অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের যে নারকীয় পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করতে হয়, সেই পরিস্থিতি বদলের জন্য দিল্লি সরকারকে পদক্ষেপের পরামর্শ দিলেন দিল্লির উপরাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনা। নতুন বছরের শুরুতেই ভোট দিল্লিতে। ভোটের ঠিক আগে উপরাজ্যপালের এই ‘অতিসক্রিয়তা’ দেখে বিজেপির সুরে স্বর চড়ানোর অভিযোগ উঠল সাক্সেনার বিরুদ্ধে। কৌশলী আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল অবশ্য এ নিয়ে উপরাজ্যপালকে ‘ধন্যবাদ’ই জানিয়েছেন।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দল আপ তাদের সরকারের ১০ বছরের সাফল্য তুলে ধরে মানুষের কাছে পৌঁছনোর পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু আজ উপরাজ্যপাল পাল্টা পদক্ষেপে পরিষেবা প্রদানে দিল্লির বেহাল অবস্থা সমাজমাধ্যমে তুলে ধরেন। গত কাল দক্ষিণ দিল্লির বিজেপি সাংসদ রামবীর বিধুড়ির সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির রংপুরী পাহাড়ী, কাপাসহেড়ার মতো ঘিঞ্জি এলাকাগুলি পরির্দশন করেন সাক্সেনা। এলাকার উপচে পড়া নর্দমা, নোংরা জলে ভেসে যাওয়া গলির ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে তুলে ধরে উপরাজ্যপাল লেখেন, ‘বৃষ্টির জল নয়, নর্দমার দুর্গন্ধযুক্ত জলে গলি ভরে গিয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীকে এখানে এসে পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি’। পাশাপাশি, স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে আগামিকাল থেকে ওই এলাকায় সাফাই অভিযানও শুরুর প্রতিশ্রুতি দেন সাক্সেনা।
দিল্লি সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল বিনামূল্যে দু’শো ইউনিট বিদ্যুৎ ও পরিস্রুত পানীয় জল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু সাক্সেনার দাবি, তিনি যে এলাকাগুলিতে গিয়েছিলেন, সেখানে প্রায়শই বিদ্যুৎ থাকে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। সমস্যা রয়েছে পরিস্রুত পানীয় জলেরও। এ নিয়ে সাক্সেনা এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘এলাকায় প্রয়োজনের তুলনায় খুব অল্প সময় বিদ্যুৎ থাকে। জলের সরবরাহ যথেষ্ট নয়। নিয়মিত ময়লা সাফাই হয় না। নাগরিকেরা জানিয়েছেন, ফি দিন ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলেও, চড়া হারে বিদ্যুতের বিল মেটাতে হচ্ছে’।
উপরাজ্যপালের এই তৎপরতার পিছনে ‘বিজেপির নির্দেশ’কেই দেখছেন আপ নেতৃত্ব। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘উপরাজ্যপালের নিয়োগকর্তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফলে বাধ্যবাধকতা থেকেই যায়। সম্ভবত সেই বাধ্যবাধকতা দেখেই আপের খামতি খুঁজতে বেরিয়েছেন উপরাজ্যপাল।’’ তবে কৌশলী কেজরীওয়াল বিরোধের পথে না হেঁটে উল্টে উপরাজ্যপালকে তাঁদের ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্ট, ‘যে খামতি রয়েছে তা দ্রুত শুধরে নেওয়া হবে। এর আগে উপরাজ্যপাল নাঙ্গলৌই গিয়ে সেখানকার সমস্যা তুলে ধরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। এ বারও নেব। আশা করব, ভবিষ্যতে আরও এ ধরনের খামতি তুলে ধরবেন উপরাজ্যপাল’।
দিল্লির প্রতি কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন কেজরীওয়াল। আপ সূত্রের মতে, আগামী প্রজাতন্ত্র দিবসের শোভাযাত্রার জন্য দিল্লি সরকারের পাঠানো ট্যাবলোর থিম খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্র। এ নিয়ে আপ প্রধান বলেন, ‘‘জানি না কেন্দ্রের কী রাগ রয়েছে দিল্লিবাসীর উপরে, প্রতিবারই দিল্লির থিম বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে।’’
জবাবে কেন্দ্র জানিয়েছে, বৈষম্যমূলক আচরণের প্রশ্ন নেই। ফি বছর একটি থিম সার্বিক ভাবে ঠিক করে দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। কোনও রাজ্য সেই থিম না মেনে নিজেদের ইচ্ছে মতো কিছু বানাতে চাইলে তখন তা বাতিল করে দেওয়া হয়।