবেন না বা সমুদ্র স্নানে গিয়ে সাঁতারের পোশাক পরতে পারবেন না, এ হেন হাসির কথা আমার বাবা তো দূরস্থান কোন আন্তর্জাতিক বা জাতীয় বামপন্থার বইতেও আমি কস্মিনকালে শুনিনি বা পড়িনি।‘
নিজের জন্মদিনেই তাঁর সপাট জবাব ছিল, ‘‘গোয়ায় গিয়ে কি বোরখায় সর্বাঙ্গ ঢাকব? আমি রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কিন্তু শাড়িই পরব।’’ মঙ্গলবার তাঁর আরও শানিত আক্রমণ, ‘বামপন্থা সমাজতন্ত্রের কথা বলে। খেটে খাওয়া মানুষের দাবি আদায়ের কথা বলে। লিঙ্গ সাম্যের কথা বলে। এবং সমাজের রক্তচক্ষু বা অঙ্গুলি হেলনকে তোয়াক্কা না করে মেয়েদের নিজের শর্তে বেঁচে থাকার কথা বলে। এবং আমিও আমার বাবার কাছে তাই-ই শিখেছি। শিখেছি স্বাধীনভাবে পোশাক নির্বাচন করতে। রবীন্দ্রজয়ন্তীতে, শিক্ষাঙ্গনে, আইনসভায় বা সমুদ্রতটে মানানসই ভাবে সাজতে। সেই সঙ্গে ঘৃণা করতে শিখেছি সেই সব সিউডো বামপন্থার ধ্বজাধারীদের, যাঁরা নিজেদের ভিতরে পিতৃতন্ত্রের বীজ বহন করে মেয়েদের চাল-চলন পোশাক-আশাক নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করে যেখানে সেখানে খাপ পঞ্চায়েত খোলেন।’
বাবার শিক্ষায় শিক্ষিত মেয়ের তাই একান্ত কামনা, পিতৃতন্ত্র দূরে জাক। খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভেদ্য ব্যারিকেড যেন সমস্ত আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।