ফাইল চিত্র
নাম উল্লেখ না করলেও মমতার বক্তব্য কার উদ্দেশে, তা স্পষ্টই ছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে প্রচারে গিয়ে শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হায়দরাবাদ থেকে বিজেপি-র এক বন্ধু এসেছে। সঙ্গে ফুরফুরার এক চ্যাংড়াকে নিয়েছে।’’ রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোট ভাগের চক্রান্তের অভিযোগে মমতার তির যে আইএসএফ-এর প্রধান আব্বাসউদ্দিন সিদ্দিকির দিকে, সেটা স্পষ্টই ছিল তৃণমূলনেত্রীর বক্তব্যে। আর সেটা শুনে ফুরফুরার ভাইজান বললেন, ‘‘উনি অহঙ্কারী, মানুষকে মানুষ মনে করেন না।’’ একই সঙ্গে আব্বাসের দাবি, ‘‘মুসলমানরা ওঁর সঙ্গে নেই বলেই উনি উল্টোপাল্টা বলছেন।’’
বাম ও কংগ্রেসের সংযুক্ত মোর্চায় রয়েছে আব্বাসের দল। রাজ্যে ২৮টি আসনে প্রার্থীও দিয়েছে আইএসএফ। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৪টি আসনে খাম প্রতীকে লড়ছেন আব্বাস অনুগামীরা। শনিবার সেই দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই আব্বাসকে আক্রমণ করেন মমতা। মুসলিম ভোট ভাগ করে বিজেপি-কে সুবিধা করে দেওয়ার অভিযোগও আব্বাসের বিরুদ্ধে তুলেছেন তিনি। রায়দিঘিতে মমতা বলেন, ‘‘ওরা কয়েক কোটি টাকা খরচ করে মুসলিম ভোট ভাগাভাগির চেষ্টা করছে। ওদের একটাও ভোট নয়। ওদের ভোট দেওয়া মানে বিজেপি-কে ভোট দেওয়া।’’
এর পাল্টা অব্বাসের বক্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ বছর ধরে মুসলিম সমাজকে বোকা বানিয়েছেন, মুসলিম সমাজকে মারার জন্য বিজেপি-কে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকাচ্ছেন। এর জবাব রাজ্যের জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সবাই দেবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিমদের মারার পরিকল্পনা করতে পারেন, কিন্তু রাজ্যের হিন্দু, দলিত, আদিবাসী, সাঁওতাল সবাই মুসলমানদের ভালবাসেন। আমরা ভাইয়ে ভাইয়ে মিলে মিশে আছি।’’ এর পাশাপাশি অব্বাস বলেন, ‘‘আমি আমার সম্প্রদায়-সহ পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকার আদায়ের যে লড়াইয়ে নেমেছি তাতে সবাই আমার ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। বিশেষ করে, আমার সম্প্রদায়ের মানুষেরা ধোকার হাত থেকে বাঁচতে ফিরে আসছেন।’’
মমতা যেমন আইএসএফ-এর বিরুদ্ধে বিজেপি-কে সুবিধা করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন, তেমন পাল্টা অভিযোগ আব্বাসেরও। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাকে বিজেপি-র হাতে তুলে দেওয়ার জন্য যে বড় অঙ্কের টাকার চুক্তি ছিল, সেটা পাচ্ছেন না বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্টোপাল্টা বকছেন। ওঁর মানসিক সমস্যা হচ্ছে।’’
তবে মমতা তাঁকে ‘ফুরফুরার চ্যাংড়া’ বলে ব্যক্তিগত আক্রমণ করলেও তা গায়ে মাখতে চান না আব্বাস। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো ছোট বাচ্চা ওঁর কাছে। আমাকে শুধু ছোটবড় কথা বলছেন না, উনি বড়দেরও তুইতোকারি করেন এবং অনেককে নিয়ে খারাপ ভাষাতেও কথা বলেন। উনি আমাকে ‘চ্যাংড়া’ বলেছেন বলে আমি কিছু মনে করি না।’’ একই সঙ্গে আব্বাসের দাবি, ‘‘তৃণমূল মানুষকে নিয়ে খেলছিল। বোকা বানিয়ে বিভাজনের চেষ্টা করছিল। সেটা আমি হতে দেব না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পেরেছেন যে, তাঁর চাল ঘেঁটে দিয়েছে আব্বাস। তাই বলছেন, আমি ফুরফুরার কেউ নয়।’’