গ্রাইক নিরূপম পাল।
লোকসভা হোক বা বিধানসভা ভোট, প্রার্থী পিছু খরচের হিসেব বেঁধে দেওয়া থাকে নির্বাচন কমিশনের তরফে। চলতি বিধানসভা নির্বাচনে কমিশনের নির্দেশ মতো পশ্চিমবঙ্গে কোনও বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী প্রচারে সর্বাধিক ৩০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা খরচ করতে পারেন।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও এই অঙ্কটা ছিল ২৮ লাখ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণেই কমিশন অঙ্কের পরিমাণ বাড়িয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসেই এই নতুন অঙ্ক ঘোষণা করে কমিশন। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগেই প্রশ্ন ওঠে কমিশনের বেঁধে দেওয়া টাকার পরিমাণ নিয়ে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য ছিল, করোনা পরিস্থিতিতে বাড়তি সতর্কতার জন্য খরচের সীমাও বাড়ানো হোক। সেই দাবি মেনেই ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর সিদ্ধান্ত জানায় কমিশন। তার আগে ভোট প্রচারের খরচ ১০% বৃদ্ধিতে সম্মতি দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পরে ১৯৬১ সালের নির্বাচন বিধি আইন সংশোধন করে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক।
সেই আইনি সংস্কারের পরে বড় রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচনী প্রচারের জন্য খরচ বেড়ে ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকা হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের মতো বড় রাজ্যের জন্যই এই নিয়ম। গোয়া, অরুণাচল প্রদেশ, সিকিমের মতো ছোট রাজ্যে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বর্তমান নিয়মে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থীরা সর্বাধিক ২২ লাখ টাকা খরচ করতে পারেন। এখন কোনও লোকসভা আসনে উপ-নির্বাচন হলেও বড় ও ছোট রাজ্য অনুযায়ী প্রার্থী পিছু খরচের উচ্চসীমায় ফারাক রয়েছে। বড় রাজ্যে ৭৭ লাখ টাকা এবং ছোট রাজ্যের জন্য ৫৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
ভোটের প্রচারে প্রার্থীদের ব্যবহার করা গাড়ি থেকে সমাবেশ সবের জন্যই খরচের সীমা বেঁধে দেয় কমিশন৷ দেওয়াল লিখন, ব্যানার, পোস্টারের ক্ষেত্রেও খরচের আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে। তবে এমন অভিযোগ হামেশাই ওঠে যে, বেঁধে দেওয়া খরচের সীমা খাতায়-কলমে দেখানো হলেও বাস্তবে বেশি টাকা খরচ করেন অনেক প্রার্থী৷ তবে সেটা হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্বও কমিশনেরই।
পশ্চিমবঙ্গে চলতি বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থীরা নিয়ম মেনে খরচ করছেন কি না, তা দেখার জন্য প্রতিটি বিধানসভা আসনের জন্য নির্দিষ্ট ‘এক্সপেন্ডিচার অবজার্ভার’ নিয়োগ করেছে কমিশন। মোট ৮৫ জন পর্যবেক্ষকের উপরে ২৯৪ কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কারও হাতে যেমন একটি আসন রয়েছে তেমনই কারও কারও হাতে ৫-৬টি করেও আসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোন প্রার্থী পোস্টার, ব্যানার থেকে সভার আয়োজনে কত খরচ করছেন তা নজরে রাখছেন ওই পর্যবেক্ষকরা। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারের সময় প্রতিদিনের হিসেব আলাদা করে জমা দিতে হয়। কমিশনের পক্ষে বিধানসভা এলাকায় ঘুরে ঘুরে তথ্য যাচাই করার পদ্ধতিও রয়েছে।