(বাঁ দিক থেকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে এ বার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে রাজ্যে সফররত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আপনি সন্দেশখালি নিয়ে সন্দেশ দিয়ে বেড়াচ্ছেন, সন্দেশখালি নিয়ে বলার আগে আপনি বলুন রাজ্যপাল কেন তাঁর কাজের মেয়েকে, কেন তাঁর ঘরে কাজ করে বলে এক বার নয়, পর পর দু’বার মলেস্ট করেছেন?’’
বৃহস্পতিবার রাতেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে হেয়ার স্ট্রিট থানায় রিপোর্ট লিখিয়েছেন এক মহিলা। নিজেকে রাজভবনের অস্থায়ী মহিলা কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে পুলিশকে তিনি জানান, রাজভবনে দু’বার শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন তিনি। যদিও বৃহস্পতিবারই একটি পাল্টা বিবৃতি দিয়ে ওই অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন রাজ্যপাল। তিনি এ-ও জানান যে, অশুভ উদ্দেশ্যেই এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হবে। ঘটনাচক্রে, এই সমস্ত ঘটনা যখন ঘটছে, সেই সময়েই প্রধানমন্ত্রী মোদী এসে পৌঁছন কলকাতায় এবং রাজভবনেই রাজ্যপালের অতিথি হয়ে রাত্রিবাস করেন বৃহস্পতিবার। শুক্রবার সেখান থেকে কৃষ্ণনগরে গিয়ে জনসভাও করেন। কিন্তু রাজভবন সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে কোনও কথাই বলেননি মোদী। মমতা তাঁকে বিঁধেছেন এই নীরবতা নিয়েই।
শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের রায়নায় জনসভা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘আপনি সন্দেশখালি নিয়ে অনেক কথা বলছেন, সন্দেশখালিতে এমন কোনও ঘটনা ঘটতে দিইনি। ওদের জমিজমা নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল, আমরাই অফিসার পাঠিয়ে তার সমাধান করে দিয়েছি। কিন্তু আপনি কী করেছেন?’’
সন্দেশখালির ঘটনার পর বসিরহাটের সভায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে নানা কথা বলেছিলেন মোদী। পরবর্তী কালেও ভোটের প্রচারে সন্দেশখালি ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন। মমতা সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়েই বলেছেন, ‘‘একটা ছোট্ট মেয়ে রাজভবনে চাকরি করত। তার সঙ্গে কী ব্যবহার করেছেন মাননীয় রাজ্যপাল মহাশয়? কালকে মেয়েটির কান্না আমার হৃদয় বিদারণ করেছে। রাজ্যপাল মেদিনীপুর পূর্বের একটি মেয়েকে রাজভবনে এক বার নয়, পর পর দু’বার মলেস্ট করেছেন। সেখানেই তো আপনি কাল থেকে এলেন। কই, একটা কথাও তো মুখ দিয়ে কাল বললেন না। আপনার লোকজনেরাও তো তখন ছিল, যখন মেয়েটি কেঁদে বেরোচ্ছিল। সে বলেছে, ‘আর আমি রাজভবনে চাকরি করতে যাব না।’ ভয় পাচ্ছে। ভাবছে যখন-তখন ডেকে খারাপ ব্যবহার করবে। অসম্মান করবে। আর আপনি মা-বোনেদের নিয়ে কথা বলেন, আপনার লজ্জা নেই!’’
শুক্রবার মোদীকে যোগ্যদের চাকরি যাওয়া নিয়েও আক্রমণ করেছেন মমতা। শুক্রবারের জনসভায় মোদী বলেছিলেন, তিনি রাজ্য বিজেপিকে ইতিমধ্যেই এমন নির্দেশ দিয়েছেন যে, চাকরি হারানো যোগ্যদের আইনি ও সামাজিক লড়াইয়ে পাশে থাকতে হবে দলকে। তিনি এর জন্য একটি আইনি পরামর্শদাতা দল এবং সমাজমাধ্যম দল গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্বকে। এমনকি, সে কাজ হওয়ার গ্যারান্টিও দিয়েছেন মোদী। মমতার তাঁর সভায় বলেছেন, ‘‘আজ ভোটের দরকার। তাই আট দিন পরে এসে মোদী এ সব কথা বলছেন। আর এই আট দিনে আমরা সুপ্রিম কোর্টে কেস লড়তে শুরু করে দিয়েছি। আর ২৬ হাজার চাকরি তো আপনি খেয়েছেন।’’
তাঁর কথার ব্যাখ্যা করে মমতা মোদীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘আপনার দলই তো চাকরি খেয়েছে। আপনার দল পার্টি ছিল। সিপিএমকে টাকা দিয়ে দাঁড় করিয়েছে আপনার দল। সিপিএম আর বিজেপি একসঙ্গে দাঁড়িয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি খেয়েছে। আর আমরা প্রথম দিন থেকে বলে আসছি এই চাকরি যেতে দেব না। তাই এখন আপনাকে দরকার নেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।’’
মোদীকে কটাক্ষ করে মমতা বলেছেন, ‘‘এরা এক দিকে চাকরি খাবে, আর এক দিকে বড় বড় কথাও বলব। আসলে এরা সাপের গালেও চুমু খায়, ব্যাঙের গালেও চুমু খায়। আয়নায় নিজের মুখ দেখুন। ত্রিপুরায় বলেছিলেন ক্ষমতায় এসে সিপিএমের জমানায় যাওয়া ১০ হাজার চাকরি ফিরিয়ে দেব। আজ পর্যন্ত দিয়েছেন?’’