লালগড়ে বাড়ির সামনে ছত্রধর মাহাতোর স্ত্রী নিয়তি। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতোর গ্রেফতারের পিছনে প্রধান ভূমিকা শুভেন্দু অধিকারীরই— সরাসরি এই অভিযোগ করলেন ছত্রধরের স্ত্রী নিয়তি মাহাতো। নিয়তির আরও দাবি, ইতিপূর্বে জেরার নামে গোটা পর্বে এনআইএ তাঁর স্বামীর উপরে রাজনৈতিক চাপ বজায় রেখেছিল। একই সঙ্গে ছত্রধরের গ্রেফতারের পরে তৃণমূলের ভূমিকা নিয়েও খুশি নন নিয়তি।
সোমবার লালগড়ের আমলিয়ায় গিয়ে দেখা গেল, ছত্রধরের পুরনো মাটির দোতলা বাড়ির দরজা বন্ধ। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ নিয়তি দরজা খুললেন। উঠোনে বসে নিয়তি বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলের ভোট শেষে আমার স্বামীর নন্দীগ্রামে প্রচারে যাওয়ার কথা ছিল। উনি যাতে না যেতে পারেন, সে জন্য শুভেন্দু অধিকারীর পরিকল্পনায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার আমার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
শনিবার রাত তিনটে নাগাদ আমলিয়ার বাড়িতে হানা দেয় এনআইএ-র ৪০ জনের দল। অভিযোগ, গামছা ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরা অবস্থায় ছত্রধরকে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় তারা। ছত্রধর-পত্নী বলেন, ‘‘লালগড় থানার পুলিশকে না জানিয়ে এনআইএ-র দিল্লি থেকে আসা অফিসারেরা কোবরা বাহিনীকে নিয়ে চড়াও হন। আমাকে অ্যারেস্ট মেমো দেখাননি। কী কারণে স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটাও বলেননি। উল্টে আমাদের গালিগালাজ করা হয়।’’ ছত্রধরের আইনজীবী কৌশিক সিংহ জানান, এনআই-র বিরুদ্ধে লালগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নিয়তি।
রাজনৈতিক অভিসন্ধি সংক্রান্ত নিয়তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির সভাপতি তুফান মাহাতো বলেন, ‘‘এনআইএ একটি স্বাধীন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। তারা কী করবে সেটা তাদের বিষয়। ছত্রধরের স্ত্রী ভয় পেয়ে বিজেপিকে জড়িয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।’’
পুরনো খুনের মামলায় পাঁচ বার এনআইএ-র জেরার মুখোমুখি হয়েছিলেন ছত্রধর। নিয়তির দাবি, প্রতিবার জেরার পরে ফিরে ছত্রধর বলতেন, তদন্তকারীরা শুধু রাজনৈতিক বিষয়েই প্রশ্ন করতেন। বলতেন, তৃণমূল করা চলবে না, বিজেপি করতে হবে। লালগড়ে নড্ডার সভায় লোক হয়নি, অথচ তৃণমূলের সভায় ভাল জমায়েত হচ্ছে, এ জন্যও নাকি ছত্রধরকে দায়ী করেন এনআইএ-র অফিসাররা।
তবে ছত্রধর গ্রেফতার হওয়ার পরে তৃণমূলের জেলা ও ব্লক স্তরের নেতারা খোঁজ না নেওয়ায় ব্যথিত নিয়তি। তিনি বলেন, ‘‘শ্যামলকে (লালগড় ব্লক তৃণমূল সভাপতি শ্যামল মাহাতো) উনি এত স্নেহ করেন, সেও খোঁজ নিতে এল না। জেলা সভাপতিও খোঁজ নেননি। শুধু জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতো রবিবার বাড়িতে এসেছিলেন।’’
এ প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সুব্রত সাহা বলেন, ‘‘সদ্য ভোট মিটেছে। তাই হয়তো সবাই নিয়তিদেবীর বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতে পারেননি। তবে দল ওঁর পাশে রয়েছে।’’ শ্যামল বলছেন, ‘‘সময় করে উঠতে পারিনি। দু’-একদিনের মধ্যেই যাব।’’