গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মতুয়া মহাসঙ্ঘের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ‘অবৈধ’ ভাবে জমা পড়েছে কোটি টাকা। সেই বিষয়ে তদন্ত চেয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে চিঠি দিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। সম্প্রতি তিনি ওই চিঠিটি পাঠিয়েছেন বলে মতুয়া মহাসঙ্ঘ সূত্রে খবর। চিঠিতে মমতাবালা লিখেছেন, আইনত ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’ মমতাবালা ঠাকুরের। প্রয়াত বীণাপাণি দেবী স্বাক্ষর করে তাঁকে সেই দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন’ আইন অনুযায়ী তাদের একটি দফতর রয়েছে সল্টলেকে। যে কারণে একটি নির্দিষ্ট ‘প্যান’ অনুযায়ী মতুয়া মহাসঙ্ঘের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের আয়ব্যয়ের হিসাব প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন হিসেবে জমা দেন তিনি। সম্প্রতি তিনি জেনেছেন, ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ‘অবৈধ’ ভাবে বিপুল অর্থ জমা পড়েছে। তাই ওই বিষয়ে তদন্ত চেয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি লিখে তদন্তের আবেদন জানাচ্ছেন তিনি।
রাজ্য পুলিশের ডিজিকে অভিযোগপত্র পাঠানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সাংসদ মমতাবালা। সোমবার তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে আমি মতুয়া মহাসঙ্ঘের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকা জমা হয়েছে বলে ডিজির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। তবে সোমবার বিকেলে আমি একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছি। কে বা কারা ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, সেখানে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনব। সেখানেই সমস্ত বিষয় জানাব।’’
মতুয়া মহাসঙ্ঘ সূত্রের খবর, সম্প্রতি ওই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। সেই বিপুল পরিমাণ অর্থ কী ভাবে মতুয়া মহাসঙ্ঘের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এল, তা নিয়েই তদন্ত চান তৃণমূলের এই রাজ্যসভার সাংসদ। মতুয়া মহাসঙ্ঘের ‘উত্তরাধিকার’ নিয়ে বনগাঁর ঠাকুর পরিবারের বিবাদ সর্বজনবিদিত। এক দিকে রয়েছেন প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতাবালা। অন্য দিকে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন ত্রাণ ও উদ্বাস্তু পুনর্বাসন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর ও তাঁর দুই পুত্র। মমতাবালা রয়েছেন তৃণমূলে। মঞ্জুলের পরিবার এখন আবার যুক্ত বিজেপির সঙ্গে।
ওই অভিযোগের বিষয়ে রাজ্য পুলিশ এখনও কোনও পদক্ষেপ করেছে বলে প্রকাশ্যে কিছু জানা যায়নি। তবে বিষয়টি যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে যুযুধান দুই পক্ষের রাজনৈতিক লড়াইয়ের অঙ্গ, তা রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকেরা বুঝতে পারছেন। লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোটের দখল কারা রাখবে, পাঁচ বছর আগের মতোই মতুয়ারা ঢেলে বিজেপিকে ভোট দেবেন কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা এবং ওই ভোটের অধিকার নিয়ে লড়াই শুরু হয়েছে। মমতাবালার ওই অভিযোগ সেই লড়াইকে আরও তীব্র করবে।
মমতাবালা যেমন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ, তেমনই মঞ্জুলের দুই পুত্র বিজেপির জনপ্রতিনিধি। বড় ছেলে সুব্রত ঠাকুর বর্তমানে গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক। তেমনই ছোট ছেলে শান্তনু বনগাঁর বিজেপি সাংসদ হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য। রাজ্য রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছে, ওই বিপুল পরিমাণ টাকার সঙ্গে মঞ্জুলের পরিবারের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করতে পারেন তৃণমূলের সাংসদ মমতাবালা। তাই ডিজির কাছে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশিই প্রকাশ্যেও ওই বিষয়ে অভিযোগ করবেন মঞ্জুলের দুই পুত্রের বিরুদ্ধে। যাঁদের এক জন রাজ্যের বিরোধী শিবিরের বিধায়ক এবং অন্য জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী!