গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বর্তমানের পরে এ বার প্রাক্তন। প্রায় দেড় দশক আগে নন্দীগ্রামে এবং সিঙ্গুরের জমি রক্ষা আন্দোলনের পিছনে ‘কুটিল চিত্রনাট্যের’ অভিযোগ তুললেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামে জমি রক্ষা আন্দোলনের পিছনে ‘চক্রান্ত’ তার জেরে রাজ্যের যুবসমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ হাতছাড়া হওয়া নিয়ে সোমবার এ বিষয়ে একটি লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন বুদ্ধ। তৃণমূল এবং বিজেপি-কে দুষে লিখেছেন, ‘নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরে এখন শশ্মানের নীরবতা। সে সময়ের কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারীরা আজ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে বাংলার যুব সমাজ’।
পাশাপাশি, দেড় দশক আগে বামফ্রন্টের স্লোগানের প্রসঙ্গ তুলে বুদ্ধ লিখেছেন, ‘বামফ্রন্ট সরকারের সময় থেকেই যে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ভাবনা আমরা রাজ্যের মানুষকে বলার চেষ্টা করেছি, তা হল কৃষি আমাদের ভিত্তি-শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। আমরা সেই পথ ধরেই এগিয়েছি’।
ঘটনাচক্রে, নন্দীগ্রামের জমি রক্ষা আন্দোলনে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে রবিবার রেয়াপাড়ায় তৃণমূলের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুষেছিলেন শিশির এবং শুভেন্দু অধিকারীকে। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ ‘বাপ-ব্যাটা’র অনুমতি নিয়েই পুলিশ নন্দীগ্রামে অভিযান চালিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এমনকি, হাওয়াই চটি-পরা পুলিশ ঢোকানোর ‘দায়’ও মমতা চাপিয়ে দেন তাঁদের ঘাড়ে। এমনকি, হাওয়াই চটি-পরা পুলিশ (পুলিশের পোশার পরা দুষ্কৃতী) ঢোকানোর ‘দায়’ও মমতা চাপিয়ে দেন শিশির-শুভেন্দুর ঘাড়ে।
তবে স্থানের উল্লেখ করেও সরাসরি ‘কাল’ এবং ‘পাত্রের’ নাম না করেননি সে সময়ের পুলিশমন্ত্রী বুদ্ধ। ২০০৭ সালে ১৪ মার্চের পুলিশের গুলিতে ১৪ জনের মৃত্যু কিংবা নভেম্বরের ‘সূর্যোদয়’ (নন্দীগ্রামে সিপিএমের পুনর্দখল) প্রসঙ্গ নিয়েও কিছু বলেননি।
রবিবার মমতার মন্তব্যের পরেই নন্দীগ্রামে গুলিচালনার ঘটনা নিয়ে নেটমাধ্যমে প্রচারে নামে সিপিএম। তাদের বক্তব্য, তৎকালীন বিরোধী নেত্রী স্বীকার করে নিলেন যে, ওই ঘটনা তৃণমূলের চক্রান্ত ছিল! কারণ, শিশির-শুভেন্দু এবং মমতা— তিনজনেই তখন বিরোধী তৃণমূলে ছিলেন। বুদ্ধ অবশ্য এর আগেও নন্দীগ্রামের ঘটনার (পুলিশি গুলিচালনা) পিছনে ‘চক্রান্ত’ আছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। পরবর্তী কালে নন্দীগ্রামে পুলিশি অভিযানে গ্রামবাসীদের মৃত্যু নিয়ে দুঃখপ্রকাশও করেছিলেন তৎকালীন পুলিশমন্ত্রী।
নন্দীগ্রাম বিধানসভায় মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু সোমবার ১৪ মার্চের প্রসঙ্গ তুলে খোঁচা দেন তৃণমূল নেত্রীকে। তিনি বলেন, ‘‘উনি নিজে লিখেছেন না অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়েছেন জানি না, তবে ওঁর নন্দী মা (বই)-টি উনি নিজে পড়ুন।’’ সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ফেরেব্বাজ মুখ্যমন্ত্রী। ‘নন্দী মা’-টা পড়ুন, তারপর ওঁর দ্বিচারিতা বুঝতে পারবেন।’’ শিশিরও সোমবার মমতার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তোলেন।