বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সোমবারই হাই কোর্টে তাঁর শেষ দিন। মঙ্গলবার ইস্তফা দেবেন। দুপুর ২টো ৪৭ মিনিটে শেষ বারের মতো এজলাস ছাড়লেন তিনি। শেষ মামলার নির্দেশে জড়িয়ে রইল সেই পূর্ব মেদিনীপুর, যা নিয়ে ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে জল্পনা। সেই জেলার বিচারককে বরখাস্তের অনুরোধ করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রধান বিচারপতিকে রিপোর্ট দেখে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করেছেন তিনি। ঘটনাচক্রে, ওই জেলা থেকেই তিনি ভোটে লড়তে পারেন বলে জল্পনা চলছে।
সোমবার একটি মামলায় বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘হাই কোর্টের ভিজিল্যান্স বিভাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ তুলেছে জেলার বিচারকের বিরুদ্ধে। আমি প্রধান বিচারপতিকে ওই রিপোর্টটি দেখে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করব।’’ তিনি এ-ও জানান, ওই রিপোর্ট সত্যি প্রমাণিত হলে জেলা বিচারককে বরখাস্ত করা উচিত। শুনানি শেষ হয়েছে, রায় ঘোষণা স্থগিত রয়েছে, এমন মামলাও ছেড়ে দিয়েছেন বিচারপতি।
রবিবার সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, আগামী মঙ্গলবার তিনি ইস্তফা দিতে চলেছেন। এর পর ‘বৃহত্তর ক্ষেত্রে’ যেতে চলেছেন। সেটা যে রাজনৈতিক ক্ষেত্র, তা-ও জানিয়েছেন বিচারপতি। তবে কোন দলে যাচ্ছেন, সে কথা রবিবার জানাননি বিচারপতি। তার পরেই তৈরি হয়েছে জল্পনা। জল্পনা কিছুটা উসকে দিয়েছেন বিচারপতি নিজেই। তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূলে কোনও ভাবেই নয়, অন্য কোনও দলে। এবং যে দলে যাবেন, সে দল তাঁকে প্রার্থী করলে আসন্ন লোকসভা ভোটে লড়ার কথাও তিনি ভেবে দেখবেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন তিনি। লোকসভা ভোটে প্রার্থী হচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক কেন্দ্র থেকে। যে কেন্দ্রে এখন খাতায়কলমে ‘তৃণমূল’ সাংসদ শিশির অধিকারীর পুত্র তথা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী সাংসদ। ঘটনাচক্রে, তাঁর শেষ রায়েও জড়িয়ে রইল সেই পূর্ব মেদিনীপুর। সত্যিই কি সমাপতন? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এ দিকে বিচারপতির শেষ দিনেও অনেক আবেগের সাক্ষী থাকল কলকাতা হাই কোর্টের এজলাস। এজলাসে বিচারপতির বসার পর এক আইনজীবী বলেন, ‘‘আমাদের ছেড়ে যাবেন না।’’ বিচারপতি বলেন, ‘‘আমার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন অন্য কাজ রয়েছে।’’ এর পরেই তিনি নির্দেশ দেন, ‘‘সব মামলা ছেড়ে দিচ্ছি, এটা লিখে দিন। পার্ট হার্ড ম্যাটারও ছেড়ে দিচ্ছি। একটা মামলা শুধু আমি দেখতে চাই।’’ অন্য এক আইনজীবী বলেন, ‘‘আমাদের জন্য কালো দিন।’’ বিচারপতি বলেন, ‘‘এখানে আমার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন অন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
এর পরেই জেলা বিচারকের বিরুদ্ধে নির্দেশ দেন বিচারপতি। তখন এজলাসে এসে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে চান এক মহিলা। বিচারপতি বলেন, ‘‘পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম আমি নিই না।’’ ওই মহিলা বলেন, ‘‘তা হলে আশীর্বাদ করুন যাতে সঠিক বিচার পাই।’’ বিচারপতি তাতে বলেন, ‘‘এক দিন না এক দিন যেতেই হবে।’’
এক মহিলা জামশেদপুর থেকে এসেছেন হাই কোর্টে। বিচারপতির ইস্তফার খবর জেনে তিনি কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘‘কেন চলে যাচ্ছেন স্যর। এটা তো আমাদের কাছে মন্দির। চলে যাবেন না স্যর।’’ বিচারপতি বলেন, ‘‘আমাকে চলে যেতে হবে।’’