শনিবার তৃণমূল ভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সর্বভারতীয় তৃণমূলের সহ-সভাপতি যশবন্ত সিনহা। পাশে বিদায়ী সরকারের মন্ত্রী শশী পাঁজা। —নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের প্রথম ২ দফার নির্বাচনের পরেই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা। গোপন সূত্রে এমনটাই জেনেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা সর্বভারতীয় তৃণমূলের সহ-সভাপতি যশবন্ত সিনহা। শনিবার সকালে তৃণমূল ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই দাবি করেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সঙ্গেই ছিলেন বিদায়ী সরকারের মন্ত্রী শশী পাঁজা। যশবন্ত বলেন, ‘‘আজ সকালেই দিল্লি থেকে আমি সূত্র মারফত জানতি পেরেছি, গতকাল অনেক রাতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পার্টির সভাপতি নড্ডজির একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে যে সমস্ত রাজ্যে ভোট হচ্ছে, সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলায় যে ভোট হচ্ছে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এটি একটি দলীয় অভ্যন্তরীণ বৈঠক তাই সব রকম মত বিনিময় হয়েছে। বিজেপি-র এই ত্রয়ী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে ২ দফায় ভোট হয়েছে, তাতে তাঁদের পারফর্ম্যান্স হতাশাজনক হবে। তাই বাকি যে ৬ দফা ভোট রয়েছে, তাতে যে তাঁদের পারফর্ম্যান্স আরও খারাপ হবে, তা তাঁরা বুঝেছেন।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘তাঁদের আশার বড় জায়গা ছিল প্রথম ২ দফাই। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, তাঁরা যে মানসিক খেলা এখানে খেলছেন, সেই মানসিক খেলাকে আরও জোরালো করতে হবে। যত মিথ্যে সম্ভব, মিথ্যে বলার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে হবে।’’
পরাজয় নিশ্চিত জেনেই বিজেপি মমতার প্রার্থী হওয়া নিয়ে অপপ্রচার করছে, এমন অভিযোগ এনে যশবন্ত বলেন, ‘‘পরিকল্পনা মাফিক ৩-৪ দিন ধরে একটা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা চলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য কোনও জায়গা থেকে ভোটে লড়বেন। কাল রাতের বৈঠকে পার্টির সভাপতি নড্ডাজি সেই প্রচারে জোর দিতে বলেছেন এবং তিনিও বলা শুরু করেছেন, মমতাজির কাছের সূত্র থেকে জানতে পেরেছেন যে মমতা অন্য কোনও জায়গা থেকে ভোটে লড়বেন। মনোনয়ন দাখিল করবেন। আমরাও তৈরি আগামী দিনে বিজেপির এই মিথ্যে প্রচারকে মোকাবিলা করতে। কারণ বিজেপির সেই মিথ্যে প্রচার আরও জোরালো ও তীক্ষ্ণ করা হবে। মানসিক খেলা খেলে জনতাকে বিভ্রান্ত করাই ওদের লক্ষ্য। মিথ্যে ও গুজব ছড়ানো হবে। বাংলার মানুষ যেন এই অপপ্রচার থেকে সাবধান থাকেন।’’ তিনি আরও বলেন,‘‘ নন্দীগ্রামে ভোট হয়ে গিয়েছে, সেখানে মমতা বিপুল ভোটে জিতবেন। তাই তাঁর আর কোথাও দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। ভারতীয় ঝুট পার্টি এই গুজব ছড়াচ্ছে।’’
অসমে ইভিএম বদল প্রসঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করে যশবন্ত বলেন, ‘‘অসমে কী হয়েছে, তা আমরা দেখেছি। রহস্যের কথা এই যে, যেখানে যেখানে বিজেপি-র মনে হচ্ছে যে তাঁরা ভোটে হেরে যাবেন, সেখানে সেখানেই তাঁরা ইভিএম বদলে দিচ্ছেন। যে যে নির্বাচনে বিজেপি কম ভোট পেয়েছে, সেই ইভিএমগুলি বদলে দেওয়া হবে। একটি ঘটনা আমাদের সামনে এসেছে, এমন ঘটনা আরও ঘটবে। অসমেও হবে, বাংলাতেও হবে। তাই আমরা কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি, যতক্ষণ না ইভিএম স্ট্রংরুমে বন্ধ করা হয়, ততক্ষণ সেখানে থাকতে হবে। যাতে কেউ রাস্তায় ইভিএম বদল করতে না পারে।’’
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তৃণমূল একটি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিল কমিশনে। কমিশনের জবাব পেয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ভোটাররা ভোট দিতে গেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁদেরকে হয়রান করছে। তাতে সাধারণ মানুষ যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তা নিয়ে প্রথম ২টি পর্যায়ের ভোটের পর তৃণমূলের উত্থাপিত বেশ কয়েকটি অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশনে বাংলার নোডাল অফিসার এ কে সিং এবং রাজ্যের এডিজি (আইন শৃঙ্খলা) জগমোহনকে নির্দেশ দিয়েছে যে, বাহিনী যেন ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ড বা অন্যান্য পরিচয়পত্রের কাগজপত্র দেখতে না চায়। তাঁদের আরও বক্তব্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে যে ভোটারদের পরিচয়পত্রের নথি যাচাই করা কেন্দ্রীয় বাহিনীর নয়, ভোট কর্মীদের কাজ।