(বাঁ দিকে) শান্তনু ঠাকুর। মমতাবালা ঠাকুর (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
দুর্নীতির অভিযোগ এনে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে সিবিআই ও ইডির মতো সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি করলেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। এ ক্ষেত্রে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে মমতাবালা বলেন, ‘‘শান্তনু ঠাকুর মতুয়া মহাসঙ্ঘের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক কোটি ৪৪ লক্ষ টাকার বেশি নিয়েছেন অবৈধ উপায়ে। এই বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করছি। তিনি যদি সত্যিই সৎ হন তা হলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সিবিআই ও ইডিকে দিয়ে তদন্ত করে দেখান।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দেশ জুড়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে সিবিআই ও ইডিকে দিয়ে অভিযান চালিয়ে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে বিজেপি। এ ক্ষেত্রে আমি যাবতীয় প্রমাণ দিয়ে শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছি। বিজেপি যদি সত্যি সৎ রাজনীতির পক্ষপাতী হয়ে থাকে তা হলে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে দেখাক।’’
এই বিষয়ে তদন্ত চেয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে চিঠি দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, আইনত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ মমতা ঠাকুরের। প্রয়াত বীণাপাণি দেবী স্বাক্ষর করে তাঁকে সেই দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন মেনে তাদের একটি অফিস রয়েছে সল্টলেকে। যেই কারণে একটি নির্দিষ্ট প্যান নম্বর মেনে মতুয়া মহাসঙ্ঘের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের আয়-ব্যয়ের হিসাবে প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন জমা দেন তিনি। সম্প্রতি তিনি জেনেছেন ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অবৈধ ভাবে বিপুল অর্থ জমা পড়েছে। তাই এই বিষয়ে তদন্ত চেয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি লিখে তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। মমতাবালা বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশের উপর আমার আস্থা রয়েছে যে তারা এই দুর্নীতির তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের ধরবেন। কিন্তু আমি দেখতে চাই, যে বিজেপি বার বার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিরোধীদের বিরুদ্ধে সিবিআই ও ইডির ব্যবহার করে তারা মন্ত্রীর এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়।’’
উল্লেখ্য, মতুয়া মহাসঙ্ঘের উত্তরাধিকার নিয়ে বনগাঁর ঠাকুর পরিবারের বিবাদ সর্বজনবিদিত। এক দিকে রয়েছেন প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতাবালা। যিনি সদ্য তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভায় যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন। অন্য দিকে রয়েছেন মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর ও তাঁর দুই পুত্র। যাঁরা রয়েছেন বিজেপিতে। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসায় বড় ভূমিকা ছিল মতুয়াদের। সে বার গাইঘাটা থেকে তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক হয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিলেন মঞ্জুল। কিন্তু ২০১৪ সালে বনগাঁর তৃণমূল সাংসদ তথা মমতাবালার স্বামী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর প্রয়াত হলে, ওই আসনে প্রার্থী হতে চান মঞ্জুলের বড় পুত্র সুব্রত ঠাকুর। কিন্তু তৃণমূল সেই দাবি না মেনে ২০১৫ সালের বনগাঁর উপনির্বাচনে প্রার্থী করে মমতাবালাকে। সেই সময় বিজেপি মঞ্জুলের বড় ছেলে সুব্রতকে বিজেপি টিকিট দিলে তৃণমূল ছাড়েন পিতা। সেই উপনির্বাচনে জয়ী হন মমতাবালা। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সুব্রতের বদলে তাঁর ভাই শান্তনুকে বনগাঁয় প্রার্থী করে বিজেপি। সেই ভোটে জেঠিমা মমতাবালাকে হারিয়ে জয়ী হন শান্তনু। ২০২১ সালের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে শান্তনুকে জাহাজ প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। সেই শান্তনুর বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছেন মমতাবালা।